ধর্মে কর্ম কত প্রকার ও কি কি?

কর্ম কী অকর্ম কি এবং কর্ম কত প্রকার ও কি কি?

এগুলো ভেবে  ভেবে বহু পন্ডিত মোহিত হয়ে যান তাই আজকে আমি অতি সংক্ষেপে এ বিষয়ে আলোচনা করবো। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ গীতায়  বলেছেন (নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং) ৩/৮ অর্জুন তুমি নিয়ত করম করো।

নিয়ত অর্থাৎ নির্ধারিত কর্ম। সুতরাং বুজতে হবে কর্মের সংখ্যা অনেক তার মধ্যে নির্ধারিত ক্রিয়াই কর্ম। তা হলে অন্য কর্ম কি কর্ম নয়? না অন্য কর্ম , কর্ম নয়। সেই নিয়ত কর্ম কি? (যজ্ঞার্থত্ কর্ম) গীতা ৩/৯ যজ্ঞের প্রক্রিয়াই কর্ম। p: তাহলে ওসব কর্ম কি? (অন্যত্র লোকোহয়ং কর্মবন্ধনঃ) অন্য কর্ম কর্ম নয় কেবল বন্ধনের কারণ। অতএব কৃষি কাজ , চাকরি , ব্যবসা এসব কর্ম নয় কেবল লোকের বন্ধনের কারণ। কর্ম একটা সেটা হলো যজ্ঞ। এই যজ্ঞে ইন্দ্রিয়ের বহিরাগত কামনা গুলির দমন মনের সমন এবং দৈবি সম্পদ লাভ করা হয়। মোট কথা সংযম রুপ অগ্নি তে ইন্দিয়ের কামনা গুলিকে আহুতি দেওয়া হয়। আর এই যজ্ঞে পরমেশ্বর সর্বদাই আমাদের কাছে আত্মা থেকে অভিন্ন হয়ে আদেশ নির্দ্দেশ প্রদান করেন। (সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্টিতম্) সর্ব্ব্যাপী ব্রহ্ম সর্বদাই যজ্ঞে।।

কর্ম তিন প্রকার

১)কর্ম,

২)বিকর্ম ও 

৩)অকর্ম। এই কর্ম সম্পরকে জানতে পারলে অতি সহজেই সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি হওয়া যায়। কিছু বালির ভিতরে যদি একমুট চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হয় তবে ঐ চিনিগুল,কে টুকিয়ে আনতে পারে? একমাত্র পিপড়েই পারে টুকিয়ে আনতে। তদরুপ এখানে চিনি মিশ্রীত যে কথাগুয় আছে যদি পিপড়ে হয়ে পড়তে পারেন তবে ধোরে রাখতে পারবেন।নোইলে পারবেন না।

 (1) কর্ম= এই কর্মটাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়।কর্তব্য কর্ম আর পুণ্য কর্ম। সংসারের ভিতরে যে কর্মগুলো করা হয় তাহাকে কর্তব্য কর্ম বা কর্ম বলে। যেমন,পিতা মাতাকে সেবা করা স্ত্রীর সকল দ্বায়িত্ব নেওয়া।স্ত্রী হয়ে সামীকে সেবা করা সন্তানকে শু পরিবেশের সাথে মানুষ করা ছোট ভাই বোনদের দেখাশুনা করা। আপনি বাজার থেকে সংসারের জন্য যে বাজার করবেন বা পিতা মাতা স্ত্রী সন্তান ভাই বোন বা সংসারের যে কোন সদস্যর জন্য কোন পসাক জামা কাপড়,যা কিছু কিনবে বা পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা যাই করবেন সবই কর্ম।অতএব আপনি পরিশ্রম করে রোজগার করে সংসারে সকল সদস্যদের জন্য যেইটাই করবেন সেইটাই কর্তব্য কর্ম বা কর্ম। 

