হিন্দু ধর্মে পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

আমার শিশুকাল থেকেই জেনে আসছি সৃষ্টিকর্তার পরে পিতা-মাতার স্থান।তাই পিতা-মাতার স্থান হলো পরম পূজনীয়। 

ধর্ম মতে একজন সন্তানের পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য

সনাতন ধর্মে সংস্কৃত শব্দ একটি বাক্য রয়েছে “জননী জন্ম ভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী।”  অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও শ্রেষ্ঠ। সত্যই তাই কারণ, পিতামাতার চেয়ে এ দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ কেউ নয়।বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়  “মাতা পিতার  পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ নিহিত। কেননা, ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই পিতামাতা সন্তানের জন্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন, ত্যাগ স্বীকার করেন। তাদের স্নেহে সন্তানরা বড় হয়, মানুষ হয়। তাই এ বিশ্বসংসারে পিতামাতার মতো আপনজন আর কেউই নয়।প্রায় সকল ধর্মের  বর্ণিত আছে,  “প্রথমে সৃষ্টিকর্তার  প্রতি কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে; তারপর কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে মাতা-পিতার প্রতি।  হিন্দু শাস্ত্রে আছে,  “পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম, পিতা পরমতপঃ।"  এছাড়া বিখ্যাত মনীষী ও সপ্রসিদ্ধ লেখক রাস্কিন বলেছেন,“ পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের তিনটি কর্তব্য রয়েছে  ক) আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য  খ) আমাদের পিতামাতার প্রতি কর্তব্য গ) মানবজাতির প্রতি কর্তব্য।”  পিতামাতার ঋণ কোনো সন্তান শোধ করতে পারে না। পিতামাতার ঋণের পরিমাণ লিখে বা বলে শেষ করা যায় না তাদের ঋণ অপরিশোধ্য।


ধর্মে সন্তানদের পিতা মাতার প্রতি সবচেয়ে করণীয় কাজ কি 

একবার এক ভক্ত তার পিতাকে মৃত্যু শয্যায় দেখতে গিয়েছিল। তাঁর সমস্ত আত্মীয় স্বজনও সেখানে ছিলেন। ডাক্তাররা বলে গেছেন যে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তিনি মারা যাবেন। বাড়ির লোকজন "কিংকর্তব্যবিমূঢ়",—কী করবে বা বলবে ভেবে পাচ্ছে না। পরস্পর পরস্পরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, "না, দুশ্চিন্তার কিছু নেই সব ঠিক হয়ে যাবে।"সবাই বিভ্রান্ত! এখন কী করা যায় তা কেউ ঠিক করতে পারছে না। ভক্তটি সবাইকে বললো, "তোমরা দয়া করে ঘর থেকে বাইরে যাও। আমাকে পিতার সঙ্গে একান্তে অন্তত দশ মিনিট থাকতে দাও।"সবাই বাইরে গেলে সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পিতাকে বললো,— "পিতা আপনি মারা যাচ্ছেন। আপনি দেহ রক্ষা করতে চলেছেন।" তারপর সে দু'তিন মিনিটের মধ্যে কৃষ্ণভাবনামৃতের কিছু সার কথা বাবার কানে শুনিয়ে দিল - জীবন কী এবং মৃত্যু কী!তার সন্তান বললো, এখন বাবা আপনি শ্রীকৃষ্ণের চরণাশ্রয় হয়েছেন তাকে স্মরণ করুন।যেহেতি আপনি এখন হয়তো মৃত্যুবরণ করছেন তাই আমি যা বলছি, আপনি ঠিক তাই জপ করুন। অন্তত একবার হলেও ভগবানের নাম উচ্চারণ করতে চেষ্টা  করুন।
এইবলে ভক্তটি তাঁর মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে জপ করালো,-
     হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে!
     হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!

তারপর তার পিতাকে সে তুলসীপত্র দিল, ফুলের মালা দিল, অল্প কৃষ্ণপ্রসাদও দিল। ভক্তটির পিতার মৃত্যুর সময় অন্যান্য আত্মীয় স্বজনেরাও উপস্থিত ছিল, কিন্তু তারা জানতো না কী বলতে হবে বা কী করতে হবে। তারা জানত না মৃত্যুর সময় ঠিক কী করা উচিত। তারা মনে করেছিল, আপনা হতেই বুঝি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু যখন একজন ভক্ত বাস্তব সুবুদ্ধি রাখে। সে ভালোভাবেই জানে, জীবন কী! মৃত্যি কী!পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার এই মানব জীবনকে নিয়ে সে খেলা করে বেড়ায় না বরং  সে সৃষ্টিকর্তার অনুগত্য থাকতে চেষ্টা করে।সে সর্বক্ষন,এমনকি মৃত্যুর সময়েও শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ গ্রহণ করে থাকে। সেটাই যথার্থ জীবন এবং কর্তব্য।
জয় শ্রীল প্রভুপাদ!
জয় শ্রীল পতিতপাবন গুরুমহারাজ!
এই আর্টিকেলটি নোট করা হয়েছে শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের প্রবচন থেকে। গুরুমহারাজ চৌঠা জানুয়ারি, ২০০৫ সালে শ্রীধাম মায়াপুরে উক্ত প্রবচনটি প্রদান করেছিলেন।


পিতামাতার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব
পিতামাতার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব 
এটুকু গল্প থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, প্রকৃত সন্তানদের তাদের পিতা-মাতার প্রতি ধর্মীয়  রীতিতে কিভাবে সম্মান করতে পারি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url