গৃহপালিত পশুর ঘাস সংরক্ষণের সহজ পদ্ধতিসমূহ

প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প আওতায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল ,রাজারহাট,কুড়িগ্রাম  অফিসের আওতায় ছোট,বড়,মাঝারি খামারি সহ নতুন উদ্দোক্তাদের ঘাস চাষে আগ্রহী করতে এবং  সংকট ময় সময়ে ঘাস সংরক্ষণ করে প্রাণিপুষ্টির মান উন্নত করতে সহোযোগিতা করে আসছে।

ঘাস সংরক্ষণ  পদ্ধতিসমূহঃ

সাধারনত দুই পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ক। সাইলেজ পদ্ধতি 
খ। হে পদ্ধতি 

গবাদিপশুর ঘাস সংরক্ষণের পদ্ধতি
গবাদিপশুর ঘাস সংরক্ষণের পদ্ধতি


সাইলেজ

সাইলেজ বলতে আমরা বুঝি রসাল অবস্থায় ফুল আসার সময় সবুজ ও সতেজ ঘাসকে কেটে টুকরা করে সেগুলো বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে। বাণিজ্যিকভাবে সাইলোপিটে সাইলেজ সংরক্ষণ করা হয়। ভুট্টা, সরগাম, আলফা আলফা থেকে প্রস্তুতকৃত সাইলেজে বেশি পরিমাণে শক্তি পাওয়া যায়।

সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা :
» পুষ্টিমান অক্ষুন্ন থাকে দীর্ঘ দিন ।

» সঠিক সময়ে ঘাস কেটে সেগুলো কার্যকরী খাবার হিসাবে গবাদিপশুকে পরবর্তী যেকোনো সময় সরবরাহ করা যায়।

» এতে হে-এর তুলনায় কম পুষ্টিমান অপচয় হয়ে থাকে ।
» সাইলেজ তৈরির ফলে ঘাস ও  ঘাসের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।
» সাইলেজ ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়াতেও তৈরি করা যায়।

সাইলেজ তৈরির পদ্ধতি :

প্রায় সব ধরনের ঘাস দিয়ে সাইলেজ তৈরি করা গেলেও ভুট্টা ও আলফা-আলফা দিয়ে তৈরি সাইলেজ অত্যন্ত উন্নত মানের হয়। ভুট্টার সাইলেজ গবাদি পশু বিশেষ করে দুধাল গাভীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভুট্টার সাইলেজে সবচাইতে বেশি পরিমাণে শক্তি উপাদান থাকে।তাই সবচেয়ে কৃষকের বেশি পছন্দ ভুট্টার সাইলেজ।

ভুট্টার দানার গোড়ায় কালো দাগ আসার সাথে সাথে সাইলেজ প্রস্তুতের জন্য ভুট্টা কাটার উপযোগী হয়। এ সময়ে ভুট্টা গাছের শুল্ক পদার্থের পরিমাণ ৩০-৩৫% হয়। ভুট্টা গাছগুলোকে ভূমি থেকে ১০-১২ সে.মি. উঁচুতে কাটা হয়। এরপর এগুলোকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। টুকরা করা ঘাস গর্তে বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বর্তমানে গর্তের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে তৈরি বড় আকারের ব্যাগে সংরক্ষণ করা যায়। টুকরা করা গাছগুলো ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে বায়ু মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে বাতাস চলাচল করতে না পারে। এভাবে সংরক্ষণ করলে কোনো পুষ্টি উপাদান না হারিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো সময়ে পশুকে সরবরাহ করা যায়।

সাইলেজ তৈরির সময় গাছ টুকরা করা ও বায়ুরোধী করার উদ্দেশ্য :

» গাঁজনের জন্য বেশি পরিমাণে গাছের সুগার অবমুক্ত হতে পারে।

» বায়ুরোধী হলে সুষ্ঠুভাবে গাঁজন সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়।

কোন খাদ্য উপাদানের অপচয় ব্যতিরেকে ঘাস সংরক্ষণের জন্য এটা একটা কার্যকর ব্যবস্থা। সাইলেজ বায়ুরোধী পরিবেশে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ অক্ষুন্ন রেখে ক্ষতিকর ইস্ট, মোল্ড, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দীর্ঘদিন রক্ষা করে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।

