সন্তোষীমাতার পাঁচালী ও ব্রতকথা পূজাপদ্ধতি


বৃহৎ শ্রীশ্রীসন্তোষীমাতার পাঁচালী ও ব্রতকথা পূজাপদ্ধতি সহ
শ্ৰী পশুপতি চট্টোপাধ্যায়
ওরিয়েন্ট লাইব্রেরী ৮৬এ,
কলেজস্ট্রীট(ভবানী দত্ত লেন)কোলকাতা-৭৩
থেকে সংগ্রহীত 
শ্রীশ্রীসন্তোষীমাতার পাঁচালী ও ব্রতকথা পূজাপদ্ধতি 

সর্ব দেবদেবীর বন্দনা
জয় প্রভু সিদ্ধিদাতা শিব দুর্গার নন্দন। 
সর্বাগ্রে গণপতি পদে করিব বন্দন ॥ 
মুষিক বাহনে চড়ি প্রভু আসো ধরাধামে। 
তোমারি পূজার লাগি ব্যগ্র রহে সর্ব জনে। 
সর্ববিঘ্ন বিনাশন হয় প্রভু মহারাজ। - 
বারে বারে পূজা নাও তুমি নাহি কিছু লাজ ৷ 
তোমার চরণ পূজে অন্য পূজা সিদ্ধ হয়। 
তেত্রিশ কোটি দেব দেবী তবে তুষ্ট রয়।
শাস্ত্র মতে এ বিধান চলেছে জগৎময়। 
অগ্রে পূজি প্ৰভু তাই তুষ্ঠ থাক দয়াময়৷৷ 
সর্বদেবদেবী পদে এবে করিনু বন্দনা। 
লহ মোর ভক্তি প্রণাম কর দাসে মার্জনা ৷ 
এবে আমি সন্তোষী মাতার পূজিব চরণ। 
মঙ্গলময়ী দেবী পদে পুষ্প করি অর্পণ৷৷ 
কলির তাপিত জীবের তুমি যে পরিত্রাতা। 
অন্ন হীনে অন্ন দাও মাগো অন্নপূর্ণা মাতা৷৷ 
মানব কল্যাণে এসো মাগো কল্যাণ দায়িনী। 
সর্বশক্তি দানহ নরে মহাশক্তি রাগিনী। 
আপদে বিপদে দেবী নাম যে করে স্মরণ। 
কভু গৃহে তার না দেখিবে দুঃখের কারণ। 
শুক্রবার ব্রত করে সেই সতীনারীগণ। 
মনের বাসনা অবশ্যই হইবে পুরণ। 
গনেশ কন্যা সন্তোষী নাম দেববাসী দেয়। 
এই নামে সর্বকার্য্য শুভ জানিবে নিশ্চয়।
মহামায়ার অংশে দেবী জন্ম নিল ভবে। 
নরের দুর্গতি নাশে পূজন করহ সবে। 
ভক্তের ডাকে আসেন মাতা কল্পতরু হয়। 
সিদ্ধ হস্তে মাতা ভক্তবাঞ্ছা সকলি পূরয়॥ 
শোন বলি ভক্ত নরনারী সন্তোষী পূজনে। 
দুঃখ দৈন্য নাশিতে জানাইও দেবী চরণে৷৷ 
প্রণাম করিয়া দেবী পদে হুলুধ্বনি দাও।
 জয় জয় সন্তোষীমাতা বন্দনা গীতি গাও ৷৷

আবাহন
জয় জয় সন্তোষী জননী দুঃখ বিনাশিনী। 
দীনের কুটিরে এস, মাগো সৌভাগ্য দায়িনী॥ 
অপূর্ব রূপ, সুন্দর ভূষণ, পরিধানে তব। 
সর্বগুণে গুণময়ী পদরজ শিরে লব ৷ 
স্বর্ণ পদ্মে তুমি মাগো হও যে অধিষ্ঠিতা। 
রত্ন সিংহাসনে সদা তুমি হও বিরাজিতা ৷৷ 
চারি হস্ত তব মাগো, অপূর্ব দেহ গঠন। 
অতীব মনোহর দেখি যে নিখুঁত বদন ৷ 
দুই হস্তে মাতা ত্রিশূল ও তরবারি। 
মাথায় পরেছ তাজ ললাটে স্বর্ণটিক্রী॥ 
এক হস্তে অন্ন দানে ক্ষুধাতুর সন্তানে। 
সর্ব জীবে রক্ষা করে সুপথে টানিয়া আনে৷ 
বাকী হস্ত শূণ্য রাখে ভক্তে বরাভয় দানে। 
তোমারে পূজিব মাগো বসায়ে হৃদি আসনে৷ 
কর্ণে দোলে কুন্তল কণ্ঠে শোভিছে পুষ্পহার। 
সম্মুখে হেরি মঙ্গল ঘট শঙ্খ বাজে আর॥ 
সুগন্ধি ধূপের গন্ধে মাতোয়ারা গৃহকোণ।

