দান ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলতে কি বোঝায়

(মনুসংহিতা ১/৮৬) অর্থাৎ - কলি যুগের মানুষদের জন্য দান করাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে বলা হয়েছে।
এবার দান নিয়ে আলোচনা করা যাক। দান কোনো দয়া নয়, দান হল ভালোবাসার আদান প্রদান। পবিত্র বেদ অনুযায়ী গরীব-দুঃখীদের দান করে একজন মানুষ তার ইহজীবনের পাঁচটি মহাঋণের মধ্যে একটি শোধকরে। পবিত্র বেদ সর্বদা ই দান করাকে উৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের ১১৭ নং সুক্তটি সম্পূর্ণ ই দানের মহিমা নিয়ে দৃষ্ট যার কারনে সুক্তটির নাম “দানস্তুতি” সুক্ত। আজ আমরা এদের মধ্যে কয়েকটি মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব- প্রীয়াদিন নাধমানায় তব্যান দ্রাঘিয়াসমনুপসী ইত পন্থাম। ও হি বর্তন্তে রথ্যেব চক্রান্যমন্যমুপ তিশান্ত রায়ঃ।। অর্থাৎ - মহত্তম তিনি যিনি দরিদ্র ও অসহায়কে খাদ্য,অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
বিপন্নের সাহায্যকারী জীবনের প্রতিটি ধাপেই সাহায্যপ্রাপ্ত হন।ধনীরা যেন গরীবদের সাহায্যের ব্যপারে কখনো কুণ্ঠিত না হয় কেননা রথের চাকার কন্টকসমূহ চলমান অবস্থায় একস্থান থেকে তার বিপরীত স্থানে অবতীর্ন হয়,কে জানে হয়ত  সেই চাকার কন্টকের মতই পাল্টে যেতে পারে তাদের আজকের এই অবস্থাও!রমনা কালী মন্দিরের ইতিহাস (ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫) অর্থাৎ, ধনীদের উচিত দুঃস্থদের দান করা, তাদের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত কেননা ধনসম্পদ হল রথের চাকার মত, এখন যা এখানে পরমূহুর্তেই তা অন্যখানে গতিশীল হয়।মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ ইত স তস্য।নার্যমণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।। (ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৬) অর্থাৎ -যে সকল মানবব্যাক্তি অসহায়দের সাহায্য করেনা,জ্ঞানহীন এবং অন্তঃদৃষ্টিহীন তার সকল উন্নতি ই বৃথা, সকল সম্পত্তিই অনর্থক।পৃথিবীর যে সকল মানুষ  অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেনা,দুস্থদের অভুক্ত রেখে কেবল নিজে খায় সে মূলত পাপ ই ভোজন করে”। কিন্তু অপাত্রে দান আবার ঠিক নয়। যে দান থেকে প্রাপ্ত সম্পদের অপব্যবহার করে তার অপকর্মের দায় কিন্তু দানকারীর ও বটে। এজন্যই কিন্তু যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন- "দান করা কর্তব্য এই চিন্তা করে, প্রতিদানের আশা না রেখে সৎপাঅত্রে, উপযুক্তস্থানে,তাই সাত্ত্বিক(উৎকৃষ্ট) দান যা সঠিকসময়ে যে দান করা হয়।" (শ্রীমদভগবদগীতা ১৭.২০) মহর্ষি মনু বলেছেন, " জলপথ পাড়ির চেষ্টা করেন যে ব্যক্তি পাথরের তৈরী নৌকায় চড়ে তার সমাপ্তি যেমন সলিলসমাধিতে হয় ঠিক তেমনি অযোগ্য গ্রহীতাতে দানকারী অযোগ্য দাতাও অজ্ঞানতার গভীরে নিমজ্জিত হন” সর্বশ্রেষ্ঠ দান কোনটি?
সর্ব্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে। বার্য্যন্নগোমহীবাস্তিলকাঞ্চনসর ্পিষাম্।। (মনুসংহিতা ৪.২৩৩) অর্থাৎ -“যত ধরনের দান এই পৃথিবীতে আছে, জলদান, অন্নদান, ধেনুদান, ভূমিদান, বস্ত্রদান, তিলদান, স্বর্ণদান, এই সকল দানের মধ্যে জ্ঞান দান বা শিক্ষা দান/বেদশিক্ষা দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান।

দানধর্ম

সইদ ভোযো য়ো গৃহভে দদাত্যন্নকামায় চরতে কৃষায়া। অরমস্ময় ভবতি য়ামহুতা উতাপারীসু ক্রুতে সখায়ম।। (ঋগবেদ ১০.১১৭.৩) অর্থাৎ -"যারা অসহায়দের দান করে তাদের জন্য রয়েছে অনন্য পুরস্কার।তার যেমন মৃত্যুর পর অমরত্ব লাভ করে তেমনি আশীর্বাদময় দীর্ঘায়ু লাভ করে ঠিক  , হ্যাঁ অমরত্ব লাভ করে!চারটি বেদের মধ্যে অথর্ববেদের দান প্রসঙ্গে শ্রেষ্ঠ বাণীটি দিয়ে শেষ করব আজ যেখানে দানের মাহাত্ম্য বাড়াতে বলা হয়েছে। শত হস্ত সমাহার সহস্র হস্ত সং কির।। অর্থাৎ - “আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে রুপান্তরিত কর” (অথর্ববেদ, ৩.৩০.৬) তিনটি মহান উক্তি শিবজ্ঞানে জীব সেবা - ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস মানব সেবাই মাধব সেবা জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর! - স্বামী বিবেকানন্দ তথ্য ও আলোকচিত্র ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত এই কোরোনা মহামারীকালে আপনাদের একটু সাহায্য কিন্তু একটি প্রাণ বাঁচাতে পারে মনে রাখবেন | যেমন ভাবেই হোক সাহায্য করুন মানুষকে, জাতিধর্ম, আমার তোমার এসব নাহয় পরে ভাবা যাবে | মনে রাখবেন আমরা মানুষ হয়ে যদি মানুষেরই পাশে না দাঁড়াতে পারলাম তবে মানব জন্মই বৃথা তা পশুর সমান | আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য একটাই দানধর্মর মহানতা প্রচার ও তার দ্বারা মানবতার রক্ষা | একটা কথা মনে রাখবেন এই দানের পরিবর্তে কিন্তু কিছু পাওয়ার আশায় করলে চলবে না এটি নিঃস্বার্থ হওয়াই উচিত, তাতে জগন্মাতা অন্নপূর্ণা, দুর্গা ও যার যার যে ইষ্ট তিনি খুশি হবেন | অভ্যাস করেই দেখুন না, মনে শান্তি পাবেন, বাড়িতে থেকে থেকে এমনিতেই মানুষের মনের অবস্থা খুবই খারাপ |
অন্যকে উৎসাহিত তো করতেই পারেন নিজে না দান করতে পারলেও। তাতে ব্যয়ও হবে না কি বলেন ? আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা যদি দান করেন সেটা গোপন রাখবেন, ঈশ্বর সবই দেখছেন জানবেন মনে | দান করে নিজেকে কখনো বড় ভাববেন না, এটাই শুধু ভাববেন একটি মানুষকে আপনি সাহায্য করেছেন, মানুষ হয়ে মানুষের মতো কাজ করছেন, দেখবেন মনে আনন্দ পাবেন | ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাবেন, যে তিনি দান করার মতো ক্ষমতা দিয়েছেন আপনাকে, যেন আরো অর্থ দেন প্রভু যাতে গরীবদুঃখীদের সাহায্য করতে পারেন - এই প্রার্থনাই জানাবেন