ঈশ্বর এক হলে এত দেব-দেবী কেন ?
ঈশ্বর এক হলে এত দেব-দেবী কেন ?
হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর (পরম ব্রহ্ম) এক, কিন্তু সেই ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ ও শক্তির প্রকাশ হিসেবে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করা হয়।
শ্রীমদ্ভগবদগীতার নবম অধ্যায়ের ১৬ থেকে ১৯তম শ্লোকে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ,
![]() |
ঈশ্বর এক দেব দেবী অনেক |
"আমি শ্রৌত যজ্ঞ, আমি স্মার্ত যজ্ঞ,আমি পিতৃযজ্ঞ, আমি ঔষধি অন্ন বা ভেষজ, আমিই হোমাদি সাধন ঘৃত, আমি অগ্নি , আমি এজগতের পিতা-মাতা-বিধাতা-পিতামহ যা কিছু জ্ঞেয় এবং সব পবিত্র বস্তু তা আমিই। আমি ব্রহ্মবাচক ওঙ্কার আমি ঋগ্ , সাম ,যজুর্বেদ স্বরূপ । আমি গতি আমি প্রভু , আমি শুভাশুভ , আমি রক্ষক , আমি স্রষ্টা , আমি সংহর্তা এবং আমি ভূমি হতে জল আকর্ষন করি , আমিই পুর্নবার জল বর্ষণ করি ।আমি জীবের জীবন , আমিই জীবের মৃত্যু ।"অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে ঈশ্বর শুধু আমাদের সৃষ্টি কর্তাই নন , তিনিই সবকিছু বা সবকিছুতেই তিনি আছেন । ঈশ্বর সর্বব্যাপী এবং সর্বত্র বিরাজমান বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে একটিই 'সত্ত্বা ' আছে তা হলো ঈশ্বর আর অন্য সবকিছু তাঁরই 'বহুরূপে প্রকাশ ' মাত্র । অর্থাত্ সর্বভূতের ন্যায় সর্ব দেবতাও একই ঈশ্বরের গুনের বিভিন্ন রূপের প্রকাশ ।
গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ১১তম শ্লোকে ভগবান স্বয়ং বলেছেন -
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাং স্তথৈব ভজাম্যহম্ ।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ॥
অনুবাদ -হে অর্জুন , যে ব্যক্তি যেভাবে আমাকে ভজন করে ,সে ব্যক্তিকে আমি সেভাবে তুষ্ঠ করি । সহজ কথায় ভগবানের বিভিন্ন শক্তিকে আমরা বিভিন্ন দেবদেবী রূপে পূজা করে থাকি ।তবে ভগবানকে আমরা কথনো বহু চিন্তা করি না ।আমাদের চারপাশে আমরা যে সব দেব দেবীর পূজা করি বা হতে দেখি মূলত তা ঈশ্বরের বিভিন্নরূপের প্রতীকেরই প্রার্থনা করি ।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী এত বেশি হিন্দু ধর্মের বৈশিষ্ট্য.........
ধর্মসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম হিন্দু ধর্ম নানা রকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত। এই ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হলোঃ-
১. একেশ্বরবাদীঃ হিন্দু ধর্মে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বা ভগবান হলেন পরম ব্রহ্ম আর তিনি এক ও অদ্বিতীয়। হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস করে যে, এক ঈশ্বর বহু ঈশ্বরের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করে। ঈশ্বরের আত্মপ্রকাশের এই রূপই হলো দেবতা।
২. অদ্বৈতবাদীঃ হিন্দু ধর্মে সৃষ্টিজগত ও সৃষ্টিকর্তাকে অভিন্ন মনে করা হয়। ব্রহ্মসূত্রে বলা হয়েছে, জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ অর্থাৎ জীবই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই সব, জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন। বেদান্ত দর্শনে আছে, “সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” অর্থাৎ জগতের সবকিছুই ব্রহ্ম।