হে

হে অতি পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত খাদ্য যা সারা বছর গবাদিপশুকে সরবরাহ করা যায়। সবুজ ঘাসকে শুকিয়ে এর আদ্রর্তা ২০% বা তার নিচে নামিয়ে এনে হে প্রস্তুত করা হয়। হে তৈরির জন্য এক বা একাদিক লিগিউম জাতীয় ঘাস চাষ করা যায়। লিগিউম ঘাসে সাধারণ ঘাসের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। লিগিউম গাছের মূলে রাইজোবিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন ধরে রাখে যা প্রোটিন গঠনের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে লিগিউম ছাড়াও সাধারণ ঘাস দিয়ে হে তৈরি করা যেতে পারে।

গুণগত মানের হে-এর বৈশিষ্ট্য:

হে এর খাদ্যমান ঘাসের গুণগতমানের উপর নির্ভর করে। হে-এর গুণগতমান ঘাসের পূর্ণতাপ্রাপ্তি, পাতার পরিমাণ, ঘাসের রং প্রভৃতি দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।

» হে এর জন্য ব্যবহৃত ঘাস পাতা সমৃদ্ধ হতে হবে। হে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুষ্ক হতে হবে। পাতার পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে দুই-তৃতীয়াংশ পুষ্টি উপাদান পাতার মধ্যে থাকে।

» হে উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হতে হবে যাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকে। বেশি আর্দ্রতা থাকার কারণে বা অত্যধিক তাপের কারণে হে বাদামি বর্ণের হতে পারে যেটা পুষ্টি উপাদান কমে যাওয়ার নির্দেশনা হিসাবে বিবেচিত হবে।

» হে আগাছামুক্ত হতে হবে।

» হে মোল্ড ও ধুলা বালিমুক্ত হতে হবে।

» এতে খাওয়ার উপযোগী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ থাকতে হবে।

হে তৈরির পদ্ধতি :

গাছ কাটার সময় :
হে তৈরির জন্য সঠিক পূর্ণতা প্রাপ্তির সময়ে গাছ কাটতে হবে। যত কম বয়সে গাছ কাটা যাবে, হে এর গুণগতমান তত বেশি হবে। যত বেশি বয়সে গাছ কাটা হবে, হে এর গুণগতমান তত কমে যাবে। তবে ফুল আসার সময় কাটাই উত্তম।

সঠিকভাবে শুকানো :
হে তৈরির সময় গাছকে সঠিকভাবে শুকাতে হবে যাতে করে মোল্ড মুক্ত ও অতিরিক্ত তাপমুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। গাছগুলোকে দ্রুত শুকাতে হবে এবং অতিরিক্ত সূর্যের আলো পরিহার করতে হবে যাতে করে ভালো মানের হে এর বৈশিষ্ট্যগুলো ধরে রাখা যায়। গাছ কেটে রৌদ্রে উল্টাপাল্টা করে এমনভাবে নেড়ে দিতে হবে যাতে করে অতিমাত্রায় পাতা ঝরে না যায়। সবুজ ঘাসে সাধারণত ৭৫-৮০ ভাগ আর্দ্রতা থাকে। যেখানে ভালো মানের হে তে সর্বোচ্চ ২০-২৫ ভাগ আর্দ্রতা থাকে। রোদে শুকানোর সময় বৃষ্টির পানিতে ভেজানো যাবে না।

হে সংরক্ষণ: হে অবশ্যই শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে।


উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল 
রাজারহাট,কুড়িগ্রাম। 
মাধব সরকার 
কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট(CEA)


Next Post Previous Post
3 Comments
  • Fuck You
    Fuck You June 6, 2022 at 8:18 AM

    পুরাই মাখন


    Fuck u
    Free porn dekho

    Ah ahh ahh ahhhh

  • নামহীন
    নামহীন June 6, 2022 at 8:19 AM

    🖕🖕🖕🖕🖕🖕

  • Byomkesh
    Byomkesh June 6, 2022 at 8:20 AM

    এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

Add Comment
comment url