ত্রিশূল কি ও ত্রিশূলের সঠিক ব্যাখ্যা

ত্রিশূলঃ ত্রিশূল অর্থ তিনটি শূল।

দ্যুলোক,ভূ লোক ও অন্তরিক্ষলোক এই তিন লোকের সংহার করার জন্য মহাদেব এই ত্রিশূল ধারন করে। আধ্যাত্বিকভাবে, দ্যুলোক=মস্তকপুরী ভূলোক=দেহরাজ্য অন্তরিক্ষলোক=সূক্ষ্যজগত।যেমন আত্মা,মন ইত্যাদি। ত্রিশূলের সাথে তিনটি বস্তু থাকে।

যথাঃ ডুমুর=অন্তরিক্ষলোকের সমস্ত অসূরকে এই ডুমুরের ধ্বনি দ্বারা নাশ করা হয়। লাল ফিতা=এটা দ্বারা ত্রিবেনী ঘাটের লাল নিশানকে বোঝায়।এখানে অসুর প্রবৃত্তির মানুষকে নরবলি করা হয়। পুথিমালা=এই মালা দ্বারা সাধুদের পরিত্রান প্রদান করা হয়। শিব হচ্ছেন ত্রিশূল আর এই ত্রিশূলের শক্তি হলো আদিশক্তি।

 শিব ঠাকুরের হাতে ত্রিশূল কেন? 

ত্রিশূল কে আমরা ভালো মতো দেখলে দেখি সরল আকার দন্ড টি উর্ধ মুখী হয়ে তিন ভাগে ভাগ হয়েছে । এক দন্ডের ত্রিধারা ত্রিশূল । ঋজু দন্ড টি নির্গুণ পরম ব্রহ্মের প্রতীক বা সত্যম শিবম্ সুন্দরম রুপী পরম শিব এর প্রতীক । একই দন্ডে ত্রিগুনের সমাহার । গুনাতীত নির্গুণ থেকে গুণময় এর প্রকাশ । মধ্যের ঐ তীক্ষ্ণ ফলা টি সংহার দেবতা রুদ্র দেবতার আসন । পার্শ্ববর্তী দুটি ফলকে সত্ত্ব ও রজ গুনের পীঠ । সত্ত্ব গুনে বিরাজমান বিশ্ব পালক বিষ্ণু , রজঃ গুন ফলকে বিরাজ করেন সৃষ্টি রচনাকার প্রজাপতি ব্রহ্মা । 

এরুপে ব্রহ্মা , বিষ্ণু , রুদ্র একই পরম শিবের সত্ত্বায় অধিষ্ঠিত । শিব আপন ত্রিশূলেই এই তিন শক্তিকে সমাহিত করে রেখেছেন । সৃষ্টি – স্থিতি – প্রলয় এর তিন সত্ত্বা রয়েছে সত্য শিবের হস্তে আয়ূধ রূপে । তিনে বিরোধ কিছু নেই , একে অপরের পরিপূরক । ত্রিশক্তিকে ধারন করেই পরম শিব করে চলেছেন আপন লীলা । 

নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্ম তত্ত্ব ও সগুন সাকার ঈশ্বর তত্ত্ব দেখি এই ত্রিশূলেই । এই ভাবে ত্রিগুন ধারন করে ত্রিশূল হয়েছে ‘ত্রিগুনাত্মিকম্’ । ত্রিশূল হলো কুঞ্চিকা বা চাবি । মানুষ সিন্দুকে ধনরত্ন রেখে প্রয়োজনে চাবি দিয়ে খুলে বের করে । 

শিবের ত্রিশূল
শিবের ত্রিশূল

শিবের ঐশ্বর্য ভান্ডার তত্ত্বময় ।ত্রিশূলের তিনটি ফলক সত্ত্ব , রজ, তমোগুনের প্রতীক । কিন্তু এ তিনটি ফলক একটি মাত্র সোজা দন্ডের উপর প্রতিস্থাপিত । সোজা দন্ডটিই গুণাতীত তত্ত্বের প্রকাশক । তিনটি ফলক সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের প্রতীক এবং সত্ত্ব গুণময় ফলকে আছেন বিষ্ণু । রজগুণময় ফলকে আছেন ব্রহ্মা এবং তমোগুণময় ফলকে আছেনসংহার দেবতা রুদ্র । শিবের ত্রিশূল এ ত্রিশক্তির আঁধারস্বরূপ । 

এই তিনটি ফলার স্বরুপ হল যথা- অ,উ,ম. অ=অাদ্যাশক্তি মহামায়া,উ=উমা,ম=মহাদেব. ডমরু: শিবের হাতে ডমরু নামে একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র শোভা পায়। নটরাজ নামে পরিচিত শিবে নৃত্যরত মূর্তির এটি একটি বিশিষ্ট দিক। ডমরুধারণের জন্য নির্দিষ্ট একটি মুদ্রা বা হস্তভঙ্গিমা ডমরুহস্ত নামে পরিচিত। ডমরু কাপালিক সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ""হর হর মহাদেব""

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url