শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে আর্য সমাজীদের প্রশ্নের জবাব

কৃষ্ণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর  

প্রশ্ন। ১. অনন্ত... অসীম... অশেষ ক্ষমতাধর ঈশ্বর কি ক্ষুদ্র নারীযোনী দিয়ে জন্মলাভ সম্ভব?

২. ঈশ্বরের মৃত্যু হওয়া কি যুক্তিসঙ্গত? বা কিভাবে সম্ভব? আমি শুনেছি যে শ্ৰীকৃষ্ণ কোনএকজনের তীরের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। কিভাবে সম্ভব?

৩. ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কি "নাভি" আছে? যদি থাকে তো এটা থাকার কারণ কি?

তোমার ১ নং প্রশ্নের উত্তরে তোমাকেই প্রশ্ন করছি- কেউ যদি অনন্ত, অসীম অশেষ ক্ষমতাধর হয় তার পক্ষে অসম্ভবটা কী ?

২ নং প্রশ্নের উত্তরে বলছি- শ্রীকৃষ্ণকে তুমি শুধু একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছো, তাই তোমার মাথায় এই প্রশ্নের উদয় হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ গীতাতেই বলেছেন, আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই, শ্রীকৃষ্ণ যদি সাধারণ মানুষ হতো, তার পক্ষে কি এই কথা বলা সম্ভব ছিলো ? ঈশ্বরের পক্ষ থেকে পৃথিবীতে অবতার রূপী ভগবানদের জন্ম ও মৃত্যু আসলে তাদের জাস্ট আসা ও যাওয়া মাত্র।

তুমি আরো প্রশ্ন করেছো, আমি শুনেছি যে, শ্রীকৃষ্ণ কোনো একজনের তীরের আঘাতে মৃত্যু বরণ করেছেন, এটা কিভাবে সম্ভব ? তুমি এটা জাস্ট শুনেছো, কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটা কী, সেটা জানা বা বোঝার জন্য কখনও শাস্ত্র ঘেঁটে দেখো নি, এটাই তোমাদের মতো আর্যদের সমস্যা, তোমরা সমুদ্রের গভীরে ডুব না দিয়ে বা পর্বতের চূড়ায় না উঠেই সে সম্পর্কে মন্তব্য করো। এই প্রসঙ্গে একটু বলি- সেই তীরটি লেগেছিলো শ্রীকৃষ্ণের পায়ের তলায়, পায়ের তলায় তীরবিদ্ধ হলে কেউ কি মারা যায় ? ওটা ছিলো জাস্ট একটা উপলক্ষ্য মাত্র; রাম হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ, ত্রেতাযুগে বালিকে আড়াল থেকে তীর মেরে হত্যা করে, বালি ছিলো অধর্মী এবং শক্তিশালী, সম্মুখযুদ্ধে বালিকে হত্যা করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে রাম এই কৌশল অবলম্বন করেছিলো; কারণ, বালি, তার নিজের ছোট ভাই সুগ্রীবকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে সুগ্রীবের স্ত্রী রুমাকে অধিকার করে তাকে ধর্ষণ করেছিলো, এই ধরণের পাপীকে শাস্তি দেওয়া ছিলো অনিবার্য এবং সেটা যেকোনো প্রকারে যে হতে পারে, বালিকে রাম কর্তৃক আড়াল থেকে তীর মেরে হত্যা করা ছিলো তারই একটা নিদর্শন বা লোকশিক্ষা। 

শ্রীকৃষ্ণ গধাধর

কিন্তু কর্মের ফল ভোগ করতেই হয়, তাই ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীকৃষ্ণ যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ঘটিয়েছিলেন এবং কুরুবংশ ধ্বংসের কারণ হয়েছিলেন, সেই কর্মের ফলও গান্ধারীর অভিশাপের মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিয়ে নিজের যদুবংশের ধ্বংসকে মেনে নিয়েছিলেন। এই একই কারণে জরা ব্যাধ যখন পাখি ভেবে শ্রীকৃষ্ণের চরণকে তীরবিদ্ধ ক'রে তার নিকট গিয়েছিলো, তখন শ্রীকৃষ্ণ, জরাকে, রাম-সুগ্রীব-বালির ইতিহা্স বলে তাকে এভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রাম হিসেবে তিনি বালিকে আড়াল থেকে তীর মেরে হত্যা করেছিলেন, যেটা সঠিক পদ্ধতি ছিলো না, তুমি হলে সেই বালীর পুত্র অঙ্গদ, এ জন্মে ব্যাধরূপে জন্ম নিয়েছো এবং তোমার পিতা বালীকে আড়াল থেকে তীর মেরে হত্যা করার কারণেই এজন্মে আমি তোমার তীরে বিদ্ধ হয়ে ইহলীলা সমাপ্ত করার জন্যই তোমাকে এই কা্জে উদ্বুদ্ধ করেছি, এতে তোমার কোনো দোষ নেই, তুমি নিশ্চিন্ত মনে এখান থেকে প্রস্থান করতে পারো। এরপরই শ্রীকৃষ্ণ নিজ কান্তি দ্বারা আকাশ ব্যাপ্ত করে ঊর্ধ্বে স্বকীয় লোকে প্রয়াণ করেন।আশা করছি শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু যে সেই ব্যাধের তীরে হয় নি, সেটা ছিলো একটা উপলক্ষ্য মাত্র, সেটা তোমার মাথায় ঢুকেছে।

৩ নং প্রশ্নে তুমি বলেছো- ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কি "নাভি" আছে ? যদি থাকে তো এটা থাকার কারণ কী ?এই প্রশ্নের মাধ্যমে তুমি এই ইঙ্গিত করেছো যে, যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের নাভি আছে, সেহেতু সে মাতৃগর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছে এবং সেই কারণে সে ঈশ্বর নয়।শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তো পৃথিবীতে অবর্তীর্ণ হওয়া বা আসার সিস্টেমটা কী ? তিনি যখন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন তো তাকে কোনো না কোনো মাতৃগর্ভ অবলম্বন করতেই হবে। অবশ্য নৃসিংহ অবতারের মতো কোনো স্তম্ভ ফেটে আবির্ভূত হতে পারতেন, কিন্তু তাহলে কি জন্মের রাত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ১২৫ বছরের জীবনে তিনি যে লীলাগুলো দেখিয়েছেন, যে ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রকাশ দেখিয়েছেন, সেগুলো কি দেখাতে পারতেন এবং সেগুলোর মাধ্যমে যে লোকশিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো কি করতে পারতেন ? নিশ্চয় পারতেন না। তাই তিনি মাতৃগর্ভের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং মানুষ হিসেবে একটি সম্পূর্ণ জীবন যাপন করে তার আদর্শ, মানুষের জন্য রেখে গিয়েছেন।

তাই তোমার মতো- শ্রীকৃষ্ণের যে নাভী ছিলো সেটা সত্য, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে তুমি যে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছো, সেটা সত্য নয়। 

আশা করি বুঝেছো।

জয় হিন্দ

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url