ধর্মের সংজ্ঞা কি?
এই যে আমরা এত ধর্ম নিয়ে তর্কাতর্কি করি এর সংজ্ঞা কি আমরা আসলেই বুঝি নাকি না বুঝেই নেশাখোরের মত মাতলামি করি ।ধর্মের সংজ্ঞা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, তবে সাধারণভাবে ধর্ম হল একটি আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক জীবনের সিস্টেম, যা মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা করে। ধর্ম সাধারণত বিশ্বাস, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, এবং নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, যা সমাজের একত্রিত হওয়া এবং মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে। ধর্মের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং সংবেদনশীল ভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করে, এবং এটি সৃষ্টিকর্তা বা উচ্চ শক্তির প্রতি বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার একটি মাধ্যমও হতে পারে। ধর্ম নিয়েই যখন এত বাড়াবাড়ি তবে ধর্মে মানে আগে ভালমত বুঝা উচিত ।ধৃ +মন =ধর্ম ।ধৃ মানে হলো ধারণ বা গ্রহণ করা ।আর মন হলো অন্তর,আত্না,পরমাত্না ।তবে ধর্মের অর্থ হলো মন যাহাকে গ্রহণ শান্তি লাভ করে তাহাই ধর্ম ।সব ধর্মই শান্তির কথা বলে ।কোন ধর্মই চুরি,ডাকাতি,নরহত্যা,ব্যভিচার করতে বলে না ।
ধর্ম হল বিশ্বাস, আচরণ, এবং নীতিশাস্ত্রের একটি সংগঠিত কাঠামো, যা সাধারণত একটি উচ্চতর শক্তি, নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, এবং বিশ্বজগতের প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধির ভিত্তিতে গঠিত হয়। এটি এক ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যা প্রথা, আচার, অনুশীলন, এবং ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ধর্ম সাধারণত চারটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত:
১. বিশ্বাস – সৃষ্টিকর্তা, পুনর্জন্ম, কর্মফল, মুক্তি বা অন্যান্য আধ্যাত্মিক ধারণার প্রতি বিশ্বাস।
2. উপাসনা ও আচার – প্রার্থনা, উপাসনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আচার-অনুষ্ঠান।
3. নৈতিকতা ও শাস্ত্র – নৈতিক আচরণ ও জীবনযাত্রার নিয়ম যা ধর্মীয় গ্রন্থ বা ঐতিহ্য দ্বারা নির্ধারিত।
4. সম্প্রদায় – ধর্মীয় অনুসারীদের একটি সামাজিক সংগঠন বা সম্প্রদায়, যারা একসঙ্গে ধর্ম পালন করে।
প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব দর্শন ও মতবাদ রয়েছে, যা সমাজ ও ব্যক্তির জীবনধারাকে প্রভাবিত করে।
তবে ধর্ম নিয়ে এত বিবাদ কেন ? পানিকে কেউ জল বলে ,কেউ বলে ওয়াটার ,কেউ বলে aqua,আসলে একটি দ্রব্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত ।এক ঈশ্বরকে মানুষ বিভিন্ন নামে ডাকে ।যারা নাবুঝে ধর্মের নামে মানুষ কুপিয়ে মারে তাদের ধর্মে কি মানুষ হত্যার কোন বিধান আছে কি? বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত জানাতে পারে তাই বলে কি তাকে হত্যা করতে হবে! তার মতামত আপনার খারাপ লাগলে বা ভুল হলে আপনার যুক্তি দ্বারা তাকে বুঝানো উচিত ।তা না করে একেবারে হত্যা ! তবে কি আমি ধরে নেব আপনার ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান নেই বললেই চলে? নিচের সংজ্ঞাটি থেকে ধর্ম সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে----
![]() |
ধর্মের সংজ্ঞা কি? |
ধর্ম কি?
ধর্মতত্ত্ব জানতে হলে আগে ধর্ম কি তা বিশেষ ভাবে বুঝতে হবে। ধর্ম কাকে বলে?-
ধ্রিয়তে ধর্ম ইত্যাহুঃ স এব পরম প্রভূঃ। ধারণ করে বলে এর নাম ধর্ম। পূণ্য কি, পাপ কি, জ্ঞান কি, অজ্ঞান কি, সুন্দর কি, কুৎসিৎ কি- এক কথায় ভাল কি, মন্দ কি, যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ত্রিলোক যার মধ্যে ধৃত বা নিহিত, তাকেই ধর্ম বলে। অথবা মানুষ যাকে ধারণ করে আছে, তাই ধর্ম। কেবল মানুষ বলি কেন- সর্ববৃহৎ থেকে পরমাণু পর্যন্ত, ত্রিভুবনে যা কিছুর সম্ভাবনা আছে, তাদের সবকিছুই ধর্মের দ্বারা ধৃত, রক্ষিত,পরিচালিত। ধর্মই জগৎযন্ত্রের যন্ত্রী- ধর্মই সুখের স্বরূপ। ধর্মের জন্যই জাগতিক পদার্থের আকুল আকাঙ্ক্ষার ছুটাছুটি। দেবতা, মানুষ, কীট, পতঙ্গ, উদ্ভিদ্ ও জড়বস্তু প্রভৃতি ত্রিলোকের সকল পদার্থেরই ধর্ম ও সাধনার আবশ্যকতা আছে। তবে মানুষের ধর্ম আছে, ধর্মজ্ঞান আছে,- আর পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ বা উদ্ভিদের ধর্ম আছে, কিন্তু ধর্মজ্ঞান নাই। ধর্মজ্ঞান আছে বলেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী হতে শ্রেষ্ঠ। আপনার আর কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। একটা অনুরোধ নিজে জেনে অন্যদের কেও জানান
আমরা কেনো মূর্তি পুজা করি ? হিন্দুরা কি পৌত্তলিক ? মূর্তির তো প্রান নেই কেন তবু কেন আমরা তাঁর উপাসনা করি?
