যজ্ঞে আহুতি বড় নাকি বৈষ্ণব সেবা
যজ্ঞে আহুতি বড় নাকি বৈষ্ণব সেবাই বড় তাহা ধর্মীয় ভাবে ব্যাখ্যা করা হলো -
পৃথু মহারাজ বললেন," পরমেশ্বর ভগবান অনন্ত যদিও বিভিন্ন দেবতাদের নামে নিবেদিত যজ্ঞের মাধ্যমে আহার করেন, তবুও যজ্ঞাগ্নির মাধ্যমে আহার করার থেকে তত্ত্বজ্ঞ ঋষি ও ভক্তদের মুখের দ্বারা আহার করে তিনি অনেক তৃপ্তি অনুভব করেন, কারণ তিনি তখন ভক্তদের সঙ্গ ত্যাগ করেন না।" ভাগবত:৪/২১/৪১।
![]() |
যজ্ঞে আহুতি নাকি বৈষ্ণব সেবা করা উচিত |
তাৎপর্যঃ বৈদিক নির্দেশ অনুসারে বিভিন্ন দেবতাদের নামে ভগবানকে আহার প্রদান করার জন্য অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করা হয় এবং সে সময় স্বাহা মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়, যেমন- ইন্দ্রায় স্বাহা, আদিত্যায় স্বাহা।
ভগবান বলেছেন-
ন অহম তিষ্ঠামি বৈকুণ্ঠে যোগিনাং হৃদয়েষু বা।
তত্র তিষ্ঠামি নারদ যত্র গায়ন্তি মদ্ভক্তাঃ।।
অনুবাদ-
হে নারদ! আমি বৈকুন্ঠে থাকি না, যোগীদের হৃদয়ে থাকি না, যেখানে আমার ভক্তরা আমার মহিমা কীর্তন করে আমি সেইখানে থাকি।
এখন এখান থেকে বোঝা যায় যে, পরমেশ্বর ভগবান কখনো তাঁর ভক্তদের সঙ্গ ত্যাগ করেন না। অগ্নি অবশ্যই অচেতন, কিন্তু ভগবদ্ভক্ত ও ব্রাহ্মণেরা পরমেশ্বর ভগবানের চেতন প্রতিনিধি। তাই ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের ভোজন করানো হলে সরাসরিভাবে ভগবানকে ভোজন করানো হয়। অতএব সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, অগ্নিহোত্র যজ্ঞে আহুতি নিবেদন করার পরিবর্তে ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের আহার করানো উচিত। কারণ সেই পন্থাটি অগ্নিহোত্র যজ্ঞ থেকে অধিক কার্যকরী।
অদ্বৈত প্রভু তাঁর পিতৃশ্রাদ্ধে তিনি প্রথমে হরিদাস ঠাকুরকে আহবান করে তাঁকে প্রসাদ নিবেদন করেছিলেন, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের পর একজন শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকে আহার নিবেদন করা হয়। কিন্তু অদ্বৈত প্রভু তা নিবেদন করেছিলেন হরিদাস ঠাকুরকে, যিনি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁকে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন হরিদাস ঠাকুরকে আহার নিবেদন করার মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি সর্বোত্তম ব্রাহ্মণকে ভোজন করাচ্ছেন। যজ্ঞ অনুষ্ঠানের সময় যজ্ঞাগ্নিতে আহুতি নিবেদন করা হয় কিন্তু সেই প্রকার আহুতি যখন বৈষ্ণবদের নিবেদন করা হয়, তা নিশ্চয়ই অধিক ফলপ্রসূ হয়। ভাগবত তাৎপর্য:৪/২১/৪১।
হরে কৃষ্ণ