হিন্দু ধর্মে আত্মশুদ্ধি কি ও আত্মশুদ্ধির উপায়

সনাতন ধর্মে আত্মশুদ্ধি ও আত্মা বশীকরণঃ

সর্বপ্রথম এবং সর্বাগ্রে জিনিসটি হল জেনে রাখা এবং বিশ্বাস করা যে আপনি সর্বদা বিশুদ্ধ, সর্বদা উজ্জ্বল এবং সর্বদা এবং সর্বদা মুক্ত। এটাই আমাদের প্রকৃত স্বভাব। আমরা বিশুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছি, একই চেতনার অংশ যা এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করে। প্রয়োজন এই সত্যটি উপলব্ধি করা এবং এটি সময় নেয়। একজনকে তাকে ক্রমাগত বলতে হবে যে 'আমিই একজন' এবং এটাই আমাদের বেদান্ত দর্শন আমাদের হাজার বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে আসছে। 

যুগে যুগে মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে, ‘তুমি পাপী! আপনি দুর্বল! আর বারবার এসব স্লোগান শুনে আমরা এমন হয়ে গেছি। আমি যদি একই অস্তিত্বের অংশ হই: চেতনা: আনন্দ, আমি কীভাবে অপবিত্র এবং পাপী এবং দুর্বল হতে পারি? সাগরের ঢেউয়ে পানির গুণাগুণ সাগরের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে কী করে! তাই পরিস্কার শব্দটা এড়িয়ে যাচ্ছি। ভাল একতা বিভিন্ন উপায়ে অভিজ্ঞতা হতে পারে।

হিন্দু ধর্মে আত্মশুদ্ধি ছবি
হিন্দু ধর্মে আত্মশুদ্ধি ছবি 

ঈশ্বর, স্বর্গের পিতা বা অন্য যেকোন কিছুকে সবকিছুর মতো মনে করা এবং নিঃশর্ত ভালবাসা/ভক্তি দেওয়া। (আমি ঈশ্বরের সান্নিধ্য খুঁজে বের করতে বাকি হিসাবে এটা রাখছি)। একে আমরা ভক্তি বা ভক্তির পথ বলতে পারি। · 

দ্বিতীয়টি আপনার দায়িত্ব ক্রমাগতভাবে পালন করা হবে শুধুমাত্র কর্মের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। এটি কর্ম যোগ বা কর্মের পথ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। 

তৃতীয় হল প্রজ্ঞার পথ: সর্বদা পরমের সাথে এক হওয়া। নরম আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আধ্যাত্মিকতা কেবল আধ্যাত্মিকতা এবং আমাকে বিশ্বাস করুন এটি এত নরম নয়। এটা সহজ কাজ আর বলেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আজকাল নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক বলে ডাকে কারণ এই নামের ট্যাগটি আমাদের এমন অনেক আচার-অনুষ্ঠানের দিকে নজর দিতে সাহায্য করে যা আমরা মনে করি যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা অনুসরণ করতে পারি না। অবশেষে, আধ্যাত্মিকতা পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য একই। এই পথে কোন লিঙ্গ নির্দিষ্ট নেই।

আত্মশুদ্ধি কিঃ

পৃথিবীতে মানুষ প্রাণী থেকে শুরু করে সব পদার্থের বস্তু ময়লা বা অপরিষ্কার হয়। মানুষের শরীরের পাশাপাশি মানুষের একটি আত্মা বা মন রয়েছে।মানবদেহের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো আত্মা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জানা ও অজানা কারণে মানুষের আত্মা কুলুষিত হয়ে থাকে। এই আত্মা কুলুষিত  কারনে অথবা পাপের দরুন আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীরটা অসুস্থ বোধ হয় এবং আত্মা সুস্থ হলে শরীরটা সুস্থ মনে হয়। হিন্দু ধর্ম মতে নিশ্চয় মানবদেহে অবিচ্ছেদ্য অংশ আত্মা  পরিশুদ্ধ হলে পুরো শরীর ঠিক হয়ে যায় সঙ্গে আপনার মন পরিশুদ্ধ হয়। আত্মশুদ্ধি বলতে বোঝায় অন্তরকে পবিত্র করা। অর্থাৎ অন্তর থেকে সব ধরনের মন্দ স্বভাব দূর করে ভালো ও উত্তম গুণসমূহ দ্বারা অন্তরকে সজ্জিত করা। অন্তরের মন্দ স্বভাব হচ্ছে কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহঙ্কার,লোক দেখানো প্রবণতা, কৃপণতা, কুধারণা প্রভৃতি।এগুলি থেকে আপনার আত্মাকে দূরে রাখতে হবে  তবে আপনার আত্মশুদ্ধি হতে পারে।

