মানুষের ধর্ম করার কতিপয় কারণ
নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কেন আমরা ধর্ম করছি!
অর্জুন শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞেস করল, হে কেশব! মৃত্যু যখন সকলের নিশ্চিত।
তাহলে আমরা সৎসঙ্গ, ভজন, কীর্তন কেন করছি?
তাদেরও মৃত্যু হবে যারা সংসার ভোগ, কামনা বাসনা পূর্ণ করছে ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেনঃ
হে পার্থ! বিড়াল যখন ইঁদুর ধরে তখন দাঁত দিয়ে কামড়ে তাকে বধ করে ভোজন করে।
কিন্তু সেই দাঁত দিয়ে যখন নিজের বাচ্চাকে কামড়ে ধরে
তখন বধ করে না। কোমল ভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে।
দাঁত একই, মুখ ও একই কিন্তু পরিনাম পৃথক পৃথক।ঠিক তেমনি মৃত্যু সকলের নিশ্চিত কিন্তু একজন প্রভুর ধামে অপরজন চুরাশি চক্রে।
সকলেরই অনিবার্য পওয়া হলো মৃত্যু। এটাই বিধির বিধান যে, জন্মিলে মরিতে হবে । দেহে প্রাণবায়ু থাকতে আপনি এই দেহকে কেমন ভাবে পরিচালনা করেছেন তার উপর নির্ভর করেই আপনার ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি ঘটবে।
জড় সুখ ভোগ করে যদি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন, কৃষ্ণ সেবায় নিজেকে সমর্পন না করেন। তবে মৃত্যুর পর এই দুঃখালয় নামক জগৎ সংসারে আপনাকে নানা দেহে নানা ভাবে ফিরে এসে কর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
কিন্তু আপনি যদি এই মনুষ্য জীবন কৃষ্ণ ভজনায় সমর্পন করেন। শুদ্ধ ভক্তি, পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে অনাদির আদি গোবিন্দের ভজনা করেন, সাধু সঙ্গ করেন, তাহলে মৃত্যুর পর ভগবান স্বয়ং আপনার সঙ্গী হবেন। কৃষ্ণভাবনায় জীবন অতিবাহিত করার ফলে হয় তো মৃত্যুর পর আর এই জড় জগতে আসতেই হবে না। স্বয়ং পরমেশ্বরের শ্রীচরণে ঠাই পাবেন।
সুতরাং মনুষ্যের এই দুর্লভ জীবনে জড় জাগতিক কর্মের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব সাধু সঙ্গ করুন। হরি নাম শ্রবন করুন। কৃষ্ণ নাম প্রচার করুন।
মানসিক স্বাস্থ্য ও ধর্ম, এই দুইয়ের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অনেকের কাছে ধর্ম হলো আধ্যাত্মিক শান্তি, সান্ত্বনা এবং জীবনের অর্থ খোঁজার একটি মাধ্যম। অন্যদিকে, সুস্থভাবে জীবনযাপন করার ক্ষমতা হলো মানসিক স্বাস্থ্য । এই দুইয়ের মধ্যকার সম্পর্ক কখনো কখনো জটিল হলেও, অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এবারে আমরা জানবো ধর্ম কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে?এ বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত পিছে প্রদান করা হলো.....
সামাজিক সমর্থন: ধর্মীয় সম্প্রদায় মানুষকে একটি সামাজিক সমর্থন ব্যবস্থা প্রদান করে। এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা একই বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং লক্ষ্য ভাগ করে নেন। এই সামাজিক সমর্থন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনের অর্থ: যেকোনো ধর্ম মানুষকে তার জীবনের অর্থ উদ্দেশ্য খুজে পেতে সহযোগিতা করে। ধর্ম জ্ঞান মানুষের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
আশা ও আস্থা: মানুষের আশা ও আস্থা প্রধানের সাহায্য করে ধর্ম। বিশেষ করে মানুষের যখন দুঃসময় বা কঠিন সময় আসে তখন ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের মনে সাহস যোগায়।
নৈতিক দিকনির্দেশনা: পৃথিবীতে যে নৈতিক দিক নির্দেশনাগুলো রয়েছে সেগুলো ধর্ম প্রদান করে থাকে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হল নৈতিক জীবন যাপন।
ধ্যান এবং মননশীলতা: ধ্যান ও মনোনশীলতার প্রচলন রয়েছে পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মেই।আর এই অনুশীলনগুলি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে।
ধর্মের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ: ধর্মীয় যে সকল অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে তার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে সংযোগ স্থাপন করে থাকে এই ধর্ম।
ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ: মানুষকে শান্তি ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে থাকে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করলে।
ধর্মীয় পরামর্শ: মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দিতে পারেন অনেক ধর্মীয় নেতা।
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সহায়তা: মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে পারে ধর্মীয় সম্প্রদায় ।
চ্যালেঞ্জ এবং বিবেচ্য বিষয়
ধর্মীয় কঠোরতা: আবার কিছু ক্ষেত্রে বা কিছু ধর্মে সেই ধর্মের ধর্মীয় কঠোরতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর হতে পারে।
অপরাধবোধ: নিজেদের অপরাধী মনে করতে পারে এই ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
ধর্মীয় কুসংস্কার: অনেক ধর্মে কিছু ধর্মীয় কুসংস্কার মানসিক রোগের চিকিৎসায় কিছুটা বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিশেষে, আমরা সংসার জীবনে যা কিছুই করি না কেন মানব সেবা, প্রকৃতির সেবা তথা মহাবিশ্বের সেবা সহ এমন কিছু করবো না যাতে জীব ও জগতের কোন প্রকার হানি বা ক্ষতি হয়। আমরা সকলে সত্যের পথে চলবো প্রকৃতিকে ভালোবাসবো হরে কৃষ্ণ।