হিন্দু মহিলাদের মাথায় ঘোমটা দেওয়ার প্রচলন

পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে সনাতন ধর্ম প্রাচিন হওয়ায় সেই সময় থেকে মেয়েদের অর্থাৎ বিবাহিত মহিলাদের ঘুমটা দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল। হিন্দু ধর্মে বিবাহিত মহিলাদের মাথা ঢাকার প্রচলন যাকে সাধারণত ঘোমটা বা ঘুংটি নামে বলা হয়ে থাকে।ঐতিহাসিক সংস্কৃতি হিন্দুদের প্রথা এটি। কিন্তু এই প্রথা সব অঞ্চলে সমানভাবে প্রচলিত নয়। এই প্রথার রূপ ও তাৎপর্য, সম্প্রদায়, সামাজিক মর্যাদা এবং সময়ের সাথে ভিন্ন হয়।


আমরা জানি পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের ন্যায় কঠোর কোন নির্দেশনা নাই আমাদের হিন্দু ধর্মে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মে প্রতিটি নরনারীকে সর্বোচ্চ স্বাধীনভাবে চলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মে পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর সমান বিধান প্রদান করেছেন। শুধুমাত্র এই ধর্মে সৃষ্টিকর্তা ছেলেদের জন্য ও মেয়েদের জন্য কোন পক্ষপাতিত্ব করেন নাই স্বাধীনতার ক্ষেত্রে। 

এখন আমরা ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে এ বিষয়ে প্রমাণ খুঁজবো 

ঋকবেদ ৮/৩৩/১৯  অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হে নারী ও পুরুষগণ তোমাদের দৃষ্টি সর্বদা ভদ্র ও নম্র থাকার পাশাপাশি তোমাদের পোশাক হবে শালিন। হে নারী ও পুরুষগণ সংযত হোক তোমাদের চলাফলা এবং পোশাকে আবৃত হোক তোমাদের দেহ তৎসঙ্গে পরিত্যাগ কর তোমাদের নগ্নতা। 

রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র বলেছেন, শুধুমাত্র পোশাকেই শালীনতা নয় বরং চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ। এই উক্তিটি পাওয়া গিয়েছে বাল্মুখী মনির  রামায়ণের ৬/১১৪/২৭ অনুচ্ছেদে। 

কোন নারীর সতীর্থ প্রমাণ করতে গেলে  পর্দা করা জরুরী এ বিষয়টি মুখ্য নয়। কারণ সেই নারীর চরিত্রই যদি ভালো না হয় তবে পর্দায় কি আসে যায়! 

উদাহরণ হিসেবে যদি আমরা ধরি, কোন পুরুষের চরিত্রে তার দৃষ্টিভঙ্গি ভদ্র ও অবনত না থাকে তাহলে সেই পুরুষের কাছ থেকেই পর্দাশীল নারী ও পর্দা বিহীন  নারী কোনটাই নিরাপদ নয়। 

এখন আসি মূল আলোচনায়, হিন্দু ধর্মে মহিলাদের ঘোমটা দেওয়ার প্রচলন অনেক পুরাতন তবে এ সম্পর্কে ফটিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি ঋগ্বেদ ও রামায়ণ ব্যতীত। অনেকেই এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন, গবেষণায় পাওয়া যায়, ধর্মীয় এমন কোন  প্রথা নেই এবং বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই এই সম্পর্কে। তবে আপনাদের মনে এ প্রশ্ন আসতে পারে এর রীতি  আসলো কিভাবে? তবে কি নেয়াতই প্রাচীন প্রচলন বলে হয়তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম মহিলারা এই রীতি অনুসরণ করে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিতর্কীত মতবাদও পাওয়া যায় সম্পর্কে। হয়তো কোন এক সময় সম্মান প্রদর্শনের জন্য ফোনটা দেওয়ার প্রচলনটি চলে এসেছিল সমাজে। তবে আবার অনেক ব্যাখ্যা দেখা যায় ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে ও নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখতে কোনটার প্রচলন শুরু হয়েছিল এখন যেমন অনেকেই মার্কv ব্যবহার করেন। আবার পুজোর সময় ঘুমটা দেওয়ার প্রচলন হ্যালো যাতে মাথার চুল বা মাথা থেকে কোন ময়লা পুজোর প্রসাদে না পরে এটি একটি মূল কারণ ঘোমটা দেবার। তবে ঘোমটা দেয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কোন কারণ উল্লেখ পাওয়া যায়নি কোন ধর্মীয় বইগুলোতে। 

