ধর্ম না মানবতা কোনটি আগে?
মানবতা বড় নাকি ধর্ম,মানবতা না ধর্ম,মানবতা না ধর্ম আগে,মানবতা আগে না ধর্ম আগে,ধর্ম বনাম মানবতা,ধর্ম ও মানবতা,ধর্ম মানেই মানবতা,মানুষ না মানবতা,
— এই প্রসঙ্গে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ধর্মের চাইতে মানবতাই বড় । এ ক্ষেত্রে সাধারণ যুক্তি হলো— আগে মানুষ এসেছে এবং তার পরে তাকে বিধান দেয়া হয়েছে; আগেই বিধান নাজিল করে রাখা হয় নি । আর গভীর কথাটা হলো— আমি যদি নিজেকে মুসলিম বলি, তাহলে হয়তো আমি পৃথিবীর ১৫০ কোটি মানুষকে সাথে পাবো । কিন্তু আমি যদি বলি আমি মানুষ, তাহলে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ বা পৃথিবীর তাবৎ জনগোষ্ঠীর কথাই আমার বলা হবে । আমার কাছে ১৫০ কোটির চেয়ে অবশ্যই ৭০০ কোটির স্বার্থ বড়— এখানে ধন্দের কী আছে !আমি ধর্ম ছেড়ে দেবো মানবতার জন্যে ? কিংবা মানবতা ও ধর্মের যখন দ্বন্দ্ব হবে, তখন কি আমি ধর্ম বাদ দিয়ে মানবতা গ্রহণ করবো ? কেউ আগ বাড়িয়ে হয়তো বলেও ফেলবেন— আপনি কি নাস্তিক ? ধর্মে বিশ্বাস করেন না ? তবে মূল প্রশ্নটা শুনতে কিন্তু যতো জটিল মনে হয়, আসলে ততোটা জটিল নয় ।
ধর্ম না মানবতা ছবি |
ধর্ম আর মানবতা কি সমার্থক? ব্যাখ্যা দিন। ধর্ম আর মানবতা বিপরীতার্থক। ধর্ম আসার পর থেকে মানবতা ভূলুণ্ঠিত। কারন মানব সেবা থেকে কল্পিত সৃষ্টিকর্তার সেবাকে ধর্মে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আর এই ফর্মালিটি আর দলভারী করতে গিয়ে ধার্মিকের সব টাকা পয়সা চলে যায়। তখন এরা মানুষের উপকার করতে পারে খুবই কিঞ্চিৎ। ধর্ম ধর্মপুুরুষদের অতিমূল্যায়ন করতে শিখায়। ধর্ম ধর্মপুরুষদের আনীত কতগুলি বিধিবিধান পালন করতে বলে। কিন্তু ধর্মপুরুষদের অতিমূল্যায়ন করতে গিয়ে সাধারন মানুষের অবমূল্যায়ন ঘটে। If you overesteem great men, people become powerless. overvalue পসসেসসিওন্স If you, people begin to steal. (Lao tzu: tao te ching chapter :3) যদি মহাপুরুষকে অতিরিক্ত বড় করো সাধারন মানুষ হয়ে পড়ে অসহায় রকম ছোট। যখন ধন সম্পদের অতিমূল্য প্রচার করো লোকে চুরি করতে প্রলুব্ধ হয়। ফলাফলঃ
১) মানুষ মানুষের জন্যে টাকা খরচ করে না। মানুষ মানুষের বিপদে দাড়ায় না। বরং ধর্মের সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে ব্যস্ত।
২) পাশের বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ছেলেটি মারা গেল আর লোকে দুই তিনবার করে বিন্দাবন,গয়া,গঙ্গা ইত্যাদি ভ্রমণ করে আসলো ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলো না।
৩) যারা অস্তিদানের জন্য গঙ্গা/ বিদেশ যায় তারা লাখ লাখ টাকা এর পিছনে খরচ করে।ঐ ব্যায় মিটাতে গিয়ে স্ত্রী সন্তান হুমকির মুখে পড়ে।