হিন্দু ধর্ম মতে পঞ্চ আত্মা ছয় রিপু আর অষ্ট শক্তি আছে এই ঘরে  দিন ফুরালে কেউ কারো না যার তার মতে যাবে ছেড়ে।।  পাঁচ পাঁচা পঁচিশের ঘরে তত্ত্ব চব্বিশ রয়  বাহির ভিতর দশ ইন্দ্রিয় আগেই জন্ম লয়  মনের পাছে জ্ঞানের উদয় হইতেছে এই ভবপুরে।। - বা - পঞ্চ আত্মা পঞ্চ প্রান, দশ ইন্দ্রিয় বিবেক জ্ঞান ছয় লতিফা অতি মনোহর। সাড়ে চব্বিশ চন্দ্র আছে, বারটি রয় দিবাকর।। হাড়ের গাথুনি চামড়ার ছাউনি, জুইত গাথুনি কি সুন্দর ।। কারিগর এই ঘরে আছে, আমীর উদ্দিন বলিতেছে যৌবন থাকিতে তালাশ কর । আশেকে মাশুকে প্রেম, সর্বকুলে হয় অমর ।। কি কৌশলে বান্দিয়াছে' এই যে দেহ ঘর জীবাত্মা, পরমাত্মা, বোধাত্মা, প্রেতাত্মা, আত্মারামেশ্বর-এগুলো নিয়ে পঞ্চ আত্মা  আমরা হ'লাম জীবাত্মা, চিম্নয় আত্মা, স্থুল জড় দেহ নই। আর জীবাত্মা হলো পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভগবান হচ্ছে পূর্ণ আর আত্মা তার অংশ। তাই জীবাত্মার নিত্য ধর্ম হচ্ছে ভগবানের সেবা করা, কেননা অংশের কাজ। হলো পূর্ণের সেবা করা। মনের ধর্ম হলো সংকল্প ও বিকল্প এবং দেহের ধর্ম হলো ভোগ আর ত্যাগ। দেহের ছয়টি পরিবর্তন হলো জম্ম-বৃদ্ধি-স্হিতি-সন্তান/সন্ততি সৃষ্টি-ক্ষয়-মৃত্যু। জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের 'নিত্যদাস' ------ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত। আত্মার আকার চুলের অগ্রভাগের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। তা এতই ক্ষুদ্র যে এই জড় চক্ষু দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করা যায় না এ ছাড়া আত্মা জড় পদার্থ নয়, তাই জড়ীয় ইন্দ্রিয় ও যন্ত্র দিয়ে তা দেখা অসম্ভব। এই জড় জগৎটি ভগবানের বহিরঙ্গা ত্রিগুনাত্মিকা মায়া শক্তির প্রকাশ। ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার - এই আটটি উপাদান নিয়ে এই জড় জগৎ তৈরী হয়েছে। পঞ্চ মহাভূত হচ্ছে - ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও বোম। ইন্দ্রিয় পাঁচটি বিষয় হলো - রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শ। পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় হচ্ছে - নাক, জিভ, চোখ, কান ও ত্বক। পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় হলো -বাক, পানি, পাদ, উপস্থ ও বায়ূ। জীবের স্হূল শরীরটি ভূমি, জল, বায়ূ, অগ্নি ও আকাশ দিয়ে তৈরী। এবং সূক্ষ শরীরটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার নিয়ে গঠিত। জীবের প্রকৃত সমস্যা হলো - জম্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু। আমি বিশ্বাস করি এক পরমেশ্বরে। মানুষের দেহই তার বড়ো ধন। দেহের নিয়ন্ত্রণ করাটাও সাধনার কাজ। আমি পরমের সন্ধানে আছি। পরমকে পাইতে আকাশে বাতাসে ঘুরতে হয় না, সবার আগে নিজেরে চিনতে হয়। কেউই সহজে তা পারে না, ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞানও দরকার। ইচ্ছা করলেই তাঁকে পাওয়া যায় না।

নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করার সবচেয়ে সহজ উপায়ঃ

প্রত্যহ প্রত্যুষে আত্মশুদ্ধি হয়ে গীতা পাঠে নিজেকে মগ্ন করে আসুন সমস্বরে সেই শ্লোক পাঠ করিঃ

ওঁ তৎসৎ..............ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়..... শ্রীমদ্ভগবদগীতা তৃতীয়োহধ্যায়ঃ

কর্মযোগ

শ্রীভগবানুবাচঃ

ন কর্মণামনারম্ভান্নৈষ্কর্ম্যং পুরুষোহশ্নুতে।

ন চ সন্যাসনাদেব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি।।৪

ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্ঠত্যকর্মকৃৎ।

কার্যতে হ্যবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ।।৫

অনুবাদঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন, কর্ম না করিয়া কেউ কর্ম বন্ধন হইতে মুক্ত হইতে পারে না। কর্ম ত্যাগ করিলেই সিদ্ধিলাভ হয় না।৪

অনুবাদঃকর্ম না করিয়া কেহ ক্ষণকালও অতিবাহিত করিতে পারে না। প্রত্যক জীব প্রকৃতির প্রভাবে কর্মবন্ধন হইয়া কর্ম করিতে বাধ্য হয়।৫

.... ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি.....

আলোচনাঃ শ্লোকের আলোকে পর্যালোচনা করলে এখানে এটা পরিলক্ষিত যে, কেউ কর্মবিমুখ থেকে নিজেকে আলোড়িত করতে পারে না। কর্মের বন্ধন তাকে কর্ম করিয়েই ছাড়ে। প্রকৃতি এমন এক শক্তি  যার দ্বারা মানুষ কর্মে আবদ্ধ হয়ে মোহ থেকে মোক্ষলাভের উপযোগী হয়ে উঠে। কর্ম বলতে এখানে সৎ কর্মের কথা বলা হয়েছে। সৎ উদ্দেশ্য রেখে কর্ম করলে সিদ্ধিলাভের পথ প্রশস্ত হয়। তাই আমাদের কর্মের ফলাফলের কথা না ভেবে ঈশ্বরের জন্য মানব কল্যাণে হিন্দু সমাজের যোগ্য কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হিন্দুধর্মের জাগরণে কাজ যেতে হবে। নমো গোবিন্দায় নমো নমো.....



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url