৩. বহুদেববাদীঃ কথায় বলে, “হিন্দু ধর্ম তেত্রিশ কোটি দেবতার ধর্ম”। বৈদিক যুগ থেকেই হিন্দুরা বহু দেবতার উপাসনা করে আসছেন। এ সকল দেবতা একই পরম সত্তার বিভিন্ন প্রকাশ। ব্রহ্মা, শিব, বিষ্ণু, অগ্নি, ইন্দ্র, কালী, দুর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, মনসা, শীতলা, ঊষা, বরুণ, রুদ্রগণ, সোম, সাবিতা, ইত্যাদি অন্যতম দেবতা।
৪. অবতারবাদীঃ ভগবান মানুষ ও অন্যান্য মূর্তি ধারণ করে পৃথিবীতে আগমন করা সংক্রান্ত মতবাদ হলো অবতারবাদ। ঈশ্বরের অবতার হিসাবে আবির্ভাবের উদ্দেশ্য মানব ও সৃষ্টিজীবের কল্যাণ সাধন। শ্রীবিষ্ণুর দশটি অবতার রূপ হিন্দু ধর্মে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এগুলো হলোঃ- মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রামচন্দ্র, বলরাম, বুদ্ধদেব এবং কল্কি অবতার।
৫. কর্মবাদীঃ কর্মবাদের মূলকথা হলো যে যেমন কাজ করবে সে তেমন ফল ভোগ করবে। অর্থাৎ ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ প্রবাদ বাক্য কর্মবাদেরই সারকথা।
৬. জন্মান্তরবাদীঃ জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্মবাদ বলতে মৃত্যুর পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করা বুঝায়। হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস করে যে, মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা দেহ পরিবর্তন করে আবার জন্মগ্রহণ করে। আত্মা শাশ্বত, চিরন্তন।
৭. বর্ণবাদীঃ প্রধানত জন্ম দ্বারা বর্ণ নির্ধারিত হয়। হিন্দু ধর্মমতে, গুণ ও কর্ম অনুসারে সমাজে বসবাসরত মানুষকে চারভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলোঃ-
ক) ব্রাহ্মণঃ পরম ব্রহ্মের মুখ থেকে এদের উৎপত্তি। আদর্শ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বৈদিক কর্ম পরিচালনা করা এদের প্রধান কাজ।
খ) ক্ষত্রিয়ঃ পরম ব্রহ্মের বাহু থেকে ক্ষত্রিয়দের উৎপত্তি। ক্ষত্রিয়গণ হলেন শাসক বর্ণের লোক। দেশরক্ষা, দক্ষতা, সাহস, তেজ, যুদ্ধ পরিচালনা এগুলো ক্ষত্রিয়দের মূল কাজ।
গ) বৈশ্যঃ পরম ব্রহ্মের জানু থেকে বৈশ্যদের উৎপত্তি। কৃষিকাজ, বাণিজ্য, গোরক্ষা, উৎপাদন প্রভৃতি এদের মূল কাজ।
ঘ) শূদ্রঃ পরম ব্রহ্মের পদ থেকে শূদ্রদের উৎপত্তি। অন্য সকল বর্ণের লোকদের সেবা করাই শূদ্রদের মূল কাজ।
হিন্দুধর্মে মানুষের জন্মগত এই বর্ণপ্রথার পাশাপাশি ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে চারভাগে ভাগ করা হয়। এগুলোর প্রত্যেক ভাগকে আশ্রম এবং চারটিকে চতুরাশ্রম বলে। এগুলো হলোঃ-
ক) ব্রহ্মচর্যঃ ছাত্রজীবন।
খ) গার্হস্থ্যঃ সংসার জীবন।
গ) বানপ্রস্থঃ সংসার থেকে অবসর জীবন।
ঘ) সন্ন্যাসঃ ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন হওয়ার জন্য সংসার ত্যাগী হওয়া।
৮. মোক্ষবাদীঃ মোক্ষ বলতে বুঝায় মহামুক্তি বা চূড়ান্ত মুক্তি। ভুল ধারনা ও মিথ্যা মায়ার প্রভাব ছিন্ন করে মানুষ যদি অনিত্যকে অনিত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলে জানতে পারে তাহলে মোক্ষ লাভের আশা করা যায়। মানুষ নিজ চেষ্টায়, অবিরাম সাধনা ও নিষ্কাম কর্মযোগে এক জীবনেই মোক্ষ লাভ করতে পারে।
৯. আশাবাদীঃ মানুষের জীবনে দুঃখ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শাস্ত্রীয় নির্দেশনা মেনে এ দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। এ ধর্মে দুঃখ মুক্তির চারটি পথের কথা বলা হয়েছে। যথাঃ- জ্ঞান মার্গ, কর্ম মার্গ, যোগ মার্গ, ভক্তি মার্গ।
১০. ঈশ্বরের বিশেষ রূপঃ ঋগবেদের পুরুষ সূত্রে বলা হয়েছে, পরম পুরুষ জগৎ জুড়ে থেকেও তিনি বিশ্ব থেকে দশাঙ্গুল পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে আছেন। তিনি একদিকে জগৎব্যাপী, অপরদিকে তিনি জগতের ঊর্ধ্বে।
