কলা বৌ কি এবং কেন এটা পূজা দেওয়া হয়?
কলা বৌ
কমবেশি আমরা সবাই জানি দুর্গা প্রতিমার কাঠামোয় কেবল দেবী দুর্গা নন, তার সঙ্গে আরো অনেক দেব-দেবীর প্রতিমা রয়েছে। দেবী দুর্গার বাম পাশে দেবী সরস্বতী ও কার্তিকদের। ডান পাশে দেবী লক্ষ্মী ও গণেশ। থাকেন ছোট আকারের শিব বা মহাদেব। ছোট আকারের হলেও তিনি ছোট নন। তিনি শিবের পত্নী দেবী দুর্গা। এ কারণে দেবী দুর্গাকে বলা হয় শিবানী বা শিব জায়া। গণেশের পাশে থাকেন ‘কলা বৌ’। অনেকেই মনে করেন এই কলা বৌ গণেশের বৌ।
আসলে তা নয়। এ প্রসঙ্গেই বর্তমান আলোচনা।কলা বৌ কেবল কলা গাছ নয়। এখানে নয়টি উদ্ভিদ বা লতা ও বৃক্ষশাখা রয়েছে। এজন্য এর অর্থাৎ কলা বৌ-এর প্রকৃত নাম ‘নবপত্রিকা’। নবপত্রিকা নয়টি উদ্ভিদের সমাহার। শাস্ত্রে বলা হয়েছে :
‘রম্ভা কচ্চী হরিডা চ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ।
অশোকো মানকচে¦ব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা\’
অর্থাৎ কলাগাছ, কচুগাছ, মানকচু, হলুদ গাছ, জয়ন্তীর ডাল, বেল, ডালিম গাছ, অশোক ফুলের গাছ ও ধানগাছ। শাস্ত্রমতে গাছপালা দেবতাদের বিভ‚তি।কলা বৌ নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে। অনেকের মুখেই শুনে থাকবেন কলা বৌ হলেন গণেশের স্ত্রী।
কলা বৌ ছবি |
এরকম অনেক হাসি রসাত্মক কথাই আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু কলা বৌয়ের theory -টা এসেছে মা দুর্গার সর্বত্র বিরাজমান রূপ থেকে। প্রাচীন বাংলায় দুর্গার পূজা এখনকার নিয়মে হতো না। বহুল প্রচলিত পূজা রীতি হলো মগধেশ্বরীর পূজা। প্রসঙ্গতঃ, বাংলা তৎকালে মগধ রাজ্যের অংশ ছিলো, যার বেশির ভাগই ছিলো বন। আর শাক্ত ও তন্ত্রমন্ত্রের এই দেশে জগৎ জননীকে এদেশের ঈশ্বরী হিসেবে দেবী মগধেশ্বরী বলা হতো। এই মগধেশ্বরীর পূজা মূলত বনেই হতো, বট গাছের নিচে। এখনো অনেক জায়গায় দেখবেন বটগাছে শাড়ি পরানো থাকে। তা মূলতঃ দুর্গারই পূজা। অনেক জায়গায় বনদুর্গা-ও বলে। সুন্দরবন অঞ্চলে এই বনদেবীর পূজার বেশ ভালোই প্রচলন আছে। সেখানকার মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বনদুর্গার পূজা করে। তারা দেবীর এই রূপকে বনবিবি বলে চেনে। যেহেতু কথা উঠলো, তাই বলে রাখি —
সুন্দরবনের প্রচলিত লোককাহিনী অনুযায়ী সুন্দরবনের রাজা দক্ষিণরায় হলেন একজন রাক্ষস, যে বাঘ রূপে মানুষকে আক্রমণ করে। তাকে বশে আনতে পারবে একমাত্র বনবিবি। এই জন্য হিন্দু মুসলিম সবাই সুন্দরবনের অধিশ্বরী দেবী বনবিবির পূজা করে থাকে। অতি গভীর বন থেকে এবার একটু বের হয়ে একটু জনমানবপূর্ণ জায়গায় আসা যাক। যেখানে রক্ষাকারী দেবী দুর্গা পরিণত হয়েছেন মা দুর্গায়। এখন তিনি খাদ্য শষ্যতেও বিরাজমান হয়েছেন। মানুষ তাদের বসবাস ও নানা জিনিস প্রাপ্তির আশায় ও ধন্যবাদার্থে দেবীকে প্রকৃতির আরও অনেক জায়গায় পূজা করতে শুরু করল। মানুষের সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন এই নবপত্রিকা। দেবী প্রকৃতিকে এবার পূজা করা শুরু হলো নয়টি পত্রিকায়।
আর সেই নয়টি এমন — কদলী বা রম্ভা: কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী; কচু: কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা; হরিদ্রা: হরিদ্রা/হলুদ গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা; জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী; বিল্ব: বিল্ব/বেল গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা; দাড়িম্ব: দাড়িম্ব/দাড়িম গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা; অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা; মান: মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা; ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে "ॐ নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ" মন্ত্রে পূজিতা হন।
আর ধীরে ধীরে সেই ছোট করে করা দুর্গাপূজাই একদিন রাজবাড়ীর আঙ্গিনায় চলে আসল। কিন্তু দেবী প্রকৃতি তার সরূপ একই ভাবে ধরে রাখলেন। আর এখন তো তিনি সর্বত্র পূজিতা দেবী। কোন গ্রন্থে বিশেষ উল্লেখ না থাকলেও নবপত্রিকা বাঙ্গালীর এক প্রাচীণ ঐতিহ্য। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর সকালে জলে ডুব দিয়ে এখনও মানুষ প্রথা অনুযায়ী মা দুর্গাকে পূজা মণ্ডপে নিয়ে আসেন। || ॐ শ্রী শ্রীদুর্গা শরণম্ || ধন্যবাদ।
কলা বৌ কি?,কলা বউ কি,কলা বৌ কি,কলা বৌ,কলা বউ কি গনেশ ঠাকুরের বউ,কলা বউ,কলা বৌ কে?,কলাবৌ,নবপত্রিকা কি,কলা বৌ কি অাসলে গনেশের বৌ,কলা বৌ কে ??,কলা বউয়ের কাহিনি,কলা বউ দুর্গা পূজা,কলা বৌ কেন পুজো করা হয়,কলা বৌ/নবপত্রিকা কি এবং কেন ?,কেন রাখা হয় কলা বৌ কে গনেশের পাশে,কলা বৌ কে গনেশের পাশে কেন রাখা হয়,দূর্গা পূজায় কলা বৌ এর কাহিনী,কলা বউ কি সত্যই গণেশের স্ত্রী?
সঠিক তথ্য পেলাম