৪) ধার্মিক কখনো মানুষের উপকার করে না। টাকা হলে মন্দির বানায়। কারন ধার্মিক জানে মানুষের উপকারের চেয়ে মন্দির বানালে ধর্ম বেশি হবে লোকজনও ভালো ভাববে। ধার্মিক লোকটির স্ত্রীর দাতে প্রচন্ড ব্যথা। ধার্মিক ভাবলো দুনিয়া কয়দিনের। এসব ব্যাথা থাকবেই। রুট ক্যানেল করানোর দরকার নেই। বরং দুই হাজার টাকা মন্দিরে দান করি। বউ বরং নাপা খেয়ে ব্যাথা কমিয়ে রাখুক। দুনিয়া আসল নয়। পরকালই আসল।
৫) ধার্মিক কখনো মানুষের উপকার করে না। টাকা হলে গীতা বা অন্যান্য গ্রন্থ বিতরন করে হরিবাসরের আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে।। কারন ধার্মিক জানে মানুষের সমস্যা সারাজীবন থাকবে। তাই রোগীর চিকিৎসা করে লাভ কি? তার চেয়ে বরং হরিবাসর উছিলায় একজনকে ধার্মিক বানাতে পারলে কোটি কোটি বছর স্বর্গে থাকা যাবে।
ধর্ম মানে বৈশিষ্ট্য, স্বভাব, নিজের স্বাভাবিক রূপ। আর মানবতা অর্থ মনুষ্যত্ব, মানুষ হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ গুণ। একটা পশুরও ধর্ম থাকতে পারে, সে মাংসাশী বা নিরামিষভোজী, হিংস্র বা নিরীহ, আক্রমণাত্মক বা নিরাপদ। কিন্তু মানবতা জিনিসটা একটু আলাদা। এটা অনেক কিছু বোঝায়। নিজের স্বার্থ ছাড়া নিঃস্বার্থভাবে অন্য কারও উপকার করা, অভুক্তদের খাবার দেয়া, দরিদ্রদের অর্থসাহায্য করা, অসুস্থদের সেবা করা, বিপদে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা এসব ধর্ম নয়, মানবতা। এগুলো কেউ শেখাতে পারেনা, নিজের ভেতর থেকে আসতে হয়। একটা কুকুরেরও ধর্ম থাকে। মনিবের সেবা করা তার ধর্মেরই অংশ। কারণ সে জানে মনিব তাকে খাবার দেন, তার যত্ন নেন। এই স্বার্থটুকুর জন্য সে মনিবের পা ধরে থাকে। কিন্তু মানবতা তখন আসে, যখন মনের কোনও আকাঙ্খা ছাড়া কেউ অন্য কারও সাহায্য করে। যখন ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষ বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে পারে সেটা মানবতা। সোজা ভাষায়, ধর্ম একটা মৌলিক জিনিস, কিন্তু মানবতা অর্জন করতে হয়। ধার্মিক অনেকেই হতে পারে, কিন্তু মানবতা না থাকলে তাদের মানুষ বলা যায়না।
পরিশেষ— অর্টিজেনে হামলার পরে স্পষ্টতই সবাই একসুরে বলছেন, ধর্মীয় পড়াশুনার অভাবেই ছেলেগুলোকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়েছে । অর্থাৎ ধর্মের সঠিক জ্ঞান থাকলে এমন অমানবিক কাজ তাদের দিয়ে হতো না । বোঝা যায়, কেবল ধর্মের সঠিক বোধ ও অনুশাসনের মাধ্যমেই মানুষ সত্যিকারের মানবিক হতে পারে । সুতরাং ধর্মের চেয়ে মানবতা বড় হলেও মানবতা শেখার জন্যে ধর্মের চেয়ে বড় আর কিছু নেই ।