সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নমস্কার না হরেকৃষ্ণ বলা উচিৎ তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো। হরেকৃষ্ণ নাকি নমস্কার সেটি জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে সম্মান কি এবং সম্মান কত প্রকার কি কি?
 |
নমস্কার/সনাতনী আলাপন |
প্রত্যুথান --- কাউকে স্বাগত জানানোর জন্য উঠে দাঁড়ানো।
নমস্কার --- হাত জড়ো করে সৎকার করা।
উপসংগ্রহণ বা প্রণাম --- বয়জ্যেষ্ঠদের পা ছোঁয়া।
স্রাষ্টাঙ্গ --- পা, হাটু, পেট, কপাল ও হাতের সাহায্যে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে সম্মান জানানো।
প্রত্যাভিবাদন --- অভিনন্দনের বদলে অভিনন্দনের জবাব দেয়া।
শাস্ত্রে পাঁচ প্রকার সম্মানের মধ্যে এক প্রকার হল - নমস্কারম্।
নমস্কার কি? কাকে নমস্কার দেওয়া যাবে? কেন নমস্কার জানাতে হাত জোড় করা হয়? বৈদিক শাস্ত্র কি বলে জেনে নিন………
নমস্কার বা নমস্তুতেবাঃ সংক্ষেপে নমস্তে হচ্ছে বৈদিকযুগ হতে প্রচলিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্তৃক ব্যবহৃত অভিবাদনসূচক শব্দ। সাধারণত দুই হাত জোড় করে ‘নমস্কার’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয়ে থাকে বলে একে অঞ্জলি মুদ্রা বা প্রণামও বলা হয়।
‘নমস্কার’ শব্দটি এসেছে মূল সংস্কৃত শব্দ ‘নমঃ’ থেকে যার আভিধানিক অর্থ সম্মানজ্ঞাপনপূর্বক অবনত হওয়া।
ইদানিং সনাতন ধর্ম বিরোধী নানা কুপ্রচারণার অংশ হিসেবে একশ্রেণীর কুচক্রী মহল প্রচার করে চলেছে যে, যেহেতু, নমস্কার শব্দটি অবনত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সাধারণ জনগণকে নমস্কার জানানো উচিত নয়।
দেখা যাক, এ সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে!
“যো দেবো অগ্নৌ যো অপসু যো বিশ্বং ভূবনাবিবেশ য ওষধীষু যো বনস্পতি তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ॥”(শ্বেতাশ্ব তর উপনিষদ ২-১৭)
“যোগ যেমন পরমাত্মার দর্শনের সাধন বা উপায়, নমস্কারাদিও অনুরূপ বলিয়া তাঁহাকে নমস্কার জানাই।”
তিনি কিরুপে?তিনি দেব অর্থাত্ পরমাত্মার প্রকাশভাব। তিনি কোথায়? আছেন জলে,তৃণ -লতাদিতে, অগ্নিতে,জলে,তৃণ -লতাদিতে, অশ্বাথাদি বৃক্ষে, তিনি এই বিশ্বভুবনে অন্তর্যামীরুপে অণুপ্রবিষ্ট হইয়া আছেন।
তাই যখন কাউকে নমস্কার জানানো হয় তখন মূলত সর্বজীবে অন্তর্যামীরুপে অবস্থিত পরমাত্মাকেই প্রণতি নিবেদন করা হয়, কোন মনুষ্যদেহকে নয়। সুতরাং, নমস্কার সকলকেই জানানো যায়।
দুইহাত জোড় মূলত অহম্ ত্যাগ পূর্বক বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সংস্কৃতিভেদে করজোড়ে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায় যেমন দেবতাদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে সাধকরা মাথার উপরে দু’হাত জোড় করে থাকেআবার কোন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতে নমস্কার জানাতে বুকের বরাবর হাত জোড় করা একই সাথে পরমাত্মাকে প্রণতি ও আয়ুষ্মান(i.e.দীর্ঘায়ু কামনাকে নির্দেশ করে।
ইসকন বা অন্য ব্যক্তি যখন নমস্কার করবে তখন মুখে হরেকৃষ্ণ বা রাধে রাধে , যেটাই বলুক অঞ্জলি মুদ্রা প্রদর্শন করছেন কি না এটাই আসল ব্যাপার ।
