ভগবান শব্দের প্রতিশব্দ ও ভগবানের সংজ্ঞা

ঈশ্বর শব্দের বিভিন্ন প্রতিশব্দ রয়েছে, যা প্রেক্ষাপট এবং ধর্মীয় বা দার্শনিক দৃষ্টিকোণ অনুসারে প্রযোজ্য। ভগবান শব্দের বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ রয়েছে। যেমন:

ঈশ্বর

পরমেশ্বর

মহাদেব

সর্বশক্তিমান

জগদীশ্বর

সৃষ্টিকর্তা

নারায়ণ

শ্রীহরি

বিধাতা

প্রভু

ভগবান শব্দের প্রতিশব্দ hd
ভগবান শব্দের প্রতিশব্দ

এই শব্দগুলো প্রসঙ্গ ও ব্যবহার অনুযায়ী ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে।

এখানে কিছু সাধারণ প্রতিশব্দ রয়েছে:

সাধারণ প্রতিশব্দ

দেবতা

ঐশ্বরিক সত্তা

সর্বোচ্চ সত্তা

সর্বশক্তিমান

স্রষ্টা

বিধান

বাইবেলের এবং খ্রিস্টীয় প্রতিশব্দ

প্রভু

যিহোবা

ইয়াহওয়ে

এলোহিম

আদোনাই

পিতা

ইসলামিক প্রতিশব্দ

আল্লাহ

আর-রহমান (সর্বাধিক করুণাময়)

আর-রহিম (সর্বাধিক করুণাময়)

হিন্দু প্রতিশব্দ

ব্রহ্ম (চূড়ান্ত বাস্তবতা)

ঈশ্বর

ভগবান

পরমাত্মা

গ্রীক ও রোমান পুরাণ

জিউস (গ্রীক)

বৃহস্পতি (রোমান)

দার্শনিক ও রূপক প্রতিশব্দ

মহাবিশ্ব

পরম

অসীম

উৎস

আপনি কি (ঈশ্বর) একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা দার্শনিক ঐতিহ্যের প্রতিশব্দ চান?

হিন্দু ধর্ম অনুসারে ব্যাখ্যাঃ পরাশর মুনি ;ভগবান; শব্দটির 👉সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । ;ভগ; অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং;বান; অর্থ অধিকারী , যার 👉আছে । জান অনেক রুপ আছে  তাকে আমরা বলে থাকি রূপবান আবার যার অনেক ধন আছে আমরা তাকে বলি ধনবান ঠিক তেমনি বা তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলা হয় ভগবান।সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যার মধ্যে পাঁচটি বিশেষ গুণ রয়েছে তিনিই ভগবান। 

ব্যাসদেবের পিতা পরাশর মুনি ভগবান শব্দটি সংস্কৃত এবং এর অর্থ বিশ্লেষণ করেছেন 

"ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্যবীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ,জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্ ভগইতিঙ্গনা ॥"পূর্ণমাত্রায় এই ছয়টি গুন যার মধ্যে বর্তমান,তিনিই হচ্ছেন সয়ং ভগবান। সমস্ত বীর্য্য ,সমস্ত যশ,সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত শ্রী ,সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য তাহার মধ্যে বিরাজমান। এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে এটা কেউ দাবী করতে পারবেন না। এই জগতে কেউ অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি হতে পারে ,কিন্তু দাবী করতে পারে না সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী সে। কিন্তু অপরদিকে ভগবান সমস্ত ধন ,সমস্ত যশ ,সমস্ত শক্তির অধিকারী ,সমস্ত জ্ঞান ,সমস্ত সৌন্দর্য্য , তাই তাকে বলা হয় ভগবান । বেদান্ত সূত্রের প্রথম শ্লোকে বলা হয়েছে পরম ব্রহ্ম ভগবান সর্ম্পকে ;অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা ; কে সেই পরম ব্রহ্মটিভ ? জন্মদস্য যতঃ;  তার উত্তরে দ্বিতীয় শ্লোকে বর্ননা করা হয়েছে ; 

এই সুত্রটি শ্রীমদ্ভাগবতের ব্যাসদেব তার শ্লোকে সংযোজন করেছেন। জন্মদস্য যতোহন্বয়াদিতরত শ্চার্থেষ্বভিজ্ঞ স্বরাট্ ; জন্ম আদি অস্য যতঃ --জগত অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ড যা হতে এ দৃশ্যমান  ,জন্ম আদি অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয় পরম ব্রহ্ম ভগবান।

