হরিবাসর বা হরিসভা কেন করব
কলিকালের হতভাগা মানুষ অমৃত কথা /বাক্য (হরেকৃষ্ণ) ভুলে গিয়ে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না এমন অন্ধকারছন্দ পথে অগ্রসর হয়ে পড়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও অর্থবিত্তের তুচ্ছ মোহে আবদ্ধ হয়ে সত্য সুন্দরের পথ খুঁজেই পাচ্ছে না। এইরকম অন্ধকারছন্ন দুঃখময় ভবিষ্যৎ জীবন থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য অবশ্যই মানব কুলকে প্রেমময় শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ পথের দিকে যাত্রা করতে হবে।হরিবাসর বা হরিসভা হলো একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সমাবেশ, যা প্রধানত বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত। এই সমাবেশে সাধারণত ভক্তিগীতি, কীর্তন, ধর্মীয় আলোচনা এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
হরিবাসর বা হরিসভা হিন্দু ধর্মীয় ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। এটি সাধারণত কীর্তন, ভজন, ভাগবত পাঠ, এবং ধর্মীয় আলোচনা নিয়ে গঠিত হয়
হরিবাসর ও হরিসভার বৈশিষ্ট্য:
কীর্তন ও নামসংকীর্তন –ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীহরির নামগান করা হয়।
ভক্তিগীতি ও ভাগবত আলোচনা – শ্রীমদ্ভাগবত, রামায়ণ, মহাভারত বা অন্যান্য ধর্মীয় শাস্ত্র থেকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করা হয়।
সমবেত উপাসনা – ভক্তরা একত্রে প্রার্থনা ও ভজন করেন।
প্রসাদ বিতরণ – অনুষ্ঠানের শেষে উপস্থিত ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
সাধু-সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি – অনেক সময় হরিসভায় ধর্মগুরু বা সাধু-সন্ন্যাসীরা উপস্থিত থেকে ধর্মীয় উপদেশ দেন।
এটি মূলত রাতভর বা নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এবং ভক্তদের জন্য এটি আত্মার পরিশুদ্ধির একটি মাধ্যম। বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো এটি জনপ্রিয় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
হরিবাসর সম্পর্কে বিখ্যাত একজন ধর্মীয় গুরুর বক্তব্য নিচে পেশ করা হলো:
![]() |
হরিবাসর / হরিসভা |
হরিসভা কি ও এর উদ্দেশ্য?
অর্থ ও উদ্দেশ্য:
"হরি" শব্দের অর্থ বিষ্ণু বা কৃষ্ণ এবং "বাসর" অর্থ দিন বা আয়োজন।এটি মূলত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য বা ভগবান বিষ্ণুর নামসংকীর্তন, ভজন, এবং ধর্মীয় আলোচনা কেন্দ্রিক এক ধরনের সমাবেশ।
আয়োজন ও সময়:
এটি নির্দিষ্ট কোনো দিন বা সময়ে হতে পারে, তবে সাধারণত একাদশী, পূর্ণিমা, একান্তিক উপবাস বা বিশেষ বৈষ্ণব তিথিতে আয়োজন করা হয়।অনেক ক্ষেত্রে এটি সারারাত ধরে চলে, যেখানে ভক্তগণ গান, কীর্তন ও ধর্মীয় আলোচনা করে থাকেন।
কর্মসূচি ও উপাদান:
নাম সংকীর্তন (হরিনাম সংকীর্তন)ভাগবত পুরাণ বা অন্যান্য বৈষ্ণব গ্রন্থের আলোচনা ভজন ও কীর্তন,
প্রসাদ বিতরণ কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় নাটক বা লীলা কীর্তন
লোকায়ত সংস্কৃতি ও জনপ্রিয়তা:
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, এটি একটি পরিচিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে এটি জনপ্রিয়তা পায় এবং অনেক স্থানে এটি নিয়মিতভাবে পালিত হয়।
হরিসভা ................পদকীর্তন বা পদাবলী কীর্তন মানেই রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, আর সেখানেই- নৌকা বিলাস, রাধার মান ভঞ্জন, রাসলীলা ইত্যাদি ইত্যাদি পালার নামে কৃষ্ণের লাম্পট্য ও রাধার পরকীয়া প্রেমের বর্ণনা।