পূণ্য কর্ম= এই পূণ্যকর্মের কথা আগেও বলা আছে তাই সংক্ষেপে বলছি। দেব দেবতার উদ্দেশ্য যে কর্ম করা হয় তাহাকে বলে পূণ্য কর্ম।তার ভিতরে যেমন,পিতা মাতাকে সেবা করা,গরীব ভীক্ষারিকে দান করা, কোনো অসহায় মানুষ কে সাহিজ্য করা,কন্যা দায় গ্ৰহস্থকে সাহিজ্য করা,কাহারও পিতা মাতা মারা গেলে সেখানে সাহিজ্য করা,,কোন দেব দেবীর মুন্দির তৈরি করা বা সখানে কিছু অর্থ দান করা,স্কুল,কলেজ, হাপাতাল,জনকল্যান কারি,ইত্যাদি, দানে যেমন পূণ্যি অর্জন করে,আবার তেমন পাপ জোগাড়ও করে।যেমনঃএকজন নিজের দুঃখের কথা আপনার কাছে প্রকাশ করে 100 টাকা চাইল আপনি হাসি মুখে দিলেন।উনি ঐ টাকাটা নিয়ে মদ কিনে খেয়ে বাড়িতে বা কথাও ঝামেলা পাকাল।সেই পাপের ভাগ আপনাকে নিতে হবে। 

কর্মের ছবি
হিন্দু ধর্মে কর্ম

(2) বিকর্ম= যে কর্মের ভিতরদিয়ে পাপ জড়িয়ে আসে তাহাকে বলে বিকর্ম। যেমন,মদ,গজা,নেশ াকরা,পতিতালয়ে প্রবেশ,চুরি,ডাকাতি, মানুষ খুন,স্ত্রী হত্যা,নারী হত্যা,পষু হত্যা, গোপনে লোকের খতি করা,পর নিন্দা,মিথ্যে ভাষন,লোক ঠোকান,ইত্যাদি। এই পাপ কর্মকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয় (কাইক পাপ,বাচোশিক পাপ,আর মানষিক পাপ, দেহের দারায়,মুখ দারায়,মোনের দারায়।)

 (3) অকর্ম=ভগবানের প্রীতি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে যে কর্ম করা হয় তাহাকে অকর্ম বলে বা সুক্কৃতি। গুরু সেবা,গুরুর উছ্যিষ্ট প্রসাধ পাওয়া,বৈষ্ণব সেবা,বৈষ্ণবের উছ্যিষ্ট প্রসাধ,সাধু সঙ্গ,গোবিন্দের চরণামৃত পান করা,গোবিন্দের প্রসাধ পাওয়া,গীতা,ভাগবত পাঠ, শ্রবণ,যজ্ঞ কির্তন অনুষ্ঠানে কির্তন শ্রবণ,সেখানে কিছু দান করা,সেখানের প্রসাধ পাওয়া হরিনাম করা,মালা জপ করা,ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমন ধরুন আপনার বাড়িতে একদিন পুজা অনুষ্ঠানের আয়জন কররেলন। আপনি বাজার থেকে পুজার জন্য ফল, মিষ্টি, ভগবানের জন্য কাপড়,আর সেই সাথে বাড়ির সদ্যদের জন্য কিছু কাপড় কিনলেন। ঐ খানে বাড়ির সদস্যদের জন্য যে কাপড়গুলো কিনলেন ঐটাই কর্ম।আর ভগবানের জন্য যে কাপড় ফল মিষ্টি যা কিছু কিনলেন ঐটাই অকর্ম। আপনি বাড়িতে আসার পর আপনার কোন একটা বাচ্ছা কান্না করছে তখন আপনি ঐ ফল থেকে কোন একটা ফল ভগবানকে নিবেদন করার আগেই যদি আপনার বাচ্ছাকে খাইতে দেন তবে ঐটাই আবার কর্ম হয়ে যাবে। আপনার বাড়ির সদ্যসদের নিয়ে একদিন আপনি কথাও পুজা দেখতে গেছেন।সেখানে গিয়ে কিছু ফল মিষ্টি কিনে মুন্দিরে দিলেন। এর পর ঐ খানে কিছু খাবার কিনে আপনার সন্তান স্ত্রী বা বাড়ির সদস্যদের দিলেন। 