" অহংসর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে ।"

ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমম্বিতাঃ ॥ ভগবদগীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ননা করেছেন আমি সমস্ত কিছুর উৎস ও সবকিছু আমার কাছ থেকে উৎপত্তি হয়েছে । অর্থাৎ সবকিছুর স্রষ্টা হচ্ছেন ভগবান,তিনি আবার সবকিছুর পালনকর্তা এবং সংহার কর্তাও। শাস্ত্রে বর্ননা করা হয়েছে ভগবানকে সর্বশক্তিমত্ত্বা হিসেবে। কেউ কেউ আবার ঈশ্বর বলে সম্বোধন করে থাকেন ভগবানকে। তাই ঈশ্বর শব্দটির অর্থ আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন । শাস্ত্র বা শব্দকোষ অনুসারে ঈশ্বর শব্দের অর্থ হচ্ছে -নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণ কর্তা অর্থাত্ যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন ।এই জগতের প্রতিটি জীবের সীমিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে , সেহুতু তাই তারা ঈশ্বর বলে মনে করতে পারে নিজেকে বা দেবতাদেরকে ঈশ্বর বলে গ্রহন করা যেতে পারে । তারা বিশ্বব্রম্মান্ডের কোন না কোন কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। সেই পরমেশ্বরকে জানাই হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য যিনি ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রণ করেন । পরমব্রহ্ম বা পরম ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন , তিনিই ভগবান । ভগবান শব্দটি সমাজে যেমন খুশি ব্যবহার হচ্ছে ,সেভাবে ব্যবহার করা উচিত নয় । এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় যা শাস্ত্রবিরোধী বর্তমান সমাজ যেকোন যোগ- সিদ্ধি লাভ করা ব্যক্তির প্রতি। ধন্যবাদ সকলকে। 

শাস্ত্রমতে ভগবান এর সংজ্ঞা

শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে যে, ভগবান হলেন সেই সত্তা যার মধ্যে ছয়টি বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণভাবে বর্তমান:


(১) ঐশ্বর্য (ऐश्वर्य) – অসীম ক্ষমতা ও প্রভাব

(২) বীর্য (वीर्य) – অসীম শক্তি ও পরাক্রম

(৩) যশ (यश) – সর্বত্র প্রসারিত খ্যাতি

(৪) শ্রী (श्री) – অনন্ত সৌন্দর্য ও সম্পদ

(৫) জ্ঞান (ज्ञान) – সর্বজ্ঞতা ও পরম জ্ঞান

(৬) বৈরাগ্য (वैराग्य) – সকল প্রকার আসক্তি থেকে মুক্তি

গীতায় ভগবান

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে "ভগবান" বলে ঘোষণা করেছেন:

"শ্রীভগবান উবাচ" – (ভগবদ্গীতা ২.২)

এখানে কৃষ্ণকে "ভগবান" বলা হয়েছে, অর্থাৎ যিনি ঐশ্বর্য, জ্ঞান, শক্তি, সৌন্দর্য, বৈরাগ্য ও যশে পূর্ণ।

ভগবান ও দেবতা মধ্যে পার্থক্য

ভগবান: সর্বোচ্চ পরম সত্তা, যিনি সব কিছুর মূল কারণ (যেমন, শ্রীকৃষ্ণ, নারায়ণ, শিব, দুর্গা ইত্যাদি)।

দেবতা: ভগবানের অধীনস্থ শক্তিধর সত্তারা, যাঁরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন (যেমন, ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি, চন্দ্র ইত্যাদি)।

“ভগবান” শব্দের ব্যাখ্যা

সংস্কৃত ভাষায় “ভগবান” শব্দটি মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত:

“ভগ” (भग) অর্থ ঐশ্বর্য, গুণ, সম্পদ, জ্ঞান, শক্তি, সৌভাগ্য ইত্যাদি।

“বান” (वान) অর্থ যার মধ্যে বিদ্যমান বা যিনি ধারণ করেন।

উপসংহার

ভগবান বলতে সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে বোঝায়, যিনি সমগ্র সৃষ্টির মূল, সর্বজ্ঞ ও পরম করুণাময়। শাস্ত্র মতে, ভগবান হলেন সেই অনন্ত সত্তা, যিনি শাশ্বত, চিরবিদ্যমান এবং যাঁর মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য, শক্তি ও গুণ পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্যিকারের বন্ধু চেনার উপায়

ধর্ম এবং মানবতা