এর মাধ্যমে আমরা সমাজকে কী শিক্ষা দিচ্ছি এই সকল প্রেম ভালোবাসা দিয়ে? এই শিক্ষা দিচ্ছি পুরুষদের যে,পরকীয়া প্রেম করো তোমরা কারন পরকীয়া প্রেম করে গেছেন তোমাদের ভগবান, আবাব বিবাহিত মহিলাদের পরীক্ষা দিচ্ছি যে,তোমাদের স্বামীর পরকীয়া প্রেমকে মেনে নাও। কি উপকার হতে পারে সমাজের এটা থেকে? হিন্দুদের প্রতি বছর লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয় এই হরিবাসর থেকে। যার বেশিরভাগ টাকাই নষ্ট হয় ডেকোরেশনে যা অনুঘটক সমাজ ধংসের জন্য। আমার পুরোনো পাঠকরা কিছুটা হলেও জানেন যে, কিছু নেই হিন্দু ধর্মে রাধা কৃষ্ণের। তাই এই পদাবলী কীর্তন (হরিবাসর) এর আমি ঘোর বিরোধী। আমার নিজস্ব মনের খুব একটা চাওয়া এই মূহুর্ত থেকে সারা দেশে এটা বন্ধ হোক এবং এর বিপরীতে নামকীর্তন চলুক। কিন্তু নামকীর্তনেরও একটি পদ্ধতিগত সমস্যা আমাদের ধর্মগুরুরা সৃষ্টি করে রেখে গেছেন; সমস্যাটি হলো-এই নামকীর্তন নাকি একবার শুরু হলে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা যায় না বা যাবে না। জানি না, এই নির্দেশ তারা কোথা থেকে পেয়েছে ? কিন্তু আমার গবেষণায়, এই রকম নির্দেশ আমি আজ পর্যন্ত কোথাও পাই নি, পেলেও তা ভেঙ্গে ফেলবো; কারণ, যা সামাজিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে না এবং যার মাধ্যমে সমাজের মঙ্গল না হয়ে অনিষ্ট হয় তা কোনো ধর্ম নয়, তাই সেগুলো আমি মানি না।..............অনুষ্ঠান হয় মানুষের জন্য এবং অনুষ্ঠানগুলো সেভাবেই সাজানো উচিত যাতে মানুষ সেগুলোকে পূর্ণরূপে নিতে পারে বা তার সবটুকু বিষয় ঠিক মতো বুঝতে পারে। যেহেতু নামকীর্তন একবার শুরু হলে আর বন্ধ করা যায় না, সেহেতু দেখা যায়, শেষ রাতে, শ্রোতা-দর্শক ঘুমে ঢুলু ঢুলু করছে, কেউ বা নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ঘুমিয়েই পরেছে, কিন্তু তবুও চলছে নাম কীর্তন; এই ধরণের অনুষ্ঠানের মানে কেন এরখম ?..............এরপর যা ঘটে- সারারাত জেগে অনুষ্ঠান দেখার ফলে, পরদিন কেউ আর কোনো কাজে যেতে পারে না, গেলেও ঘুমে ঢুলতে থাকে, ফলে স্বাভাবিক শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয় এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও অফিসের কাজে মারাত্মক ক্ষতি হয়, আর যারা সেই ক্ষতি করতে চায় না, তাদেরকে বাধ্য হয়ে সেই সব অনুষ্ঠান মিস করতে হয়। এভাবে যে এলাকাতেই এই ধরণের হোল নাইট অনুষ্ঠান হোক না কেনো, সেই এলাকাতেই একটা বাজে প্রভাব পড়ে বা পড়তে বাধ্য। এছাড়াও নানা কারণে যারা রাতে ঘুমাতে চায়, তারা এলাকার অনুষ্ঠানের মাইকের সাউন্ডসহ নানা কারণে রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না, ফলে এটা তখন কারো কারো কাছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান না হয়ে ধর্মীয় যন্ত্রণায় পরিণত হয়। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ার ফলে কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না; কিন্তু এই ধরণের অনুষ্ঠান নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ কাজ করে, যে অসন্তোষ সমাজের জন্য ক্ষতিকর।...........আমার মত হচ্ছে, এই ধরণের কর্মবিনাশী অনুষ্ঠান বন্ধ করে তাকে কর্মবান্ধব করে সাজাতে হবে। যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হোক না কেনো, তা কোনোভাবেই সারারাত ধরে চালানো যাবে না; অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যায় এবং শেষ হবে, খুব বেশি হলে রাত ১২ টার মধ্যে। তারপর লোকজন গিয়ে ঘুমাবে, পরদিন যে যার মতো কর্ম করবে এবং কর্ম শেষ করে সন্ধ্যায় আবার অনুষ্ঠান স্থলে হাজির হয়ে অনুষ্ঠান আস্বাদন করবে। এভাবে- একদিন, দুইদিন বা টাকার সামর্থ্য অনুযায়ী তিন চার দিনের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করতে হবে। আগেই বলেছি, কোনোভাবেই পদাবলী কীর্তন করা যাবে না এবং নামকীর্তনও একবার শুরু হলে তা আব বন্ধ করা যাবে না, এই ধরণের অবাস্তব থিয়োরি বাদ দিয়ে, কিছু সময় ধরে কীর্তন করতে হবে এবং কিছু সময় ধরে চালাতে হবে আলোচনা অনুষ্ঠান, তাহলেই শুধু হবে হিন্দু সমাজের মঙ্গল।..................................