আর আপনি মুখে শুধু নমস্কার বললেও যদি অঞ্জলি মুদ্রা প্রদর্শন না করেন তাহলেও সেটা নমস্কার বলে গন্য হবে না।
হরেকৃষ্ণ বলে নমস্কার করছি যখন তখন আমরা এটাই বলছি "যে কৃষ্ণের কৃপা আপনার উপর বর্ষিত হোক"
🌼🌼হরেকৃষ্ণ বলার মাহাত্ম্যঃ🌼🌼
🌿🌿শিক্ষণীয় গল্প 🌿
একদা এক সাধুবাবা রাজ্যস্থানের খরা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন অনেক গুলি হাঁস তার সাথে একই দিকে যাচ্ছে।
সাধুবাবা ও হাঁস গুলি যতদূর ই যাচ্ছে তারা কোনো নদী খুঁজে পাচ্ছিলো না।
তখন হাঁস গুলি সাধুবাবা কে দেখে বললেন,
হে সাধুবাবা আমরা খুবই তৃষ্ণার্ত আমরা কোনো জলের সন্ধান পাচ্ছি না।🌼
আপনি কি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাস করবেন তিনি কবে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, নদী-নালা জলাশয় গুলা আবার কবে জলে ভরে উঠবে?🌼
তখন সাধুবাবা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ শেষ করে ভগবানের নিকট দুই হাত উঠালেন। তখন এক দৈবীবাণী এলো, ''আপনি ওদের কে বলে দেন আগামী ৩০দিনে কোনো বৃষ্টি হবে না''।
🌿সাধুবাবা সম্বিত ফিরে আসলে উক্ত হাঁস গুলিকে বললেন, আগামী ৩০ দিন কোনো বৃষ্টি হবে না।
হাঁস গুলিএক বাক্য উচ্চারণ করলেন, ''হরেকৃষ্ণ'', আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।
আর এই কথাটার সাথে সাথে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হল। তারপর আকাশ হতে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ হলো। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে ইন্দ্রদেব তৎক্ষনাৎ আদ্দিষ্ট হয়ে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করালেন।
সাধুবাবাও হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল পান করতে লাগল এবং হাঁস গুলি নীচু জায়গায় জল জমে যাওয়া স্থানে নেমে গেল।
🌼''হরেকৃষ্ণ'' বলার ফলাফল হল পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছাই আমাদের ইচ্ছা।
🌿হরেকৃষ্ণ, বলার অর্থ হল, শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে হরন করুন। যা আপনার মঙ্গলই হবে।
নমস্কার, বলার অর্থ হল, আমার পাপ, পুন্য ও পার্থিব সবকিছু তোমায় দিলাম।
নমস্কার শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ''নমঃ'' থেকে।
নমঃ শব্দের অর্থ হল ভক্তিপূর্বক অবনত বা শরনাগত হওয়া।
🌿শ্বেতাশ্বর উপনিষদে ( ২/১৭) আছে যজ্ঞে যা আহুতি একমাত্র ভগবানকে দেবে কারন তিনি সর্বভূতে স্থিত। নমঃ দ্বারা তাই বুঝায়।
কি নমঃ দিব ? আমার যা কিছু আছে অর্থাৎ নমস্ক্রিয়া = নমস + কৃ +আ
তাই নমস্কার কেবল পরমেশ্বর ভগবানকে ও গুরুদেবকে দেওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু প্রনাম দেওয়া যাবে সবাইকে।
🌼🌿ইসকন আসার পরে যারা বুঝতে পেরেছে তারাই ''হরেকৃষ্ণ'' যার আর এক অর্থ রাধামাধব, অর্থাৎ ভগবানের নাম বলে একে অপরকে সম্বোধন করেন,
কারন, হরেকৃষ্ণ' উচ্চারন কর্তা ও শ্রোতা উভয়েই পাপ মুক্ত হন
🌼।। হরেকৃষ্ণ।।🌼
তাই একে অপরকে হরেকৃষ্ণ বলে সম্বোধন করুন।🌿
Nice