শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল

গীতা ৭০০টি শ্লোক নিয়ে ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।আসুন জেনে নেই শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল।

১ অর্জুন বিষাদ-যোগ :
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে সেনা-পর্যবেক্ষণ: রণাঙ্গনে প্রতীক্ষমাণ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে, মহাযোদ্ধা অর্জুন উভয় পক্ষের সৈন্যসজ্জার মধ্যে সমবেত তার অতি নিকট আত্মীয়-পরিজন, আচার্যবর্গ ও বন্ধু-বান্ধবদের সকলকে যুদ্ধে প্রস্তুত হতে এবং উন্মুখ হয়ে থাকতে দেখেন জীবন বিসর্জনে । তিনি যুদ্ধ করার সংকল্প পরিত্যাগ করেন কারন শোকে ও দুঃখে তার মন মোহাচ্ছন্ন হল।

২ সাংখ্য যোগ :
অর্জুন আত্মসমর্পণ করেন কৃষ্ণের কাছে তার শিষ্যরূপে  এবং অনিত্য জড় দেহ ও শাশ্বত চিন্ময় আত্মার মূলগত পার্থক্য নির্ণয়ের মাধ্যমে অর্জুনকে কৃষ্ণ উপদেশ প্রদান করতে শুরু করেন। কৃষ্ণ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন দেহান্তর প্রক্রিয়া, পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃতি এবং আত্মজ্ঞানলব্ধ মানুষের বৈশিষ্ট্যাদি সম্পর্কে ।

শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল
শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল


৩ কর্ম যোগ :
এই জড় জগতে প্রত্যেককেই কোনও ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু কর্ম সকল মানুষকে এই জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করতেও পারে, আবার তা থেকে মুক্ত করে দিতেও পারে। স্বার্থচিন্তা ব্যতিরেকে, পরমেশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে কাজের মাধ্যমে, মানুষ তার কাজের প্রতিক্রিয়া জনিত কর্মফলের বিধিনিয়ম থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং আত্মতত্ত্ব ও পরমতত্ত্ব দিব্যজ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়।

৪ জ্ঞান যোগ :
আত্মার চিন্ময় তত্ত্ব, ভগবৎ-তত্ত্ব এবং ভগবান ও আত্মার সম্পর্ক -এই সব অপ্রাকৃত তত্ত্বজ্ঞান বিশুদ্ধ ও মুক্তিপ্রদায়ী। এই প্রকার জ্ঞান হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভক্তিমূলক কর্মের (কর্মযোগ) ফলস্বরূপ। পরমেশ্বর ভগবান গীতার সুদীর্ঘ ইতিহাস, জড় জগতে যুগে যুগে তার অবতরণের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য এবং আত্মজ্ঞানলব্ধ গুরুর সান্নিধ্য লাভের আবশ্যকতা ব্যাখ্যা করেছেন।

৫ সন্ন্যাস-যোগ :
শান্তি, নিরাসক্তি, চিন্ময় অন্তর্দৃষ্টি এবং শুদ্ধ আনন্দ লাভ করেন কারন বহিঃবিচারে সকল কর্তব্যকর্ম সাধন করলেও সেগুলির কর্মফল পরিত্যাগ করার মাধ্যমে, জ্ঞানবান ব্যক্তি পারমার্থিক জ্ঞানতত্ত্বের অগ্নিস্পর্শে পরিশুদ্ধি লাভ করে থাকেন।

৬ ধ্যানযোগ :
নিয়মতান্ত্রিক ধ্যানচর্চার মাধ্যমে অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলন মন ও ইন্দ্রিয় আদি দমন করে এবং অন্তর্যামী পরমাত্মার চিন্তায় মনকে নিবিষ্ট রাখে।এই অনুশীলনের পরিণামে পরমেশ্বরের পূর্ণ ভাবনারূপ সমাধি অর্জিত হয়।

৭ জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগ :
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমতত্ত্ব, সর্বকারণের পরম কারণ এবং জড় ও চিন্ময় সর্ববিষয়ের প্রাণশক্তি। উন্নত জীবাত্মাগণ ভক্তি ভরে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, পক্ষান্তরে অধার্মিক জীবাত্মারা অন্যান্য বিষয়ের ভজনায় তাদের মন বিক্ষিপ্ত করে থাকে।

৮ অক্ষরব্রহ্মযোগ :
মানুষ জড় জগতের ঊর্ধ্বে ভগবানের পরম ধাম লাভ করতে পারে আজীবন কৃষ্ণের চিন্তার মাধ্যমে এবং বিশেষ করে মৃত্যুকালে তাকে স্মরণ করে।