পরমতসহিষ্ণুতা এ ধর্মমতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। হিন্দু ধর্মে আত্মসুখ ও ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে সকলকেই সমাজের সভ্য হিসাবে কর্তব্য করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করা হয় এই ধারণার মূল কারণ কয়েকটি—
১. ব্রহ্ম এক, তবে বহুরূপী
উপনিষদে বলা হয়েছে:
"একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি"
(অর্থ: সত্য এক, জ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন নামে ডাকে)।
হিন্দু দর্শনে ঈশ্বর নিরাকার ও নির্গুণ (নির্গুণ ব্রহ্ম) আবার সাকার ও সগুণ (সগুণ ব্রহ্ম) হিসেবেও পূজিত হন। তাই একজন ভক্ত ঈশ্বরকে যেভাবে অনুভব করতে চান, সেভাবেই তাঁকে পূজা করা যায়।
২. বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ
হিন্দু ধর্ম মতে, ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। যেমন—
ব্রহ্মা – সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু – পালনকর্তা, শিব – সংহারকর্তা,এছাড়াও লক্ষ্মী (ধন ও সমৃদ্ধির দেবী), সরস্বতী (জ্ঞান ও সংগীতের দেবী), দুর্গা (শক্তির প্রতীক) প্রভৃতি দেব-দেবী বিভিন্ন গুণের প্রতিফলন।
৩. বিভিন্ন সম্প্রদায় ও উপাসনা পদ্ধতি
হিন্দু ধর্মে বহু সম্প্রদায় রয়েছে, যেমন—
শৈব (শিবকে প্রধান বলে মানে)
বৈষ্ণব (বিষ্ণুর উপাসক)
শাক্ত (দেবী দুর্গা বা কালীকে প্রধান বলে মানে)
প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের উপাস্য দেবতার আলাদা রূপ তৈরি করেছে।
৪. ব্যক্তিগত ভক্তি ও সম্পর্ক
ভক্তরা তাদের ঈশ্বরকে নিকটবর্তী ও সম্পর্কযুক্ত করে দেখতে চান। তাই কেউ কৃষ্ণকে প্রেমিকরূপে (রাধা-কৃষ্ণ), কেউ মাতৃরূপে (দুর্গা, কালী), আবার কেউ আশ্রয়দাতা বা গুরু হিসেবে উপাসনা করেন।
৫. পুরাণ ও কাহিনির বৈচিত্র্য
হিন্দু পুরাণগুলো (রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত পুরাণ) বিভিন্ন দেব-দেবীর মহিমা ও লীলাকে ব্যাখ্যা করেছে। এতে মানুষের মনে তাঁদের আলাদা আলাদা রূপের প্রতি ভক্তি জন্মেছে।
সকল দেবদেবী ঈশ্বর বা সৃষ্টি কর্তা নন এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। নির্গুণা বলা হয়ে থাকে ঈশ্বরকে অর্থাৎ এই মহাজগতের সব গুণের আঁধার হলেন ঈশ্বর। অপরদিকে আবার ঈশ্বর হলেন সগুন কারণ সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর চাইলে যেকোনো গুণের অধিকারী হতে পারে এবং সেইসকল গুণের অধিকারী ও হতে পারেন আবার ঈশ্বর চাইলে সেই গুণের প্রকাশও ঘটাতে পারেন। দেব দেবীগন সেই ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ।অর্থাৎ ঈশ্বরের এক একটি গুনের সাকার প্রকাশই দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপে সাকার হতে পারেন, আমাদের সামনেই কারণ, তিনি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। যদি আমরা বিশ্বাস করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তাহলে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ খুবই স্বাভাবিক।
তাই, ঈশ্বরের শক্তির সগুন রূপ হলো- নবদুর্গা,কালী, কার্তিক প্রভৃতি।
বিদ্যা-সিদ্ধির সগুন রূপ- সরস্বতী, গণেশ ইত্যাদি।
ঐশ্বর্যের সগুন রূপ- লক্ষ্মী, কূবের ইত্যাদি।
মৃত্যুর সগুন রূপ- কালভৈরব, ভূতনাথ, যম ইত্যাদি।
তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন তখন ব্রহ্মা (দেব)
যখন পালন করেন তখন বিষ্ণু (দেব)
আর প্রলয়রূপে শিব (দেব)
