অনুগীতা কি ? what's Anugita

অনুগীতা একটি প্রাচীন সংস্কৃত পাঠ্য যা হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের বই ১৪ (অশ্বমেধিকা পর্ব) এ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুগীতার আক্ষরিক অর্থ হল গীতার অনু ("চলমান, পাশাপাশি, অধীনস্থ")। মূলটি সম্ভবত ৪০০ BCE এবং ২০০ BCE এর মধ্যে রচনা করা হয়েছিল, তবে এর সংস্করণগুলি সম্ভবত ১৫- বা ১৬-শ শতাব্দীর মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছিল। এটিকে হিন্দুরা ভগবত গীতার একটি পরিশিষ্ট হিসাবে বিবেচনা করে যা বই ৬ এ পাওয়া যায়। অনুগীতা হল ধর্মের (নৈতিকতা, নৈতিক অনুশাসন) সংক্রান্ত গ্রন্থগুলির মধ্যে একটি। অনুগীতা হল, ভগবদ্গীতায় প্রাপ্ত পাতিত দর্শনের পরিবর্তে কিংবদন্তি এবং উপকথার মাধ্যমে ভগবদ্গীতার কিছু নীতিগত প্রাঙ্গনের পুনরুক্তি। এটিতে বৈশম্পায়নের একটি সারসংক্ষেপ রয়েছে যিনি মহাভারত যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে অর্জুনের সাথে কৃষ্ণের কথোপকথন শুনেছিলেন এবং মনে রেখেছিলেন। তারা নৈতিকতা এবং নৈতিকতার পাশাপাশি অস্তিত্বের প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এটি মহাভারতে পাওয়া অসংখ্য সংলাপ ও বিতর্কের মধ্যে একটি। এর ১৪ বইয়ের ছত্রিশটি অধ্যায় (XVI থেকে LI পর্যন্ত) সমন্বিত পাঠটিতে প্রাচীন মুখ্য উপনিষদে পাওয়া অনেক তত্ত্ব রয়েছে।
অনুগীতা
অনুগীতা কি? 


#আজকাল কিছু কৃষ্ণবিদ্বেষী ও নব্য আর্য্যের সদস্য বলে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারন মানুষ ও যোগীপুরুষ ছিলেন। তিনি যোগযুক্ত হয়ে অর্জুনকে গীতা বলেছেন এবং যোগমুক্ত হলে তিনি গীতার জ্ঞান ভুলে গেছেন তাই শ্রীকৃষ্ণ পূনরায় গীতা বলতে অস্বীকার করেন ! কত মিথ্যুক তারা। আসুন বিচার করি।

#লক্ষ্যণীয় যে, যোগ শব্দের নানা প্রকার অর্থ আছে ৷ এখানে কোন অর্থে যোগ-শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা স্পষ্ট লেখা আছে—
‘যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন’ (ভারতকৌমুদী টীকা)
অর্থাৎ এখানে যোগযুক্ত অর্থ একাগ্রতার সহিত ৷
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহাভারত যুদ্ধে অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবুদ্ধ করার জন্য একাগ্রতার সহিদ যে সকল বাক্য (জ্ঞান) ব্যবহার করেছিল কিন্তু তা আবার পুনরাবৃত্তি করবেন কিসের জন্য/নিমিত্তে?

তাছাড়া অর্জুন তার দুর্বল মেধাবশত গীতা ভুলে গেছেন ,  সে যে আবার ভুলে যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কি তাকে পুণরায় গীতা বললেও?

