শিব নাকি বিষ্ণু কে বড়? শাস্ত্রের আলোকে ব্যাখ্যা

আজকের আলোচনায় আমাদের বিশেষ আলোচ্য বিষয় হিন্দু ধর্মের  প্রধান আরাধ্য ভগবান শিব , ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান ব্রহ্মা এই মহাদেবতাদের(ভগবান)  মধ্যে কার উৎপত্তি সবার আগে হয়েছে? হিন্দু মহাপুরাণগুলিতে এ সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য পাওয়া যায়। 

শিবপুরাণ এ দেখা যায় আদি বলা হয়েছে ভগবান শিব তথা মহাদেব কে , বিষ্ণুপুরাণ বলছে ভগবান বিষ্ণু বা শ্রীহরি সবার চেয়ে বড়, তাঁর জন্মই আগে হয়েছে। আবার দেবী মাহাত্ম্যকথা অনুযায়ী আদিশক্তি বা নারীশক্তির উদ্ভব হয়েছে সবার আগে। দেবীশক্তি থেকেই নাকি ত্রিদেব বা ত্রিমূর্তির সৃষ্টি হয়েছে। 

শিব  নাকি বিষ্ণু কে বড়?
শিব  নাকি বিষ্ণু কে বড়?

শিব নাকি বিষ্ণু? কে বড়? এর সঠিক উত্তরঃ

এক ও অভিন্ন হলো বিষ্ণু যা হলো স্বয়ং  কৃষ্ণ ও দেবাদিদেব/ মহাদেব শিব ♣এই বিষয়ে আলোচনা করা হলো নিচে ----শিবে   ও  বিষ্ণু  মধ্যে কোন পার্থক্য নেই কারণ এরা একই সত্ত্বার দুটি ভিন্ন রূপ।আমরা সনাতনী জানি এর প্রমাণ হলো-- বিষ্ণু ও শিবের হরিহর রূপ। 

★ এছাড়াও মহাভারতের পরিশিষ্ট হরিবংশ (অধ্যায়- ১৮৩) হতে বর্ণিত---  { রুদ্রদেবের উপাস্য যেমন বিষ্ণু, বিষ্ণুর উপাস্যও তেমনি রুদ্রদেব। ইহারা উভয়েই একাত্মা, দৃশ্যতঃ দ্বিধাভূত হইয়া নিত্য জগতে বিচরণ করিতেছেন।  শঙ্কর হইতে বিষ্ণু ভিন্ন নহেন, বিষ্ণু হইতেও রুদ্র ভিন্ন নহেন। } ★ মহা উপনিষদে বলা হয়েছে---  

১| একো বৈ নারায়ণ আসীন্ ন ব্রহ্ম না ঈশানো  নাপো নাগ্নি-সমৌ নেমে দ্যাবাপৃথিবী ন নক্ষত্রাণি  ন সূর্যঃ।। (মহা উপনিষদ- ১)  অনুবাদঃ সৃষ্টির আদিতে কেবল "পরম পুরুষ নারায়ণ" ছিলেন। ব্রহ্মা ছিল না, শিব ছিল না, অগ্নি ছিল না, চন্দ্র ছিল না, আকাশে নক্ষত্র ছিল না এবং সূর্য ছিল না। 

★ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে---  ১| যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসন্ শিব এব  কেবলঃ। (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ- ৪/১৮)  বাংলায় ব্যাখ্যা -বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অন্ধকারও ছিল না, যখন আলো ছিল না,যখন  রাত্রিও ছিল না, দিন ছিল না, সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না- তখন কেবলমাত্র ভগবান দেবাদিদেব শিব ছিল।  অতএব , উপরের দুটি শ্লোক থেকে বোঝা যায়-- ভিন্ন ভিন্ন উপনিষদে "বিষ্ণু" ও "শিব" দুজনেরই প্রশংসা করা হয়েছে। দুজনকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।  ** তাই সহজেই বোঝা যায় যে-- বিষ্ণু ও শিবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিষ্ণু ও শিব অভিন্ন।। ♠ 

♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦  *** আমরা জানি,  শ্রীবিষ্ণুই হলো শ্রীকৃষ্ণ।  আবার,  "বিষ্ণু/কৃষ্ণ" হলো ভগবান শিবের পরম ভক্ত।।  ঠিক তেমনি, "শিব" হলো ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত।।  শৈব= যারা শিবের ভক্ত।।  বৈষ্ণব= যারা বিষ্ণু/কৃষ্ণ এর ভক্ত।  

১| স এস রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ।  সর্ব্বরুপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যোহর্চ্চয়ত  প্রভুম্।। (মহাভারত- ৭/১৬৯/৬২)  অনুবাদঃ শিবকে সর্ব্বময় জানিয়া যিনি শিবলিঙ্গে পূজা করিতেন, সেই রুদ্রজাত ও পরম রুদ্রভক্ত হচ্ছেন "কেশব (শ্রীকৃষ্ণ)"।।  