৯ রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ :
কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং পরমারাধ্য বিষয়। অপ্রাকৃত ভগবত-সেবার মাধ্যমে জীবাত্মা মাত্রই তার সাথে নিত্য সম্বন্ধযুক্ত। মানুষের শুদ্ধ ভক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ফলে শ্রীকৃষ্ণের পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব।


১০ বিভূতি যোগ :
জড় জগতের বা চিন্ময় জগতের শৌর্য, শ্রী, আড়ম্বর, উতকরশ-সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় কৃষ্ণের দিব্য শক্তি ও পরম ঐশ্বর্যাবলির আংশিক প্রকাশ মাত্র অভিব্যক্ত হয়ে আছে। সর্বকারণের পরম কারণ, সর্ববিষয়ের আশ্রয় ও সারাতিসার রূপে কৃষ্ণ সর্বজীবেরই পরমারাধ্য বিষয়।

১১ বিশ্বরূপ দর্শন যোগ :
কৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্যদৃষ্টি দান করেন এবং সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষক তার অনন্ত বিশ্বরূপ প্রকাশ করেন। এভাবেই তিনি তার দিব্যতত্ত্ব অবিসংবাদিতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কৃষ্ণ প্রতিপন্ন করেছেন যে, তার স্বীয় অপরূপ সৌন্দর্যময় মানবরূপী আকৃতিই ভগবানের আদিরূপ। একমাত্র শুদ্ধ ভগবত-সেবার মাধ্যমেই মানুষ এই রূপের উপলব্ধি অর্জনে সক্ষম।

১২ ভক্তিযোগ :
ভক্তিযোগ বা কৃষ্ণের উদ্দেশ্য শুদ্ধ ভক্তি হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা চিম্নয় জগতের সর্বোত্তম প্রাপ্তি বিশুদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম লাভের পক্ষে। তারা দিব্য গুণাবলীর অধিকারী হন যারা এই পরম পন্থার বিকাশ সাধনে নিয়োজিত থাকেন।

১৩ ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ :
পরমাত্মার পার্থক্য যিনি উপলব্ধি করতে পারেন দেহ, আত্মা এবং উভয়েরও ঊর্ধ্বে , তিনিই মুক্তি লাভে সক্ষম হন এই জড় জগৎ থেকে।

১৪ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ :
সত্ত্ব, রজ ও তম—জড়া প্রকৃতির এই ত্রিগুণের নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত দেহধারী জীবাত্মা মাত্রই। পরমেশ্বর কৃষ্ণ এই ত্রিগুণাবলির স্বরূপ, আমাদের ওপর সেগুলির ক্রিয়াকলাপ, মানুষ কিভাবে সেগুলিকে অতিক্রম করে এবং যে মানুষ অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত তার লক্ষণাবলী ব্যাখ্যা করেছেন।

১৫ পুরুষোত্তম-যোগ :
জড়-জাগতিক বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তি লাভ এবং পরম পুরুষোত্তম ভগবানরূপে কৃষ্ণকে উপলব্ধি করাই বৈদিক জ্ঞানের চরম উদ্দেশ্য হচ্ছে। যে মানুষ কৃষ্ণের পরম স্বরূপ উপলব্ধি করে, সে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ভক্তিমূলক সেবায় আত্মনিয়োগ করে।

১৬ দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ :
যারা আসুরিক গুণগুলি অর্জন করে এবং শাস্ত্রবিধি অনুসরণ না করে যথেচ্ছভাবে জীবন যাপন করে থাকে, তারা হীনজন্ম ও ক্রমশ জাগতিক বন্ধনদশা লাভ করে। কিন্তু যারা দিব্য গুণাবলির অধিকারী এবং বিধিবদ্ধ জীবন যাপন করেন শাস্ত্রীয় অনুশাসনাদি মেনে , পারমার্থিক সিদ্ধিলাভ করেন তারা ক্রমান্বয়ে ।

১৭ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ :
মন জড় প্রকৃতির ত্রিগুণাবলির থেকে উদ্ভূত এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রদ্ধা তিন ধরনের হয়ে থাকে। যাদের শ্রদ্ধা রাজসিক ও তামসিক, তারা নিতান্তই অনিত্য জড়-জাগতিক ফল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে, শাস্ত্রীয় অনুশাসন হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে আদি মতে অনুষ্ঠিত সত্ত্বগুণময় কার্যাবলি এবং পরিণামে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি-শ্রদ্ধার পথে মানুষকে পরিচালিত করে যার ফলস্বরূপ  ভক্তিভাব জাগ্রত করে তোলে।