যেইটা আপনার সদস্যদের দিলেন ঐ টাই কর্ম।আর যেইটা মুন্দিরে দিলেন ঐ টাই অকর্ম। যারে বলে সুক্কৃতি।আর এই অকর্মটাই হচ্ছে সুক্কৃতি। ধরুন আপনারা একদিন রাতে দুট বন্ধু রাস্তার ধারে বসে গল্প করছেন।এমন সময় একজন লোক এসে আপনাদের বলল।যে বাবু আমি অমুক যায়গায় যাব কিন্তু এই পথটাতো ঠিক চিনে যেতে পারছি না আমাকে একটু চিনিয়ে নিয়ে যাবে।তখন আপনাদের ভিতর থেকে কেউ একজন তাহাকে নিয়ে গেল কিছুখন পর আবার একজন আসল তখন উনিও ঐ একিই কথা বলল।আপনাদের বাকি যে বন্ধুটা ছিল সেই নিয়ে গেল। ঐ দুইজনের ভিতরে একজন ছিল সাধু বৈষ্ণ আর একজন ছিল সাধারন মানুষ বা দেব দেবীর ভক্ত। এবার যে বন্ধটা ঐ সাধারন মানুষ বা দেব দেবীর ভক্তটাকে দিয়ে আসল সে পুণ্যি পাবে। আর যে ব্যক্তি সাধু বৈষ্ণব ছিল তাহাকে যে বন্ধটা দিয়ে আসল সে সুক্কৃতি পাবে। 

কর্মের ফল= কর্মের ফলে আপনি সংসার বন্ধনে জড়িয়ে যাবেন। পুণ্যির ফল=আর ভাল পূণ্যির কর্মের ফলে আপনি কিছু দিন স্বর্গ প্রাপ্তি হবেন।স্বর্গ ভোগ শেষে পৃথিবিতে এসে আবার মানুষ রুপ পাবেন। বিকর্ম ফল=বিকর্মের ফলে আপনি মৃত্যুর পরে নরক যাতনা ভোগ করবেন পরে আবার।এই পৃথিবিতে এসে কোন এক জীবে পরিনত হবেন। অকর্মের ফল= অকর্মের ফলে সজা গলকধাম। তখন আপনি বিষ্ণুলোক বৈকুন্ঠধাম চলে যাবেন এবং ওখানে চির কাল সুখ ভোগ করবেন।যেখানে নেই কোন দুঃখ কষ্ট জরা ব্যধি,যেখানে গেলে মানুষ আর এই দুঃখময় জগতে ফিরে আসে না। পাপ পূণ্যি কি ভাবে ক্ষয় হয়? যদি কোনো ব্যক্তি বেশি সুখ ভোগ করে তখন ভাববেন গত জন্মের পুণ্যি এবার ক্ষয় হচ্ছে। আর যদি বেশি কষ্ট ভোগ করেন তবে ভাববেন এবার গত জন্মের পাপ ক্ষয় হচ্ছে ।পাপের ফলে দুঃখ-কষ্ট ভোগ।আর পণ্যের ফলে সুখ ভোগ।। 

রাত 02,00 পর থেকে দেখবেন রাতের আধার গাড়ো হতে থাকে,আর পৃথিবিতে সূর্য উঠার 1 ঘন্টা 36 মিনিট যাহাকে বলে ব্রক্ষমুহুর্থ এই সময় রাতের আধার এতোটাই গাড়ো হয় নিজের হাত পর্যন্ত দেখা যায় না। তদরুপ মানুষের জীবনে যখন দুঃখের অবসন হয় তার আগে এতোটাই দুঃখ কষ্ট নেমে আসে সজ্য করা দায়।তখন কেউ গলায় রোশি দেয় কেউ বিষ খায় বা কোনো ভাবে আত্যহত্য করে।আর এই দুঃখ কষ্ট যে ব্যক্তি সজ্য করে আসতে পারে সেই যোই হয়। যদি কোন প্রকার ভুল কথা বলে থাকি সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন হরে কৃষ্ণ জয় রাধে জয় গোবিন্দ

Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন April 26, 2022 at 10:23 PM

    সঠিক তথ্য পেলাম

  • সনাতনী আলাপন
    সনাতনী আলাপন April 28, 2022 at 12:59 AM

    গ্রহণযোগ্যতা পেলুম।। ধন্যবাদ।।

Add Comment
comment url