আমরা কি সঠিকভাবে এর উত্তরদিতে পারি, আর এজন্য আমরা অন্যের কাছে হিন্দুধর্ম কে হাসির পাত্র বানাই। অনেকেই সনাতন ধর্মের মূর্তি পূজা নিয়ে প্রশ্ন করে।এ প্রশ্ন যে শুধু অন্য ধর্মের লোকেরা করে তাই নয় বরং অনেক সনাতন ধর্মালম্বীরাও করে। আজ তাই আপনাদের কে মূর্তি পূজা কি এবং কেন তা কেনোই বা করা হয় তাই সনাতন দর্শনের আলোকে মাধ্যমে তুলে ধরব। পূজা সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে সনাতন ধর্মে ঈশ্বর ও দেবতা সম্পর্কে দর্শনে কি বলা হয়েছে। দেবতা ও ঈশ্বর সম্পর্কে প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন হিন্দু ধর্ম দর্শনে একাধিক ঈশ্বর বাদের কোন স্থান নেই। বরং তো সনাতনী রা একেশ্বর বাদে বিশ্বাসী। হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম)তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। ঋকবেদে বলা আছে ঈশ্বর “একমেবাদ্বিতীয়ম” – ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম(নিরাকার ব্রহ্ম)।ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি “অবাংমনসগোচর” অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত। ঈশ্বর সম্পর্কে আরো বলা আছে-
১. ছান্দেগ্য নামক উপনিষদের ৬ নং অধ্যায়ের ২ নং পরিচ্ছেদের ১ নং অনুচ্ছেদে আছে-“একাম এবাদ্বিতীইয়ম” যার বাংলা অর্থ- “সৃষ্টিকর্তা মাত্র একজনই আর তাহার কোন দ্বিতীয় কেউ নেই”
২. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-“না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ”অর্থ- “সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই,তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই”
৩. “একং-সদ বিপ্রা বহুধাবদন্তি” (ঋকবেদে উল্লেখ আছে ১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ “পণ্ডিত গণ সেই এক ঈশ্বরকে নানান নামে ডাকেন”
৪. যজুবেদের ৩২ নম্বর অধ্যায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-“ন তস্য প্রতিমা আস্তি” অর্থ- “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই”
৫. যজুবেদের ৪০ নম্বর অধ্যায়ের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-“সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র”
৬. “একং-সন্তং বহুধন_কল্পায়ন্তি” (ঋকবেদ উল্লেখ আছে এই পৃষ্ঠায়-১/১১৪/৫) অর্থাৎ “বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে সেই এক ঈশ্বরকে ”
৭. “দেবানাং পূর্বে যুগে_হসতঃ সদাজায়ত” (ঋকবেদ উল্লেখ আছে এই পৃষ্ঠায় ১০/৭২/৭) অর্থাৎ “স্বয়ং দেবতারাও পূর্বে অব্যক্ত ঈশ্বর হতে এই মহাবিশ্বে উৎপন্ন লাভ করেছে।
৮. যজুবেদের ৪০.১ “শুধুই মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে সমস্ত galaxy বা মহাবিশ্ব। আর এই ঈশ্বর কখনোই অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জন বা অন্যায় করাকে গ্রাহ্য করেন না"।
৯. ঋগবেদ ১০.৪৮.৫ “সমস্ত মহাবিশ্বকে আলোকিত করেন মাত্র ঈশ্বর। তিনি এই জগতের সৃষ্টিকারী এবং তিনি অপরাজেয় ও মৃত্যুহীন।
১০. যজুর্বেদ সংহিতা -৩২.১১ “ঈশ্বর যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত”
১১. ঋগবেদ সংহিতা -এই অধ্যায় খুঁজে পাবেন ১০.৪৮.১ “ যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন একমাত্র ঈশ্বর”
১২. “ঈশ্বর সকল ভূতপ্রাণীর হৃদয়ে বাস করেন” – শ্রীমদভগবদগীতা-১৮/৬১
আরো বলা আছে, তবে লেখা বড় হয়ে যাবে বলে, সবটা আর বল্লাম না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন