চন্দন ও তিলক পরিধানের মন্ত্র

সাধারনত আমরা দেখে থাকি যে,সনাতন ধর্মের বা হিন্দু ধর্মের বেশিরভাগ লোকেই চন্দন ও তিলক পরিধান করে। বিশেষ করে আমাদের চারিপাশে অনেক বৈষ্ণব ও সাধুরা চন্দন /তিলক পরিধাণ  করে থাকেন। এবং সাধারণত হিন্দুরা  মনে করি যে, হয়ত চন্দন ও তিলক শুধুমাত্র বৈষ্ণব ও সাধু  পরা উচিৎ।কিন্তু এটি হাস্যকর  অযৌক্তিক  ধারনা, সেটি কতটা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত? আসুন জেনে নেই শাস্ত্রের আলোকে।

 

চন্দন ও তিলক পরিধান করার কারন;

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণীতে,প্রভু স্বয়ং বলেছেন- বিপ্রের কপালে যদি তিলক না থাকে। শ্মশান সদৃশ সে কপাল  বেদে বলে।

পদ্মপুরাণে শ্রীভগবানের উক্তি ব্রহ্মার প্রতি - 

ম-ৎ প্রিয়ার্থ শুভা-র্থম্বা রক্ষার্থে চতু-রানন ।

 মদ্ভক্তো ধারয়েন্নিত্যমূর ্ধ্বপুন্ড্রং ভয়াপহম ।।”

অর্থ  -হে পরম দেব ব্রহ্মা, আমার ভক্ত তাহার মঙ্গলের জন্য,আমার প্রীতির জন্য কিংবা অন্যের  মঙ্গলের জন্য এবং নিজের রক্ষার নিমিত্তে ভয় নাশকারী উর্ধ্বপুন্ড্রং তিলক প্রতিদিন ধারন করবে । শ্রীনারদ মুনির উক্তি এই যে-

য-জ্ঞো দা-নং তপো হো-মঃ স্বাধ্যায়; পিতৃর্পণম্ । 

ব্যর্থং ভবতি তৎসর্ব মূর্ধ্ব পুন্ড্রং বিনা কৃতম্ ।। -উর্ধ্বংপুন্ড্রং তিলক ধারন করে না,তার যজ্ঞ দান,তপস্যা,-উর্ধ্বংপুন্ড্রং তিলক ধারন করে না,তার যজ্ঞ দান,তপস্যা,হোম, বেদ অধ্যয়ন,পিতৃ তর্পণ প্রভৃতি যেকোনও অনুষ্ঠিত কর্ম বিফল হয়। 

আরও বলেছেন- 

যচ্ছ-রীরং; মনুষ্যানামূর্ধ্ব-পুন্ড্রং বিনা কৃতম্ । 

দ্রষ্টব্যং নৈব তত্তাবৎ শ্মশান-সদৃশং ভবেৎ ।।

-মানুষের দেহ শ্মশান সদৃশ উর্ধ্বপুন্ড্র তিলকহীন ।  (পদ্মপুরান) কাশীখন্ডে এটাও বলা আছে যে, সেইতিলকহীন ব্যক্তি দর্শনের যোগ্য নয় । শ্রীযমরাজের উক্তি তাঁর দূতদের প্রতি-দূতা-শৃনুত; যদভালং গোপীচন্দলাঞ্ছিতম্ । জ্বালদিবন্ধনবৎ সোহপি ত্যজ্যো দূরে প্রযত্নতঃ ।।

তিলক দেবার ছবি
তিলক ধারণ ছবি

অর্থ- হে দূতগণ ! দেখবে যাঁর ললাটে গোপীচন্দন পু্র্ণ আকা ,তাঁকে অতি যত্নে দূর থেকে পরিত্যাগ করবে  কারন সে/তিনি জলন্ত অঙ্গার সদৃশ এবং সেরকম ব্যক্তি নারকীয় যাতনা লাভের অনুপযুক্ত । অনেকে সন্ধ্যাবন্দনাদি / সন্ধ্যা পূজা করেন কিন্তু শরীরে তিলক করেন না বা পরিধান করেন না,এরকম এক তিলক বিহীন ব্যক্তিকে দেখে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন, তোমার সন্ধ্যা আজি বন্ধ্য অর্থাৎ বিফল হয়ে গেল। 

শ্রীলোচন দাস ঠাকুর(শ্রীচৈতন্যমঙ্গল রচয়িতা)  গেয়েছেন- “তিলক ধারন না করে যে জন, বৃথা জনম তার ।।” বিষ্ণুপুরাণে  বিষ্ণুদেব নারদ কে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন তার উত্তরে নারদ বলেছিলেন,  আমার প্রিয় ভক্ত সেই হয় যে, আমার গুণ কীর্তন  নিয়মিত  করে কপালে চন্দন পরিদান করে, যে ভক্তের কপালে চন্দন পরিদান করেনা সে ভক্তের কপাল শশানে পরিণিত হয়!! পাপ ও অশুভ শক্তি বিনষ্ট হয় যদি পবিত্র চন্দন শরীরে লেপন করেন!! 

তিলক ধারনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? 

বিভিন্ন দার্শনিক থেকে আমরা জানতে পারি,মনস্তাত্ত্বিক ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পারে,মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে কপালে চন্দন দিলে ,মনকে শান্ত রাখে এবং ধর্য্যশক্তি বৃদ্ধি হয়।

তিলক গুলিবার মন্ত্র কি?

পবিত্র তিলক গুলিবার মন্ত্রঃ নমঃ অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণুক্রান্তে বসুন্ধরে মৃত্তিকে হরমে পাপং জন্ময়া দুস্কৃতং কৃত উর্দ্ধত্রাসি বরাহেন কৃষ্ণেন শর্তবাহুনা অারুর্হ্য মমগাত্রানি সর্ব্বপাপ প্রমোচয়।।

তিলক ধারণ মন্ত্র কি?

তিলক দেবার মন্ত্র:- মন্ত্র গুলো যখন জব করবেন চেষ্টা করবেন সেগুলো যেন মন থেকেই জব করেন। (অন্যমনস্ক হবেন না)★.শ্রী কেশবায় নমঃ-গলার ললাটে-  ★. শ্রী নারায়ণায় নমঃ-উদরে-  ★. বক্ষঃস্থলে- শ্রী মাধবায় নমঃ ★. কন্ঠে- শ্রী গোবিন্দায় নমঃ ★. দক্ষিণ কুক্ষিতে- শ্রী বিষ্ণুবে নমঃ ★. দক্ষিণ বাহুতে- শ্রী মধুসূদনায় নমঃ ★.শ্রী ত্রিবিক্রমায় নমঃ- দক্ষিণ স্কন্ধে-  ★.শ্রী বামনায় নমঃ- বাম কুক্ষিতে  ★.শ্রী শ্রীধরায় নমঃ- বাম বাহুতে-  ★.বাম স্কন্ধে- শ্রী হৃষীকেশায় নমঃ ★. পৃষ্ঠে- শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ ★. কটিতে- শ্রী দামোদরায় নমঃ অতঃপর হস্ত ধৌত জল  “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” বলিয়া হস্ত ধৌত জল স্বীয় মস্তকে ধারণ করিবেন।

 

এই ওয়েবসাইটটিতে পরবর্তীতে আরো জানতে পারবেন 

তিলকের উৎপত্তি কিভাবে,
শ্রীকৃষ্ণ তিলক পরেন কেন?,
তিলকে কে কোথায় বাস করেন,
শ্রীরাধা রানী তিলক পরেন না কেন?
তিলক দেখে যমরাজ কেন পালায়?

তিলক ছাড়া সন্ধ্যা-বন্দনা হবে কি না?

 সবাই এগিয়ে আসুন ইতি মধ্যে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার সদস্য পুরন হয়েছে আপনাদের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং আমাদের দায়িত্বরগ আকান্ত পরিশ্রম, সম্মানিত গ্রুপের সদস্যগন আপনারা হলেন ওয়েবসাইটির শক্তি ও অনুপ্রেরণা জম্মনেয় ধর্মপ্রচারে।ms

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url