মহিলাদের মাথায় ঘোমটা
মহিলাদের মাথায় ঘোমটা


ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট

প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে ( বেদ, স্মৃতি, পুরাণ) সনাতনী নারীদের শালীনতা ও সম্মানের প্রতীক হিসাবে মাথা ঢাকার উল্লেখ আছে, তবে এটি সর্বত্র কঠোর নিয়ম হিসেবে প্রচলিত ছিল না।


মধ্য যুগে (বিশেষত মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে) কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ে মুসলিম ও অন্যান্য সংস্কৃতির প্রভাবে পর্দাপ্রথা (ঘোমটা)বেড়ে যায়, বিশেষত উত্তর ভারতের উচ্চবর্ণীয় সমাজে এই প্রথার প্রচলন ছিল সবচেয়ে বেশি ।


স্থান ভেদে প্রচলন

উত্তর ভারত (রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ): কিছুহিন্দু পরিবারে বিবাহিত মহিলাদের শ্বশুরবাড়িতে পুরুষদের ঘোমটা দেওয়ার প্রথা আছে। এটি সম্মান ও লজ্জার (শরীরিক ও সামাজিক) প্রতীক হিসাবে দেখা ও মানা হত ।


পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত ( বাংলা, ওড়িশা, তামিলনাড়ু): সাধারণত মাথা ঢাকার প্রথা কম, তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা মন্দিরে সাদা/লাল কাপড় ("শাড়ির আঁচল" বা "ওড়না") দিয়ে মাথা ঢাকার রীতি প্রচলিত ছিল এবং এখনো আছে।


গ্রামীণ ও শহুরে: গ্রামীণ সমাজে প্রথাটি বেশি প্রচলিত, আধুনিক শহুরে জীবনে এর প্রভাব কম। তবে ইদানিং আরো প্রভাব কমে যাচ্ছে। 


 সমাজ-বর্ণ প্রভাব

উচ্চবর্ণ (ব্রাহ্মণ, রাজপুত) পরিবারে ঘোমটার চর্চা বেশি , নিম্নবর্ণ বা আদিবাসী সমাজে তুলনামূলকভাবে কম লক্ষ্য করা যায় এই প্রচলন। 


বিয়ের পর "সধবা" (বিবাহিত নারী) হিসাবে লাল সিঁদুর ও ঘোমটার ব্যবহার লক্ষণীয়। 


আধুনিকতা পরিবর্তন

শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান ও পশ্চিমী প্রভাবে এই প্রথা ধীরে ধীরে কমছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।তাই এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বেশি বেশি ধর্মীয় প্রচার প্রচারনার অত্যাবশ্যক।

পরিশেষে বলতে চাই সনাতন নীরা আসুন আমরা সকলে সচেতন হই নিজের মা-বোনদের শালীনতা বজায় থাকে এরকম পোশাক-আশাক পরিধানে আগ্রহী গড়ে তুলি। 

তবে, কিছু রক্ষণশীল পরিবারে এখনও এটি সামাজিক শিষ্টাচার一হিসাবে দেখা হয়।এবং যারা হিন্দু ধর্মকে নিজের অন্তরে গেঁথে রেখেছেন তাদের ফ্যামিলিতে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। 


 ধর্মীয় vs সামাজিক নিয়ম

হিন্দু ধর্মে এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক রীতির উপর নির্ভর করে।, ইসলামে হিজাব


ঘোমটা দেওয়া হিন্দু নারীদের জন্য সার্বজনীন প্রথা নয়, এটি ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির অংশ, যার背后 সম্মান, লজ্জা, বা সামাজিক মর্যাদার ধারণা কাজ করে।, এর প্রয়োগ পরিবর্তনশীল।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্যিকারের বন্ধু চেনার উপায়

ধর্ম এবং মানবতা

ভগবান শব্দের প্রতিশব্দ ও ভগবানের সংজ্ঞা