কারণ,মানুষের পরলৌকিক কল্যাণ শুধু নাম কীর্তন বয়ে আনতে পারপ কিন্তু এর ফলে ইহলোকের কোনো কিছুই হয় না। এর কারণ হলো কোন জ্ঞানমূলক কিছুই থাকেনা নাম কীর্তনে,তাই সমাজে এর কারণে জ্ঞানের কোন চর্চা হয় না আবার জ্ঞানের চর্চা ছাড়া সমাজ টিকতে পারে না। একারণেই মুসলমানরা প্রতিটি পাড়ায় বা মসজিদ মাদ্রাসায় বছরে একবার করে হলেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে, উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, মুসলমানদের মধ্যে এবং ক্ষেত্র বিশেষ হিন্দুদের মধ্যেও ইসলামিক জ্ঞানের সঞ্চার করা। এসব কারণেই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো হিন্দু, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে যতটুকু জানে, তার চেয়ে বেশি জানে ইসলাম সম্পর্কে। ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চের সামনে মুসলমানদের উপস্থিতি খুব বেশি না হলেও, মুসলমানদের এই ধরণের ওয়াজ মাহফিল যে একেবারে বৃথা যায়, তা নয়; বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা শুনতে শুনতে কোনো কোনো হিন্দু বিভ্রান্ত হয় এবং কেউ কেউ ইসলাম গ্রহনও করে ফেলে, এরকম কয়েকটি ঘটনা আমি জানি।মুসলমানদের এই ধরণের জ্ঞান চর্চা মূলক ওয়াজ মাহফিল মূলত হিন্দু সমাজের উপর এক ধরণের সূক্ষ্ম ইসলামিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসনের পাল্টা হিসেবে আমাদেরকেও ধর্মীয় সভা করতে হবে এবং হিন্দুধর্মীয় জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাহলেই বন্ধ হবে সমাজের ক্ষয়। কিন্তু শুধু মাত্র ধর্মীয় সভা করে হিন্দুদেরকে সেখানে পাইকারী দরে আকৃষ্ট করা যাবে বলে মনে হয় না,
কারণ প্রায় প্রত্যেকেই নিজেকে খুব বড় ব’লে ভাবে আত্মগর্বী হিন্দুরা ; তাই নিজে কিছু না জানলেও অন্যের কাছে জ্ঞানের কথা শোনাকে অপমানজনক বলে মনে করে তারা নিজেদের জন্য ! সবাই কিন্তু এমন- তা নয়, আবার কোন অনুষ্ঠান করতে চাইলে তাতে সব ধরনের মানুষ আসবে সেই চিন্তাভাবনা করে অনুষ্ঠান সাজাতে হবে। আর এর জন্যই রাখতে হবে আলোচনা সভা ও নামকীর্তন। কিছু সময় ‘হরে কৃ্ষ্ণ’ গান হবে, তারপর কিছু সময় ধরে হবে আলোচনা সভা; এভাবে অনুষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হরে কৃষ্ণ গান এক্ষেত্রে কাজ করবে বিজ্ঞাপন হিসেবে, আর আলোচনা সভার জ্ঞান হবে মূল প্রোডাক্ট, যা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ই হবে ঐ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। মাঝে মাঝে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করি। একবার এক অনুষ্ঠান শেষে একজন আমাকে বললো, লাখ লাখ টাকা খরচ করে হরিবাসর করে যে জ্ঞান লাভ হয় না, আজকে, আপনার দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় তার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ হলো, আপনাকে ধন্যবাদ।কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে সমাজে যে ধারা চলে আসছে, তা একদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, এই পরিবর্তন ঘটাতে হবে আস্তে আস্তে। প্রথমে সবাই পদাবলী বা লীলা কীর্তনের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান নেন। নিজের এলাকায় পদাবলী বা লীলা কীর্তনের হরিবাসর বন্ধ করে নামকীর্তন চালু করুন এবং অন্য এলাকা থেকে পদাবলী কীর্তনের উদ্দেশ্যে হরিবাসরের জন্য চাঁদা নিতে এলেও তা দেওয়া বন্ধ করুন এবং নামকীর্তন চালু করতে বলুন। এভাবে হিন্দু সমাজের অবক্ষয়টা প্রথমে বন্ধ হবে। তারপর নামকীর্তন একবার চালু হয়ে গেলে একে সংস্কার ক’রে উপরে আমি যেভাবে বললাম, সেভাবে নামকীর্তন ও আলোচনা সভার সিস্টেম চালু করুন, যাতে লোকজন দুচারটা জ্ঞানের কথা বলতে পারে এবং শুনতে পারে।আমি অনেক ভেবে দেখেছি, এভাবেই হবে হিন্দু সমাজের মঙ্গল এবং এটাই সমাজ রক্ষার একমাত্র পথ।বর্তমানে যারা হিন্দুধর্ম নিয়ে কাজ করে, তারা শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার চেয়ে গুরুত্ব দেয় গান-বাজনা-কীর্তন এবংখোল-করতাল-হারমোনিয়াম বাজানো শেখার দিকে এবং যখনই এতে কিছু দখল এসে যায়, তখনই ধুতি-ফতুয়া প’রে কপালে লম্বা করে তিলক লাগিয়ে নিজেকে মহাগুরু হিসেবে তুলে ধ’রে অনুষ্ঠানের মধ্য গিয়ে গানের সাথ শুরু করে কান্নাকাটি বা নাচানাচি। মনে রাখবেন, এটা কোন ধর্ম নয়, এটা যাত্রাপালার মতো বিনোদন এবং এই একইরকম বিনোদন হচ্ছে যেকোনো ধরণের বারোয়ারি পূজা, যাতে পুরোহিত তার মতো ক’রে পূজা ক’রে চলে যায়, আর আমরা সাউন্ডবক্সে গান বাজানো এবং প্রসাদ ও খিচুড়ির আয়োজন এবং তা বিলি বন্টন ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এগুলো কোনো ধর্ম নয়, ধর্ম হচ্ছে- শাস্ত্র জ্ঞান অর্জন, সেই জ্ঞান অন্যদেরকে প্রদান এবং একনিষ্ঠ মনে একা বা সম্মিলিতভাবে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা।যতদিন হিন্দু সমাজ গুলো এই ফরমেটে রূপান্তরিত না হবে কতদিন পর্যন্ত হিন্দু সমাজের ক্ষয় রোধ করতে কেউ পারবেনা। একই নিয়মে চলমান থাকলে লক্ষ কোটি টাকার আশ্রম আর মন্দির , বর্তমানের দর্শনীয় স্থান আর ভবিষ্যতের মসজিদ মাদ্রাসা হবে।
আপনার সন্তান ও আগামী প্রজন্মরা যদি সঠিক সনাতন ধর্মীয় কালচারের জ্ঞানের অভাবে পড়ে,তাহলে ভবিষ্যতে সমাজের টিকে থাকবে কিভাবে? মন্দির আশ্রমে কি কাজে লাগবে, দেখাশোনা/তত্তাবধান করবে কে এগুলো? অপরদিকে ইসলাম তো আর বিলুপ্ত হবে না, তাই তখন মুসলমানরা সেগুলো দখল করে মসজিদ আর মাদ্রসায় রূপান্তরিত করবে, আর সেগুলোতে হয়তো- আমাদেরই আগামী প্রজন্ম নামাজ পড়বে বা আরবি শিখবে। তাই হিন্দু ধর্ম ও কালচারকে বাঁচাতে হলে আমাদের সন্তান অর্থাৎ আগামী প্রজন্মকেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং এমন একটা ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে, অটোমেটিক্যালি সেই শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মতে ট্রান্সফার হতে পারে, তাহলে আমরা না থাকলেও আমাদের শিক্ষা থাকবে এবং তা আগামী সকল প্রজন্মকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যাতে টিকে থাকবে হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু সমাজ।
