আত্মা ও পরমাত্মা-হিন্দু ধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা

আত্মা ও পরমাত্মা

আধ্যাত্মবাদ আত্মা কি? পরমাত্মা কি? এই দুইয়ের মাঝে সমন্ধ কি? এই বিষয়ের নাম আধ্যাত্মাবাদ। আত্মা ও পরমাত্মা এই দুই বস্তু কোন ভৌতিক পদার্থ নয়। ইহা চর্ম চক্ষু দ্বারা দর্শন করা যায় না,কর্ণ দ্বারা শ্রবন করা যায় না, ইহা নাসিকার ঘ্রান থেকে মুক্ত,জিহ্বাগ্র আস্বাদন নেওয়া যায় না। ইহা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। পরমাত্মা এক তিনি একাধিক নন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ একই পরমাত্মার বিভিন্ন নাম। (একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি)ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬ অথ্যাৎ একই পরমাত্মাকে বিদ্বান ব্যাক্তিগন বিভিন্ন নামে ডেকে থাকেন। সংসারে জীবধারী প্রাণী অনন্ত। সেজন্য জীবাত্মা ও অনন্ত। ন্যায়দর্শন অনুসারে জ্ঞান,প্রযত্ন, ইচ্ছা,দ্বেষ,সুখ,দু:খ এই ছয় গুন আত্মার মধ্যে অবস্তিত।প্রযত্ন আত্মা আর জ্ঞানের স্বাভাবিক গুন, বাকি চার গুন আত্মা শরীর ধারণে লাভ করে। 

আত্মার উপস্থিতির কারণে এই শরীর প্রকাশিত। আত্মা ত্যাগ করতে সেই শরীর অপবিত্র,ও অপ্রকাশিত। এই সংসারও পরমাত্ম প্রাপ্তির সেই বিশেষ জ্ঞানের জন্য প্রকাশিত। আত্মা ও পরমাত্মা এই দুই বস্তুই অজন্মা,অনাদি অনন্ত। ইহা কখনো জন্মগ্রহণ করেন না, মৃতও হন না। আত্মকে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না, আত্মা পরমাত্মার অংশ নয়। আত্মা ও পরমাত্মা ইহা দুইটি আলাদা ও সতন্ত্র সত্তা। আত্মা অনু স্বরুপ সুতরাং অনেক ছোট, আর পরমাত্মা সর্ব্ব্যপক। আত্মার জ্ঞান সীমিত, আর পরমাত্মা সর্বজ্ঞ। তিনি সবকিছুর জানতা, সব বিষয়ে তিনি জ্ঞাত। তিনি অন্তর্যামী তাই সকলের মনের অবস্থা জানেন। আত্মার শক্তি সীমিত পরন্তু পরমাত্মা সর্বশক্তিমান। সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় সবকিছু পরমাত্মার ইচ্ছানুসারে হয়। পীর,পৈগম্বর,অবতার, এজেন্ট, দালাল ইত্যাদি তিনি রাখেন না, রাখার প্রয়োজন নেই,কারণ তিনি সর্বশক্তিমান।অবশ্যই তাহার কার্য সম্পাদনের জন্য অবতার বা দালালের প্রয়োজন নেই।তিনি সব কাজ নিজ অন্তর থেকে সমাধান করেন। তার বাহিরে কিছু নেই। ঈশ্বর যা কিছু করেন না কেন তাহা হাত, পা দিয়ে করেন না,কারণ তিনি লিঙ্গশরীর মুক্ত,অশরীরি। তিনি ইচ্ছা মাত্র সব কিছু করেন। ঈশ্বর আনন্দ স্বরুপ, তিনি রাগ,দ্বেষ থেকে মুক্ত।

আত্মা ও পরমাত্মা 

কাম,ক্রোধ,লোভ,মোহ, অহংকার তাকে লিপ্ত করতে পারে না। জ্ঞানিগন আনন্দস্বরুপ ঈশ্বরের উপাসনা করে আনন্দ প্রাপ্ত হন। ঈশ্বর সাকার নিরাকার এর অতীত কোন বস্তু। শুদ্ধ মন দ্বারা তাকে জানা সম্ভব। যেমনি ভাবে আমরা সুখ,দুঃখ মন দিয়ে অনুভব করি। আত্মা যখন শরীর প্রাপ্ত হয় তখন সে সতন্ত্র ভাবে কার্য করে। দেহান্তে সেই কর্ম অনুসারে পরমাত্মা তাকে সুখ,দুঃখ তথা অন্য জন্ম প্রদান করে। পরবর্তী জন্মে সে স্বভাব অনুযায়ী কর্ম করে। যদি সে শরীর অবস্থায় আত্মা মন্দ কর্ম করে থাকে তাহলে সে নিম্ন যোনী প্রাপ্ত হয়। তখন তার মাঝে ভালো মন্দের বিচার থাকে না। নিম্ন যোনী প্রাপ্ত জীব ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে। কিন্তু ভোগ আর কর্ম দুটোরেই মিশ্রন মানব যোনীতে।এই যোনীতে ভালো মন্দের বিচার সম্ভব এবং ঈশ্বর ভজনার উত্তম স্থান। আমি আত্মা, শরীর নই। এই শরীর রুপ সংসার থেকে আত্মা ঈশ্বর ভজন করে ও সুখ দুঃখাদি ভোগ করে। 

জীবাত্মা নয় স্ত্রী, নয় পুরুষ আর নয় নপুংসক। ইহা পূর্বজন্মে যেমন যেমন কর্ম করে, তেমন শরীর প্রাপ্ত হয় পরবর্তী জন্মে। (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ্) বর্তমানে মানুষ যেভাবে ধুপ,ধুনা, গন্ধ,খাবার,পশুবলি ইত্যাদি দিয়ে পূজা করেন সেটাকে পূজা বলা যায় না। প্রকৃত পূজা হলো নিজ আত্মাকে পূর্ণ রুপে জাগরন করা। ঈশ্বরে আজ্ঞা পালন করা আর সত্য ও ন্যায়ের আচরন করা ইহাই ঈশ্বরের পূজা। উপনিষদে মানুষের শরীর কে রথের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আত্মা হচ্ছে সেই রথের মালিক, বুদ্ধি সারথি, মন লাগাম,ইন্দ্রিয় গুলো হলো অশ্বসমুহ। রথের সারথি যদি উত্তম না হন ঠিক ভাবে যদি লাগাম না ধরেন তাহলে অশ্বসমুহ বিপথে ধাবিত হয়। ঠিক তেমনি মনরুপ লাগাম সংযত না হলে ইন্দ্রিয় সমুহ বিপথে ধাবিত হয়,ঈশ্বর কে জানতে পারে না। তাই শুদ্ধ মনে ঈশ্বরের উপাসনা করতে হয়। পরমাত্মা আমাদের মাতা,পিতা,মিত্র। তাই তার কাছে আমরা প্রার্থনা করব তিনি সকল প্রাণী কে সৎমার্গে প্রেরণ করুক। ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। 

কৃষ্ণচন্দ্রগর্গজীর হিন্দি আর্টিকেল থেকে বাংলা অনুবাদ
আমি যে আত্মা তার প্রমাণ কি?সৎউওরঃআমি শরীর নই-আমি মন নই-আমি বুদ্ধি নই-আমি আত্মা।এটার সপক্ষে প্রমাণ আমরা ভগবদ্‌গীতা আদি শাস্ত্র গ্রন্থ থেকে পেয়ে থাকি।গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, “জীবের আসল স্বরূপ হচ্ছে সে আমার নিত্য সনাতন অংশ এবং চিন্ময় আত্মা,"।একটি শিশুকে কেউ যদি  দুই বছর বা এক বছর বয়সে তাকে দেখে এবং ৪০ বছর বয়সে তাকে দেখে তাহলে সে দেখবে যে ইতিমধ্যে শিশুটির রূপ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে,তার দেহের, মনের, বুদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে।তবুও সেই লোকটি একই লোক অর্থাৎ তার মধ্যে একটিই সত্তা রয়েছে, যার পরিবর্তন হয় না। সেইটিই হচ্ছে আত্মা, সেটিই হচ্ছে জীবের আসল স্বরূপ, ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র। আর একটি প্রমাণ হচ্ছে – ধরুন আপনার দিদিমা বাড়ীতে শুয়ে আছেন দেখে আপনি বাজার করতে গিয়েছেন। বাজারে আপনি শুনতে পেলেন যে আপনার দিদিমা মারা গেছেন। 