ব্রতকথা
রামবাবু মনোমত একটা পাকা বাড়ী কিনে সাবিত্রীকে নিয়ে গেল, স্বামী স্ত্রী খুব সুখেই সেখানে আছে। একদিন রাতে সাবিত্রী স্বামীকে সন্তোষীমায়ের দয়ার কথা বলল, রামু শুনে খুশী হল। সাবিত্রীর ইচ্ছায় সন্তোষী মাতার ব্রত উদযাপনের জন্যে অকাতরে অর্থ ব্যয় করে পূজার আয়োজন করল।

সাবিত্রী মনের আশা মিটিয়ে ব্রত উদ্‌যাপন করলে কয়েকটা ব্রাহ্মণ, বাকী সব ভাসুর পো আর ভাসুর ঝি'দের নিমন্ত্রণ করে আনলো। ব্রাহ্মণ ও বালক ভোজন খুব জাঁক জমকে করলে।একে একে সব জায়েরা এল সাবিত্রীর বাড়ীতে। সন্তোষী মায়ের পূজা দেখবেআর মাহাত্ম্য শুনবে। সাবিত্রী খুব খুশী হল। কিন্তু তার ছ’জায়ে এই সব ধনসম্পদ দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলে৷ কেমন করে সাবিত্রীর ক্ষতি করা যায়মনে মনে সেই মতলব আঁটতে লাগলো। হঠাৎ মেজ বৌয়ের মাথায় বুদ্ধি খুলে গেল, তাদের বাড়ীর সকল ছেলে মেয়েদের গোপনে ডেকে বললেন দেখ, তোরাখেতে বসে টক্ চাইবি। যদি না টক্ দেয় তাহলে পয়সা চাইবি, আর তাও যদিনা দেয়, কিছু না খেয়ে তোরা এক সঙ্গে উঠে পড়বি।সাবিত্রী ব্রতউদ্যাপন শেষে, ব্রাহ্মণ ও বালকে ভোজন করাতে বসালো। খাওয়া আরম্ভ সাবিত্রীর ভাশুরপোয়েরা একসঙ্গে বলে উঠলো—কাকীমা, আমাদের একটু করে টক্ জিনিষ দাও, নতুবা খেতে ভাল লাগছে না, সাবিত্রী তাদের বললো, আজ তোমাদের টক্ খেতে নাই। তখন ছেলেরা বললো, তবে আমাদের পয়সা দাও।সাবিত্রী মনে ভাবলো, আজ পবিত্র দিন, শিশু মনে কষ্ট দেওয়া ন্যায় সঙ্গ ত হবে না, সুতরাং তাদের সকলের হাতে সাবিত্রী পয়সা দিয়ে সন্তুষ্ট করল। ছেলের দল হাতে পয়সা পেয়ে খুব খুশী হল। মেজ বৌ ওৎ পেতে বসেছিল। খাওয়া না শেষ হতেই বাড়ীর সকল ছেলেদের বাইরে নিয়ে এসে তাদের তেঁতুল কিনে খাওয়ালো, তার ফলে সন্তোষী মাতা সাবিত্রীর উপর ভীষণ রুষ্ট হলেন। বিপদ প্রতি পদক্ষেপে। পরদিন সকালে রাজার সেপাই এসে রামুকে ধরে নিয়ে গেল। কারণ কিছুই বোঝা গেল না। রামুর বৌদিগণ মনে মনে খুব খুশী হল, বিশেষ করে মেজবৌয়ের বুদ্ধির প্রশংসা সকলেই করল, রামুর মা ব্যাপারটা আগাগোছা জানতে সাবিত্রীর কাছে এল, তার পর বললো, চুরি করা টাকা নিয়ে বড়লোকী টিকবে কেন, সুখে থাকতে ভূতে ধরলো, এবার বাছাধন জেল খেটে মরুক।প্রতি দিনের মত সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে সাবিত্রী মায়ের মন্দিরে ঢুকলো। গলায় কাপড় দিয়ে মাথা ঠুকে দেবীর চরণে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল, মাগো! অজানিত অপরাধ মার্জনা কর। কোন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলে আমায় মুক্তি দেবে। বলে দাও জননী। আমার বুকের রক্ত দিয়ে পুনরায় ব্রত উদযাপন করবো।হঠাৎ মন্দির আলোকিত হয়ে উঠল। বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে দেবী বললেন, আমার ব্রতের নিয়ম ভঙ্গ করার শাস্তি দিয়েছি। সাবিত্রী করজোড়ে বললো, ইচ্ছাকৃত অপরাধ কিছুই আমি করিনি মা, অজ্ঞানে যদি অন্যায় করি, তার জন্য অভাগিনীকে ক্ষমা কর দেবী।
—দেবী বললেন, ভোজন শেষে বালকদের হাতে পয়সা দিয়েছিলি কেন?
তোর জায়েরা যুক্তি করে সেই পয়সা তেঁতুল কিনে বাচ্ছাদের খেতে দেয়। তাতেইআমি রুষ্ট হয়ে তোর স্বামীকে রাজার লোক পাঠিয়ে ধরে নিয়ে গেছি। —বেশ, আমি আবার তোমার ব্রতউদ্যাপন করবার আয়োজন করবো। আর বালকদের পয়সা দিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবো না। টক্ জাতীয় দ্রব্য কাউকে খেতে দেবো না। তুমি এবারের মত ক্ষমা কর মা।
—কিন্তু আর যেন ভুল না হয়। তুই ঘরে ফিরে যা। তোর স্বামীকে রাজা সম্মানে বাড়ী পাঠিয়ে দেবে এই বলে দেবী অন্তর্ধান হলেন।সেই রাতই সন্তোষী মাতা রাজাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন। তোর কয়েদ খানার নতুন বন্দীকে কাল প্রভাতেই মুক্তি দিবি সে চোর নয় প্রকৃত ব্যবসায়ের টাকায় বড়লোক। আর আমার পরম ভক্ত ব্রতী সাবিত্রীর জন্যে তোর কিছু ধান জমিন দান পত্র লিখে দিবি। দেখিস্ আমার আদেশ অগ্রাহ্য করিস না। আমিই তোর ভাগ্য লক্ষী! তোর মঙ্গল হবে! স্বপ্ন দেখে রাজা অস্থির হয়ে উঠলেন। ভোর হতেই কয়েদঘর হতে রামুকে সসম্মানে বাইরে এনে, সব কিছু পরিচয় নিয়ে তাকে লোক দিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে সম্মানের সঙ্গে বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন। এরপরে সাবিত্রীর নামে বেশ কিছু জমি জায়গা দানপত্রে লিখে দিলেন।

সাবিত্রী স্বামীর আগমনের সঙ্গেই পুনরায় ব্রতউদ্যাপনের আয়োজন করল। এবারে সাবিত্রী অতি সতর্কভাবে ব্রতউদ্যাপন করল। টক্ বা পয়সার জন্যে ছেলেরা বায়না ধরেছিল, তাদের সান্ত্বনা দিয়ে ভাল ভাল ফলমিষ্টি খাইয়ে সন্তুষ্ট করল। দেবী সাবিত্রীর পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে বৎসরের মধ্যেই চাঁদের মত টুকটুকে পুত্র সন্তান দিল, ধনে পুত্রে সাবিত্রী এখন সুখের মুখ দেখলো।

রামু আবার বিদেশে ফিরে গিয়ে ব্যবসায় মন দিল, প্রতি মাসে সন্তোষীর টাকা মায়েদের টাকা পাঠায়, বছরে একবার বাড়ী আসে। সাবিত্রী মনের আনন্দে ছেলেকে নিয়ে প্রতিদিন দেবী মন্দিরে বেড়াতে যেতো।

জয় মা শ্রীশ্রীসন্তোষীমাতার পিডিএফ ডাউনলোড করুন নিচের লিঙ্ক থেকে 👇

সন্তোষী মা ব্রতকথা পাঁচালী PDF⬇️

#tag;সন্তোষী মা ব্রতকথা পাঁচালী
সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা পাঁচালী
সন্তোষী মা ব্রতকথা পাঁচালী pdf
সন্তোষী মাতার পাঁচালী
সন্তোষী মার পাঁচালী
সন্তোষী মাতার ব্রত কথা
সন্তোষী মাতার পূজা পদ্ধতি
মা সন্তোষীর পাঁচালী
মা সন্তোষী ব্রত কথা
সন্তোষী মায়ের ব্রতকথা 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url