ঈশ্বর যখন পৃথিবীতে আলো প্রধান করে তখন তিনি চন্দ্র ও সূর্যরূপে আবির্ভূত হন। তিনি আবার পঞ্চ ভূত- বোম, তেজ,ক্ষিতি, অপ, মরুৎ এই ভাবে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ হয়।
ঐতরেয় উপনিষদ ১.১ তে বলা আছে-
“সৃস্টির পূর্বে একমাত্র পরমআত্মা ছিল এবং সবকিছু ঐ পরমআত্মার মধ্যে স্থিত ছিল, সেই সময় দৃশ্যমান কিছুই ছিলনা। তখন পরমআত্মা স্বয়ং চিন্তা করলেন, আমি, আমি হইতে এই জগৎ নির্মাণ করব”
এর জন্য সবই ঈশ্বরের অংশ যা কিছু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে। আর এই এক একটি অংশই হল এক একটি দেব দেবীগণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের ছবিটি যদি আপনারা দেখে থাকেন তাহলে সহজেই বুঝতে পারবেন কারন, শ্রী কৃষ্ণের বিশ্বরূপের যতকটা মস্তক আছে, প্রতিটি মস্তক এক একটি দেবতা প্রকাশ করে অর্থাৎ ঈশ্বরের এক একটি গুনের প্রকাশ করে। এবার প্রশ্ন তাহলে কয়টা মস্তক ছিল ? অর্জুন এখানে বলেছিল শ্রী কৃষ্ণের বিশ্বরূপের কোনো সীমা ছিল না অর্থ্যাৎ তার শুরু আর শেষ ছিলনা অর্থ্যাৎ অসীম, এটাই হল ঈশ্বরের নির্গুণা হবার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কারণ ঈশ্বরের গুনের সংখ্যা অসীম অর্থ্যাৎ নির্গুণা।
এজন্য বলা হয়ে থাকে ঈশ্বরই ব্রহ্মা, তিনিই বিষ্ণু, তিনিই শিব এইভাবে।
তাহলে আমারা এখন বুঝতে পারছি দেবদেবী অনেক হতে পারে কিন্তু ঈশ্বর এক এবং দেবতাগণ এই পরম ব্রহ্মেরই বিভিন্ন রূপ। এখানে ২ টি দেবের উদাহরণ দিচ্ছি ব্যাপারটা ভালো ভাবে বোঝার জন্য-
(১)বিষ্ণু , বিষ্-ধাতু থেকে উৎপত্তি যার অর্থ ব্যাপ্তি, অর্থ্যাৎ “সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে আছেন যিনি” এক কথাই “সর্ব্বং বিষ্ণুময়ং জগৎ” মানে সমগ্র জগৎ বিষ্ণুময়। এবার আমার প্রশ্ন কে সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে আছেন? উওর ঈশ্বর নতুবা ভগবান , ঋগবেদ সংহিতা -১০.৪৮.১ “ যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন তিনি ভগবান”।
(২)শিব, শী-ধাতু থেকে উৎপত্তি যার অর্থ শয়ন, অর্থ্যাৎ যিনি সবকিছুর মধ্যে শায়িত বা অধিষ্ঠিত। এবার আমার প্রশ্ন কে সবকিছুর মধ্যে শায়িত বা অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন? উওর ভগবান বা ঈশ্বর , যজুর্বেদ সংহিতা -৩২.১১ “ভগবান যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত”।
তাই বহু দেবোপাসক হিন্দুরা (বস্তুত দেবোপাসনা ঈশ্বর উপাসনাই) হতে পারে কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী নন সনাতনী বা হিন্দুরা।
উপসংহার
অর্থাৎ, হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর এক, কিন্তু তাঁর গুণাবলির বহুমাত্রিক প্রকাশের কারণে বিভিন্ন দেব-দেবী পূজিত হন। এটা মূলত এক ঈশ্বরের প্রতি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।
দেবদেবী হলো এক একটি আদর্শ,যাদের আদর্শ হৃদয়ে ধারণের জন্যই মূলত প্রতিমাপুজা
প্রতিমা শুধু যন্ত্রের মতো বা প্রতীকের মতো ব্যবহৃত হয়।
শহীদ ও মহান ব্যাক্তিদের মূর্তিতে আমরা শ্রদ্ধা জানায়,,এতে তাদের আদর্শ আমাদের মনে জীবিত থাকে।।
তেমনই সনাতন ধর্মে প্রতীমার মাধ্যে অনেকগুলো আদর্শ আছে তাকে উপলদ্ধি করাই মূল লক্ষ্য যাতে নিজ নিজ লক্ষ্যে এগোতে পারে।
আমরা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করলেও সবকিছুর মূলে সেই এক ব্রহ্ম ,ব্রহ্ম এক এবং অদ্বিতীয় । আমরা যত দেবদেবীর পূজা করি না কেন আমরা সকলেই সনাতনী হিন্দু ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন