ঘোমটা দেওয়ার প্রচলন
ধর্মে মেয়েদের ঘোমটা দেওয়ার প্রচলন কি অন্য কোনো জাতির থেকে প্রভাবিত হয়ে এসেছে নাকি আগে থেকেই ছিল?এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের একটু ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা দরকার। আসুন জেনে নেই সঠিক তথ্য।
সনাতন ধর্মে প্রতিটি মানুষকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্যই ঈশ্বর আমাদের একই বিধান দিয়েছেন। ছেলের জন্য এক বিধান আর মেয়ের জন্য আরেক বিধান - এমন পক্ষপাতিত্ব ঈশ্বর করেন না।
![]() |
ঘোমটা দেয়া ছবি-সংগৃহীত |
যেমন:
ঋগ্বেদে (৮/৩৩/১৯) বলা হয়েছে “হে পুরুষ ও নারী গন! তোমাদের পোশাক, দৃষ্টি সর্বদা ভদ্র ও অবনত হোক। সংযত হোক তোমাদের চলন ,পোশাকে আবৃত হোক দেহ, পরিত্যাগ হোক নগ্নতা।।”
মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত নির্দেশনা। মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের জন্য একই নির্দেশনা।
শ্রীরামচন্দ্র বলেছেন: “পোষাক নয়, চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ।” (বাল্মীকী রামায়ণ: ৬/১১৪/২৭)
পর্দা করলেই কোন নারী সতী নয়, যদি সেই নারীর চরিত্র ভালো না হয়। পর্দা করলেই কোন নারী সেইফ নয়, যদি পুরুষের দৃষ্টি ভদ্র ও অবনত না হয়। ছেলে মেয়ে উভয়ের চলন সংযত না করতে পারলে পর্দার ভিতর ঢুকে গেলেও কোন লাভ নেই।
পরিশেষে বলা যায়, এই ঘোমটা দেওয়ার রীতির সম্পর্কে কোন সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, পুরাণ বা হিন্দু ধর্ম সংক্রান্ত কোনও গ্রন্থেই । যাঁরা এব্যাপারে গবেষণা করেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন ধর্মীয় এমন কোনও প্রথার উল্লেখ কোথাও নেই। এমনকি কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও নেই এর পিছনে। তবে কেন এই রীতি? নেহাতই প্রচলন বলেই হয়ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই রীতি মেনে আসছেন হিন্দু মহিলারা।
অনেক বিতর্কও রয়েছেএই ঘোমটা প্রথা নিয়ে। হয়ত কোনও এক সময় সম্মান প্রদর্শনের একটি পন্থা ছিল এই ঘোমটা দেওয়া। তবে অনেক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ধুলোবালি থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘোমটা দেওয়ার রীতি এসেছিল। আর পুজোর সময় ঘোমটা দেওয়ার কারণ হল, এর ফলে মহিলাদের মাথার চুল ঠিক জায়গায় আটকে থাকে। মন্দিরে বা পুজোর উপাচারে চুল স্পর্শ করে না। পরের দিকে নিরাপত্তার কারণে মহিলাদের মাথা একে রাখার প্রথা চালু হওয়ার কথাও জানা যায়।
তবে কোন শক্তিশালী যুক্তি নেই এসবের পিছনে তেমন । সেই কারণে দক্ষিণ ভারতীয় মহিলারা কখনও প্রার্থনার সময় মাথায় ঘোমটা দেন না। কারণ তাঁদের মতে, এই রীতির সঙ্গে হিন্দু ধর্মের কোনও যোগ নেই। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও এর কোনও যোগ নেই।