২| নিম্নগানাং যথা গঙ্গা দেবানামচ্যুতো যথা।  বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ পুরাণানামিদং তথা।।  (শ্রীমদ্ভাগবত- ১২/১৩/১৬)বাংলা অর্থ  গঙ্গা নদীগণের মধ্যে ,অচ্যুত দেবগণের মধ্যে  (শ্রীকৃষ্ণ) এবং শম্ভু বৈষ্ণবগণের মধ্যে  (শিব) যেরূপ শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ পুরাণগণের মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রেষ্ঠ হইয়া থাকে। উপরোক্ত দুটি (২) শ্লোক থেকে বোঝা যায় যে----  

★ কৃষ্ণের থেকে বড় "শিব ভক্ত" আর কেউ নেইঃ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিষ্ণু ভক্ত  শিবের থেকে বড় আর কেউ নেই। অতএব , উপরের আলোচনা থেকে পরিলক্ষিত হয় যে--- মহা পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু ও মহা  পরমেশ্বর ভগবান শিব  দুজনেই সমপর্যায়ভুক্ত অর্থাৎ সমান । এই দুজনেই সর্বশ্রেষ্ঠ।  {{ তবে ব্রহ্মা এদের সমপর্যায়ভুক্ত নন। ব্রহ্মা একজন "দেবতা"। ব্রহ্মা কখনোই "পরমেশ্বর ভগবান নন"। ব্রহ্মার একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে।। }}এরপরেও যদি কেউ  উপরোক্ত এইসব  আলোচনার অপেক্ষার পরেও শুধুমাত্র যেকোনো একজনকে শ্রেষ্ঠ বা পরমেশ্বর ভগবান বলে মনে করে তাহলে সে সবচেয়ে বড় মূর্খ হিসেবে বিবেচিত হবে।এর কারণ   বিষ্ণু/কৃষ্ণ ও শিব দুজনেই হলেন  স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান এটাই চিরন্তন সত্য । এনারা দুজন এক ও অভিন্ন।  এবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে--- বেদমতে ঈশ্বর তো একজন। তাহলে বিষ্ণু ও শিব দুজনেই পরমেশ্বর হন কী করে?????  উঃ- বেদে বলা হয়েছে--- একমেবাদ্বিতীয়ম্ "ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়"। বিষ্ণু ও শিব যেহেতু এক ও অভিন্নতত্ত্ব, তাই এর দ্বারা বেদের এই বাণীর কখনোই হানি হয় না।। ]]]      

পরিশিষ্টঃ এটুকু মন্তব্য করা যায় যে,ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ। অর্থাৎ, কৃষ্ণই হল সর্বোচ্চ ঈশ্বর, বাকি সমস্ত দেব- মহাদেব তাঁর মধ্যে বিলীন।  Iskcon ভগবান কৃষ্ণ কে সমস্ত দেবতার সোর্স হিসেবে কৃষ্ণ ভজন করে।  লক্ষ হলো স্পিরিচুয়াল টি। ভগবান প্রাপ্তি। ভালো কাজ করা। মানুষের জীবনকে অনেক সুখ শান্তিতে ভরিয়ে তোলা।  নিজেকে অন্তরকে বুঝতে পারা।  সনাতন ধর্মে ছোট বড়ো কেউই নয়। তাই ছোট করার প্রশ্নই নেই।  কেউ শিব ভক্ত, কেউ কৃষ্ণ ভক্ত , কেউ গণেশ ভক্ত।  এতে কোনোভাবেই কাউকেই ছোট করা হয়না। উল্টে একটা ভগবানের ভক্তির মাধ্যমে সমস্ত দেবতার পুজো করা হয় ।  এটাই আমার ধারণা যা দেখেছি শুনেছি। ভুল হতেও পারি।  কারণ আমি ধার্মিক নয়। মডারেট হিন্দু।  যদি কোনো রকমের ভুল বলে থাকি আপনারা যদি কেউ জানেন তাহলে কমেন্ট করে লিখতে পারেন।

ভগবান শিব ও ভগবান বিষ্ণুর মধ্যে কে বেশী শক্তিশালী,শিব ও বিষ্ণুর,ব্রহ্মা বড় না শিব বড় নাকি বিষ্ণু বড়,কে বেশি শক্তিশালী শিব না বিষ্ণু,ব্রহ্মা বড়ো না শিব বড়ো নাকি বিষ্ণু বড়ো,বিষ্ণু এবং শিব এদের মধ্যে বড় কে,শিব বড় না বিষ্ণু বড়,ভগবান বিষ্ণু ও শিবের মধ্যে কে শক্তিশালী,শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার নাকি বিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণের?

Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন January 29, 2023 at 7:40 AM

    সুন্দর তথ্য

Add Comment
comment url