বাড়ী ফিরে এসে দেখছেন বাজার যাওয়ার আগে দিদিমা যেভাবে খাটের উপর শুয়ে ছিলেন এখনও ঠিক সেই রকম ভাবেই শুয়ে আছেন এবং তাঁর চার পাশে ঘিরে আপনার বাবা বলছেন,ও আমার মা চলে গেলো এদিকে ভাই বলছে দিদিমা চলে গেল,মা বলছে শ্বাশুড়ি চলে গেলো ইত্যাদি।আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার দিদিমা খাটে শুয়ে আছে, আবার সবাই চিৎকার করছে,মা চলে গেল দিদিমা চলে গেল ইত্যাদি।এখন প্রশ্ন হতেই পারে–কে চলে গেল?যে চলে গেলো আত্মা হচ্ছে সেইটাই।আত্মা চলে গেলে শরীর জড় অবস্থা প্রাপ্ত হয়। শরীরে কোন চেতনার লক্ষণ দেখা যায় না, অর্থাৎ শরীরটা অচেতন হয়ে যায়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমি এই দেহ নই, মন নই,আমি হচ্ছি চিন্ময় 'আত্মা'।
★★কিছু ছোট প্রশ্ন উত্তর ★★

আত্মা ও পরমাত্মা কি
পরমাত্মা শব্দটি দ্বারা কোন সীমাহীন জীবন অপরদিকে আত্মা শব্দটি সাধারণত স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে বোঝায়।

আত্মা
সতন্ত্র ব্যাক্তিকে সাধারণ অর্থে আত্মা বলে।তবে ধর্মীয় মতে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে।

পরমাত্মা
সীমাহীন চেতনা, সর্বোচ্চ আত্মা বা সর্বজনীন আত্মা বা সীমাহীন মহাকাশে সীমাহীন সত্তাকে প্রকাশ করে, এর অর্থ সমস্ত আত্মার আত্মা বা পরমাত্মা

জীবাত্মা ও পরমাত্মা
দেহধারী আত্মা, প্রাণপুরুষ, বিভিন্ন প্রাণীর দেহস্থ  এগুলি সাধারণত জীবআত্মা পরমাত্মাকে বোঝায়।

আত্মা ও পরমাত্মা
ব্যক্তিত্বের কেন্দ্র,আত্মা, উপাধিগ্রস্ত, পরমাত্মা হলো প্রাণের দেহস্ত প্রাণপুরুষ ইত্যাদি কে আত্মা পরমাত্মা বলে।

আত্মা ও পরমাত্মার আকার ও অবস্থান
যেহেতু আত্মা ও পরমাত্মা চোখে দেখা যায় না তাই এর আকার ও অবস্থান আধ্যাত্মিক।

আত্মা কি?
আত্মা হলো স্বতন্ত্র ব্যক্তি। আত্মা সম্পর্কে উপরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আমার শরীরে আত্মা ও পরমাত্মা বিরাজ করছেন কি করে বুঝবো
আমার শরীরে আত্মা ও পরমাত্মা বিরাজ করছে তা বোঝার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে আগে অবশ্যই জানতে হবে এবং তার অনুগত হতে হবে।এটি একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার।

জীবাত্মা ও পরমাত্মা সম্পর্ক
জীবাত্মা ও পরমাত্মা একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবাত্মা ও পরমাত্মা একসাথে একটি মালার সুতোর মতো।

আত্মা পরমাত্মার ব্যাখ্যা
আত্মা পরমাত্মার ব্যাখ্যা উপরের অংশে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জীবাত্মা ও পরম আত্মার সম্পর্ক,মৃত্যুর পর আত্মা কি করে

মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় যায়
একটা সার্কেলের মধ্যে বিদ্যমান।অতএব আত্মার কোন মৃত্যু নেই।

মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় থাকে
মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় নতুন জীবনে রূপান্তরিত হয়। এটা একটা সার্কেল।

কোন মন্ত্র জপ করলে জীবাত্মা ও পরমাত্মা মিলিত হয়
কোন মন্ত্র জপ করলে জীবাত্মা ও পরমাত্মা মিলিত হয় এর আধ্যাতিক ব্যাখ্যা থাকলেও বাস্তবে তেমন কোন ফল পাওয়া যায় না।

আত্মা কি আছে
আত্মা  সত্যি রয়েছে।এর সপক্ষে শতভাগ প্রমান রয়েছে। হ্যা আত্মা রয়েছে এবং আত্মা চিরন্তন সত্য।

আত্মা কি সত্যিই আছে
আত্মা যে সত্যি রয়েছে তার সম্পর্কে হাজারো প্রমান বিশ্বমন্ডলে আছে।

আত্মা মন ও দেহ
আত্মা মন ও দেহ  বন্ধনীর এর মত কাজ করে।এগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কীত।

পরমাত্মা কি
যে জীবনে কোন সীমানা /সীমা  নেই তাই  পরমাত্মা।

পরম আত্মা
অসীমতা  হলো পরম আত্মা।

আধ্যাত্মাবাদ
আধ্যাত্মাবাদ হলো  আত্মা ও পরমাত্মা


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url