বি.দ্র # সারা বাংলায় এখন চলছে রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্কিত লীলা কীর্তনের ঝড়, যারা লীলা কীর্তনের আয়োজন করে, আমার এলাকায় এমন কয়েকজনের সাথে এ সম্পর্কে আলোচনা করে বুঝেছি, তারা, কৃষ্ণের জীবনে রাধা নেই, এটা মানতে রাজী নয়, আবার তারা শাস্ত্র ঘেঁটে প্রকৃত সত্য দেখতেও রাজী নয়। তাদের কথা হচ্ছে যা এতদিন ধরে চলে আসছে, তেমনই চলবে।অনেক ভেবে দেখলাম, এদেরকে থামানোর একটাই পথ, সেটা হলো বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ, কিন্তু সেটা যতদিন অর্জিত না হচ্ছে, আরেকটা পথ হলো তাদের হরিবাসের বিজ্ঞাপনগুলো অনলাইনে প্রকাশ করে দেওয়া, এবং আমরা যারা প্রকৃত সত্যটা জানি, তারা হরিবাসরের বিজ্ঞাপনে যে ফোন নং গুলো থাকে, সেগুলোতে ফোন করে ঝাড়ি দেওয়া, এভাবে যদি তারা বাধা প্রাপ্ত হয়, আমার মনে হয় তারা এই পাপকর্ম থেকে বিরত হবে। আর কোনো হরিবা্সর কমিটিতে যদি গড়ে ৩০/৪০টি ফোন যায় এসব লীলা কীর্তন করার বিরুদ্ধে, তাহলে তারা ভয়ে আর লীলাকীর্তনের আয়োজন করবে না বলেই আমার মনে হয়। কারণ, মিথ্যা এজন্যই তারা অবলীলায় প্রচার করতে পারছে, এর কারণ, তাতে তারা কোনো বাধা পাচ্ছে না। এজন্য আমার বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনাদের এলাকায় যদি কোনো হরিবাসর হয় এবং তাতে লীলা কীর্তনের আয়োজন থাকে, সেটার ছবি তুলে ইনবক্সে আমার কাছে পাঠান, তারপর সেটা আমি ফেসবুকে পোস্ট করে বলে দেবো, সেখানে থাকা ফোন নংগুলোতে ফোন করে কিভাবে ঝাড়ি দিতে হবে, আমরা যারা রাধা তত্ত্বের বিরোধী, তারা যদি একবার করে ফোন করে তাদেরকে প্রথমে বোঝানোর এবং তারপর এগুলো বন্ধ করার জন্য হুমকি দিই, আমার মনে হয় তাতে আস্তে আস্তে কাজ হবে। আর এভাবেই পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নামে যে বদনাম হরিবাসরের নামে সমাজে ছড়ানো হচ্ছে, তা আস্তে আস্তে বন্ধ হবে এবং বন্ধ হবে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে মুসলমানদের কটূক্তি।অতএব, আসুন, হে কৃষ্ণ অনুসারী মধুকর ভক্ত প্রাণ অনন্ত গগন স্পর্শী চির প্রদীপ মহামন্ত্রের আহবানে এই মহতী অনুষ্ঠান প্রত্যেকে করার চেষ্টা করি এবং অনুষ্ঠান শ্রবণে মহানাম লীলা সংকীর্তন এর মিলন মেলায় সাধু বৈষ্ণব এর পদধলি গ্রহণ করি হরে কৃষ্ণ।
উপসংহার
হরিবাসর বা হরিসভা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভক্তির আবহ সৃষ্টি করে। এটি বৈষ্ণব ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও ভক্তির পরিবেশ গড়ে তোলে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন