রথযাত্রার সূচনা কিভাবে হল

রথ যাত্রার সূচনা লগ্নঃ

একবার দেবকী ও বসুদেবের বাসনা হল তীর্থ স্নান করবে। বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ, মা দেবকী ও বসুদেবকে নিয়ে কুরুক্ষেত্রের সরোবরে অমাবস্যায় সূর্যগ্রহনের সময় স্নান করতে এলেন। সেইখানে সবাইকে নিয়ে আসেছেন দ্বারকাদীশ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। মা দেবকী, পিতা বসুদেব, সঙ্গে বোন সুভদ্রা মহারানী, কৃষ্ণের আট জন মহাপটরানী, সঙ্গে বলরাম তার সাথে বারূণী, রেবতীও আছেন। 

অনেক সৈন্য, অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজছে। ভগবানের ভক্তির সংবাদদাতা নারদ ভাবছেন, শ্রীকৃষ্ণ আসেছেন কুরুক্ষেত্রে এই কথা ব্রজবাসীদের বলতে হবে। নারদজী বীনায় কৃষ্ণ নাম করতে করতে ব্রজে এসে সবাইকে জানাতে লাগলেন যে, কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে এসেছে এই খবর দিতে চললেন ব্রজে। ব্রজে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নারদের অঙ্গ কৃষ্ণ বিরহে কাতর হল। বিরহতাপে অঙ্গ জ্বলছে ব্রজধামের সবকিছু ,যমুনা,স্থাবর-জঙ্গম,গোবৎস,গাভী, গোপ-গোপী,মা-যশোদা নন্দবাবা। কৃষ্ণ বিরহে সবাই কাঁদছে, নারদজী দেখলেন ব্রজে নন্দালয়ে যশোদা ননী নিয়ে গোপাল গোপাল করে কাঁদছে। শ্রীদাম-সুদাম পটে আঁকা কৃষ্ণের ছবি দেখে কেঁদে কেঁদে জর্জরিত। এদিকে রাধা সব সখীদের গলা ধরে, হা কৃষ্ণ বলে আস্ফালন দিচ্ছে। নারদজী সবাইকে বললেন, ''তোমাদের নয়নাভিরাম কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে এসেছে। চল তোমরা দর্শন করবে তোমাদের প্রাণ গোবিন্দকে''। # শ্রীরাধাকে বলল ললিতা, ''চল সখী তোকে সাঁজিয়ে দিই''। রাধারাণী বলল, ''আমি সেঁজে বসে আছি। নয়ন সেঁজেছে শ্যামের রূপ দর্শনে, হাত সেঁজেছে শ্যামের পদসেবনে,কানের ভূষন আমার শ্যামের নাম শ্রবনে''। সবাই চলছে কুরুক্ষেত্রে। বিরহিনী গোপীরা এপারে আর ওপারে তাকিয়ে শ্রীকৃষ্ণ দর্শনে ব্যাকুলতা হল। 

দেখল যে বনমালীকে তারা ভালবাসত, যে গোপালকে ওরা ভালবাসত সেই কৃষ্ণ এ নয়। কোথায় বনমালা কোথায় চুড়া, মাথায় রাজ মুকুট, হাতে বাশীর পরিবর্তে রাজ তলোয়ার। রাজার বেশে কৃষ্ণকে ভালবাসা যায় না। ''মথুরা প্রবাসী কৃষ্ণে তিরস্কার করি, শ্রীরাধারে কহে দেবী ললিতা সুন্দরী''।।_চৈতন্যচরিতামৃত তা শুনে দেখা না করে ফিরে চলল রাধা বৃন্দাবনে। # নারদ মুনি দেখলেন রাধারানী কৃষ্ণ দর্শন না করে চলে যাচ্ছেন।

রথযাত্রা সূচনালগ্নের ছবি
রথযাত্রার সূচনালগ্ন 

 কৃষ্ণকে বলল, ''রাধারানী চলে গেছে'' শুনে শ্যামের মনে বিরহ হল। সেই থেকে কৃষ্ণ হায় ব্রজবাসী, হায় শ্রীধাম-সুদাম, হায় রাধে, বলে ঘরে তালা দিলেন। দীর্ঘ চৌদ্দদিন তিনি কাউকে দর্শন দিবেন না। নারদ মুনির সঙ্গে বলরামসহ সবাই ঠিক করল রথ সাঁজিয়ে বৃন্দাবন যাবেন। কৃষ্ণকে আর কষ্ট দেওয়া যাবে না। এইভাবে রথযাত্রার সূচনা হল। সনাতন ধর্মাবলম্বী সারা বিশ্বের হিন্দু সমাজ গ্রুপ গ্রুপের শক্তি ও অনুপ্রেরণা সব সময় গ্রুপের পাশে থাকবেন হরে কৃষ্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url