অক্ষয় তৃতীয়া কি ও কেন অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়

অক্ষয় তৃতীয়া আকতি বা আখা তীজ নামেও পরিচিত, মান্দা (ঝাড়খণ্ড) হল একটি বার্ষিক হিন্দু ও জৈন বসন্ত উৎসব।অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি।এটি আঞ্চলিকভাবে ভারত ও নেপালের হিন্দু, জৈন এবং ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের দ্বারা একটি শুভ দিন হিসাবে পালন করা হয়।অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।

এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। কারণ এটি "অবিরাম সমৃদ্ধির তৃতীয় দিন" নির্দেশ করে।হিন্দু ক্যালেন্ডার চন্দ্রসৌর কিন্তু বেশিরভাগ উৎসবের তারিখ ক্যালেন্ডারের চন্দ্র অংশ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট করা হয়। একটি চান্দ্র দিন তিনটি ক্যালেন্ডার উপাদান দ্বারা স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা হয়: মাস (চন্দ্র মাস), পক্ষ (চান্দ্র পাক্ষিক) এবং তিথি (চন্দ্র দিন)। অধিকন্তু, মাসা নির্দিষ্ট করার সময়, দুটি ঐতিহ্যের মধ্যে একটি প্রযোজ্য, যেমন। আমন্ত / পূর্নিমান্ত। যদি একটি উত্সব চাঁদের ক্ষয়প্রাপ্ত পর্যায়ে পড়ে,

অক্ষয় তৃতীয়ার ছবি
অক্ষয় তৃতীয়ার ছবি

তবে এই দুটি ঐতিহ্য একই চন্দ্র দিবসকে দুটি ভিন্ন (কিন্তু ধারাবাহিক) মাসায় পড়ে বলে চিহ্নিত করে। একটি চান্দ্র বছর একটি সৌর বছরের তুলনায় প্রায় এগারো দিন ছোট। ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ হিন্দু উৎসব গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দিনে ঘটে।তখনি আমাদের লাভ হবে যখন কোন ভালো কাজ করা হয় আবার যদি  অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই—


অক্ষয় তৃতীয়ার করণীয় ও বর্জনীয়ঃ
৹ যেহেতু প্রাণিহত্যা মহাপাপ তাই আমিষাহার পরিত্যাগ করা উচিত অন্যদের খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।
৹ কৃষ্ণপ্রসাদ গ্রহণ করা উচিত।
৹ কৃষ্ণমন্দিরে দান করা উচিত ভোগ, চন্দন, ফুল, ফল, অর্থ ইত্যাদি ।
৹  প্রতিটি কাজ করা উচিত খুব সাবধানে করতে হয় অক্ষয় তিথিতে।
৹কটু কথা  কখনো যেন না বেরোয় মুখ থেকে।
৹ অক্ষয় তিথিতে কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি এটি মনে রাখা অবশ্যক ।
৹ তাই এদিন যথাসম্ভব কৃষ্ণকথা বলা উচিত।
৹ অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত তাই এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান ইত্যাদি করা উচিত।
৹প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে কারন এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই ।


যে সকল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল এ দিনে—
১) বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম আবির্ভূত হন।
২)গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন রাজা ভগীরথ ।
৩) গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত লিখতে শুরু করেন।
৪) চন্দনযাত্রা শুরু হয়।
৫) সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৬) কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৭) যখন ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গেলেন দেখা করতে তখন তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেছিলন।
৮) দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং ভগবান তার সখীকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরণাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) রথ নির্মাণ শুরু হয় পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ।
১০) গঙ্গোত্রী-যমুনত-কেদার-বদরী এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয় আর বকি সময়  পুরীর  মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে।

সনাতন ধর্মে অক্ষয় তৃতীয়ার গুরুত্ব
* মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় বিষ্ণুর দশম অবতার পরশুরামের জন্ম হয়।* অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই সত্য যুগের অবসান ও ত্রেতা যুগের শুরু হয়।  * তাঁকে অন্ন ভোগ দেন অক্ষয় তৃতীয়ায় শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু সুদামা ।এই প্রিয় বন্ধুকে সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ করেন তার পরিবর্তে কৃষ্ণ।*বনবাসে থাকাকালীন  মহাভারত অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়াতেই শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে অক্ষয়পাত্র দান করে ছিলেন। যাতে বনবাসে তাঁদের কখনোও খাদ্যাভাব না হয়।  * অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই বেদব্যাস মহাভারত লেখা শুরু করেন।* অক্ষয় তৃতীয়াতেই ভগীরথের প্রার্থনায় স্বর্গ্য থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা।* পুরীতে জগন্নাথের রথযাত্রার জন্য রথ তৈরি শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই।  * প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই দিন কারও মৃত্যু হলে তাঁর অক্ষয় স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে।  * এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেছিলেন।এ দিনেই কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হওয়ায় বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা বা রূপো কেনা অত্যন্ত শুভ। এদিন সোনা বা রূপো কিনলে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এদিন সোনা কিনলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি ঘটে। এদিন থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করলে তা লাভজনক হবে বলে মনে করা হয়। এছাড়া অক্ষয় তৃতীয়ায় গৃহপ্রবেশ করা, দানধ্যান করা, গরুকে খাওয়ানো শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। পুরাণ মতে, অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে সমস্ত পাপ নাশ এবং সমস্ত ধরণের সুখ লাভ করা যায়। এদিন কোনও দান-পুণ্য করলে তার ফল অক্ষত থাকে।
এই বছরের কৃষ্ণভাবনায়  অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক এই কামনায়-- হরেকৃষ্ণ(সীমা সরকার)

অক্ষয় তৃতীয়া,অক্ষয় তৃতীয়া কি,অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য,অক্ষয় তৃতীয়া 2022,অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্য,অক্ষয় তৃতীয়া কবে,অক্ষয় তৃতীয়া,অক্ষয় তৃতীয়ার,অক্ষয় তৃতীয়া কেন পালন করা হয়,অক্ষয় তিথি,অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য কী,অক্ষয় তৃতীয়ার যথার্থ অর্থ কী,


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url