১৮ মোক্ষযোগ :
কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন ত্যাগের অর্থ এবং মানুষের ভাবনা ও কার্যকলাপের উপর প্রকৃতির গুণাবলির প্রতিক্রিয়াগুলি কেমন হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ব্রহ্ম উপলব্ধি, ভগবদগীতার মাহাত্ম্য ও গীতার চরম উপসংহার- পরমেশ্বর কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত  আত্মসমর্পণ হচ্ছে ধর্মের সর্বোচ্চ পন্থা , যার ফলে সর্বপাপ হতে মুক্তি লাভ হয়, শাশ্বত চিন্ময় পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা যায় এবং সম্যক জ্ঞান-উপলব্ধি অর্জিত হয়।

ব্রহ্ম কহিলেন, গীতার  প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল

১| প্রথম অধ্যায়ঃ লোকের মন পবিত্র হয় প্রথম অধ্যায় পাঠ করিলে ।।

২।দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ নির্মলতা লাভ করে দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠে।।

৩।তৃতীয় অধ্যায়ঃ সর্বপাপ দূর হয় তৃতীয় অধ্যায় পাঠে।।

৪।চতুর্থ অধ্যায়ঃকরিলে ব্রহ্মহত্যা ও স্ত্রীহত্যাজনিতপাপ তৎক্ষণাৎ দূর হইয়া থাকে চতুর্থ অধ্যায় পাঠে।।

৫।পঞ্চম অধ্যায়ঃ পঞ্চম অধ্যায় পাঠ করিলে চৌর্যমহাপাপ দূর হয়।।

৬।ষষ্ঠ অধ্যায়ঃগীতা ৭০০টি শ্লোক নিয়ে ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।

৭।সপ্তম অধ্যায়ঃ  সপ্তম অধ্যায় পাঠে বুদ্ধি নির্মলতা লাভ করে।।

৮।অষ্টম অধ্যায়ঃ অখাদ্য ও অপেয়জাত সকল প্রকারপাপ দূর হয় অষ্টম অধ্যায় পাঠে।।

৯।নবম অধ্যায়ঃ পৃথিবী দানের মত সমপূর্ণ লাভ হয় নবম অধ্যায় পাঠে।।

১০।দশম অধ্যায়ঃ দশম অধ্যায় পাঠে সর্বপাপ বিনষ্ট হইয়া শ্রেষ্ঠ জ্ঞানজন্মে।।

১১।একাদশ অধ্যায়ঃ একাদশ অধ্যায় পাঠে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়ে মুক্তি লাভহয়।।

১২।দ্বদশ অধ্যায়ঃ দ্বদশ অধ্যায় পাঠে ভগবান বিশুদ্ধ ভক্তি জন্মে।।

১৩।ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানচক্ষু বিকাশ তাহার শক্তিলাভহয়।।

১৪।চতুর্দশ অধ্যায়ঃ অশ্বমেদি যজ্ঞের যে মহাফলতা লাভ হয় চতুর্দশ অধ্যায় পাঠে।।

১৫।পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠে নির্মল জ্ঞন লাভ করিয়া যোগীহওয়া যায়।।

১৬।ষোড়শ অধ্যায়ঃ মানব সংসার বন্ধন হইতে মুক্তিলাভকরে ষোড়শ অধ্যায় পাঠে ।।

১৭।সপ্তদশ অধ্যায়ঃ ভক্তজনের রাজপেয় নামকযজ্ঞের ফল লাভ করে সপ্তদশ অধ্যায় পাঠে ।।

১৮।অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ জ্ঞানরূপ অগ্নি দ্বারা পাপ দূর হয় অষ্টাদশ অধ্যায় পাঠে। পাঠে মন্দ ভাগ্য নাশ হয়।।

#tag:শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল কী,শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যায় পাঠের ফল কী,প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল,শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফল,শ্রীমদ্ভগবদগীতার পাঠের ফল,শ্রীমদ্ভগবদগীতার পাঠের ফল কী,গীতার কোন অধ্যায় পাঠের কি ফল,গীতার কোন অধ্যায় পাঠের কি ফল,গীতার কোন অধ্যায় পাঠের কি?,গীতার ১৮ অধ্যায় পাঠের ফল,গীতার কোন অধ্যায় পাঠের কোন ফল


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url