✔️তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “আমি সেই বিষয়ে তোমাকে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি ৷” অর্থাৎ সেই গীতাজ্ঞানই তিনি প্রকারন্তরে ইতিহাস গল্পের মাধ্যমে বলিবেন ৷ কেননা গল্পের মাধ্যমে যদি খুব কঠিন বিষয়ও আলোচনা করা হয়, তবে সেটা খুব সহজেই মনে রাখতে পারা যায়। এই জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই উপায়টি অবলম্বন করেন। পরবর্তীতে গীতাজ্ঞান জ্ঞান এইরুপে ভিন্নভাবে কথিত হওয়ায় একে ‘অনুগীতা’ বলা হয় ৷

#অনুগীতা প্রদানের পর ভগবান বলিলেন—
পূর্বমপ্যেতদেবোক্তং যুদ্ধকাল উপস্থিতে।
ময়া তব মহাবাহো তস্মাদত্র মনঃ কুরু।।
(অশ্বমেধিকপর্ব, ৬৬/৭)
“মহাবাহু! পূর্বেই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় উপস্থিত হইলে, আমি তোমার নিকট ভগবদগীতাস্বরূপ এই বিষয়ই বলিয়াছিলাম, অতএব তুমি এই বিষয়ে মনোনিবেশ কর।”

অতএব ভগবান যদিও সরাসরি ভাবে অর্জুনকে পুনরায় গীতা জ্ঞান প্রদান করতে অসম্মতি জানান  এইটা সুস্পষ্ট যে তবুও ইতিহাসের মাধ্যমে ভগবান এখানে গীতার বিষয়ই তুলে ধরেছেন, যাতে করে আয়ত্ত করতে পারে  অর্জুন সেই জ্ঞানটা  ৷

অন্ধের হস্তিদর্শনের ন্যায় কিছু অকাল-কুষ্মান্ড মূর্খ এইরুপে সমগ্র বিষয়টি বুঝতে না পেরে বলে থাকে যে,  সাধারণ মানুষ মাত্র স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ গীতা বিস্মৃত হয়েছিলেন তিনি,  তাঁহার নিজস্ব উক্তি নয় গীতা,  পরমাত্মার সহিত যোগযুক্ত হয়ে উহা বলেছিলেন তিনি ৷

#সেই মূর্খদের উদ্দেশ্যে বলিতেছি, আপনারা যে অশ্বমেধপর্বের রেফারেন্স দিয়ে ঐসকল কথা বলিতেছেন, ঐ অশ্বমেধপর্বেই যুধিষ্টির শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে কি বলিতেছে দেখুন—
“হে বিশ্বাত্মন! হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ!  হে বিশ্বকর্মন!তোমাকে যেরূপ ধারণা করি আমি মনে মনে ,  তোমাকে সেইরুপই জানিতেছি কার্য্যদ্বারাও।”
“প্রভু মধুসূদন! তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হন  সর্বদাইঅগ্নি এবং  তোমারই ক্রিয়াস্বরূপা হলো রতি, আর তোমারই মায়া হলো স্বর্গ ও মর্ত ।”
(মহাভারত, অশ্বমেধিকপর্ব ৬৭/৮-৯)
.
অতএব—
যশ্চ মানুষমাত্রোহ‘য়মিতি ব্রুয়াৎ স মন্দধীঃ ৷
হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহু পুরষাধমম্ ৷৷
অর্থ—অজ্ঞানবশতঃ যে লোক  এই হৃষীকেশকে মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি,  ‘নরাধম’ বলিবে সকলে তাকে৷
(মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৬৫/১৯)
.
সবশেষে—
সারথ্যমর্জুনস্যাজৌ কুর্ব্বন গীতামৃতং দদৌ ৷
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ ব্রহ্মাত্মনে নমঃ ৷৷
অর্থঃযিনি মহাভারতের যুদ্ধের সময়  অর্জুনের সারথ্য করিতে প্রবৃত্ত হইয়া, অর্জুনকে গীতামৃত দান করিয়াছেন সেই  পরমব্রহ্মরূপী  কৃষ্ণকে নমষ্কার করি  ত্রিভূবনের উপকার করিবার জন্য ।
(মহাভারত, শান্তিপর্ব ৪৬/১০৬)
[Reference book: মহাভারত, হরিদাশ সিদ্ধান্তবাগীশ]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url