চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন বৃত্তান্ত ও মহাপ্রভুর বাণী সমূহ

চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন বৃত্তান্ত ও মহাপ্রভুর বাণী সমূহ।   চৈতন্য মহাপ্রভু কে ছিলেন?  " প্রভু নিত্যানন্দ "দ্বাপরে শ্রীকৃষ্ণের দাদা ছিলেন ৮ দিনের বড় বলরাম ৷ কলিতে চৈতন্যলীলায় বলরামের অবতার হয়ে গৌরাঙ্গের প্রায় দশ বছর আগেই ধরাধামে এসেছিলেন প্রভু"নিত্যানন্দ" ৷ "নিতাই - গৌর" বা " নিমাই - নিতাই "নিত্য সম্বন্ধ যুক্ত ৷ কৃষ্ণের কাছে পৌঁছাতে গেলে যেমন বলরামকে স্মরণ করতে হয় , তেমনি নিতাই ছাড়া চৈতন্যলাভ সম্ভব নয় ৷ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভাষ্য অনুযায়ী দয়াল ঠাকুর নিতাই ছাড়া নিমাইকে বোঝা যায় না ৷ তিনি কলিযুগপাবনাবতার , পরম দয়াল ও করুণাময় ৷ গৃহস্থ আশ্রমে তাঁর নাম ছিল কুবের ৷মাত্র ১২ বছর বয়সে সন্ন্যাসী লক্ষ্মীপতি তীর্থের সহচর হয়ে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ান ৷ এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী বা অবধূত তাঁর নাম দেন "নিত্যানন্দ" ৷মহাপ্রভু কে  "অবধূত" সন্ন্যাসরা যেখানে খুশী যেতে পারন ৷ আবার বিয়ে করে সংসারীও হতে পারেন ৷তাই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের আদেশে নিত্যনন্দ বিবাহ করেছিলেন ৷তাঁর গুরুদেব ছিলেন মাধবেন্দ্র পুরী ৷ তিনি ভক্তিযোগ ও বেদান্ত দর্শনে বিশ্বাসী এবং কৃষ্ণপ্রেমী ছিলেন ৷বৃন্দাবন দাস লিখেছেন। " মহাবধূত বেশ প্রকান্ড শরীর ৷ নিরবধি ভক্তিরসে দেখি মহা ধীর ৷৷ অহর্নিশ বদনে বোলয়ে কৃষ্ণনাম ৷ ত্রিভুবনে অদ্বিতীয় চৈতন্যের ধাম ৷ নিজানন্দে ক্ষণে ক্ষণে করয়ে হুঙ্কার ৷
চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন বৃত্তান্ত
মহামত্ত যেন বলরাম অবতার "৷৷ তিনি শ্রীচেতন্যের প্রধান পার্ষদ বা সঙ্গী ৷তাঁর সরলতা ও মহাপ্রভুর প্রতি ভালোবাসা তাঁর রহস্যময় জীবনকে ঢেকে দেয় ৷তিনি বৈষ্ণবীয় পঞ্চতত্বের অন্যতম ৷তিনি ও তাঁর সহচর ১২ মিলে গোপাল হরেকৃষ্ণ নামে সবাইকে মাতোয়ারা করে৷নরোত্তম দাস ঠাকুর লিখেছেন , *নিতাই পদ কমল , কোটি চন্দ্র সুশীতল যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায় ৷ হেন নিতাই বিনে ভাই , রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই ৷ দৃঢ় করি ধর নিতাইয়ের পায় ৷*সপ্তগ্রামের(৭টি গ্রামের)ধনী বণিকরা ও রড় বড় ব্যবসায়িকরা তাঁর শিষ্য হলে গৌড়ীয় বৈষ্ণব মত ব্যাপকতা লাভ করে ৷ " জয় জয় কৃষ্ণচৈতন্য কৃপাসিন্ধু ৷ জয় জয় নিত্যানন্দ অগ্রগতির বন্ধু ৷ নিত্যানন্দে যাহার তিলেক দ্বেষ রহে ৷ ভক্ত হইলেও সে কৃষ্ণের প্রিয় নহে ৷৷ যদ্যপিহ নিত্যানন্দ ধরে সর্বশক্তি ৷ তথাপিহ কা'রেহ না দিলেন বিষ্ণুভক্তি ৷৷ চৈতন্যের কৃপায় হয় নিত্যানন্দে রতি ৷ নিত্যানন্দে জানিলে আপদ্ নাহি কতি ৷৷" ( শ্রীচৈতন্য ভাগবত , আদিলীলা , নবম অধ্যায় ) সম্ভবতঃ ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারী মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে পান্ডবদের অজ্ঞাতবাস খ্যাত বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর ( তারাপীঠের কাছে) থানার একচক্র গ্রামের রাঢ়ী শ্রেণীর শান্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ মুকুন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়( হাড়াই পন্ডিত) ও পদ্মাবতীর সন্তান নিত্যানন্দের জন্ম ৷বৃন্দাবন দাস লিখেছেন , " মাঘ মাসে শুক্লা ত্রয়োদশী শুভদিনে ৷ পদ্মাবতী গর্ভে একচাকি নামে গ্রামে "৷ নরহরি চক্রবর্তী "ভক্তিরত্নাকর" গ্রন্থে লিখেছেন , *রাঢ় দেশে একচক্রা নামে গ্রাম ধন্য ৷ যঁহি নিত্যানন্দরাম হৈলা অবতীর্ণ ৷৷ জয় নিত্যানন্দ , একচক্রার ঈশ্বর ৷ চৈতন্যের একদেহ নিত্যানন্দরাম ৷ তাঁর জন্মস্থান রাঢ়ে একচক্রা গ্রাম ৷৷*তিনি নিজ ঘর থেকে "হরি নাম" মহামন্ত্র প্রচারের মূল ভূমিকা নেন৷নিত্যানন্দ প্রভু ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে কালনা নিবাসী সূর্যদাস সরখেলের দুই কন্যাবসুধা ও জাহ্নবীকে বিবাহ করেন ৷ তখন তাঁর বয়স ছিল 56 বছর ৷এই স্থানে তাঁদের বিয়ে ( ঐ জায়গার ছবি ) হয় ৷ তখনকার কুঞ্জবাটী বর্তমানের খড়দহে তিনি সংসার পাতেন ৷প্রথমা পত্নী বসুধার গর্ভে তাঁর একটি কন্যা গঙ্গা ও একটি পুত্র বীরভদ্রর জন্ম হয় ৷ সৎমা বা মাসি জাহ্নবী দেবী বীরভদ্রকে বৈষ্ণব মতে দীক্ষা দেন ৷ ঝামটপুর বহরানের যদুনন্দন আচার্যের মেয়ে নারায়ণীর এবং শ্রীমতীর সাথে বীরভদ্রের বিবাহ দেন ৷৷ কিন্তু জাহ্নবী দেবী ছিলেন নিঃসন্তান ৷যার কারনে তিনি রামাই বা রামচন্দ্র গোস্বামীকে( বংশীবদনের ছেলে) দত্তক নেন ৷ রামাইয়ের বংশধর হলেন খড়দহের গোস্বামীরা ৷এখানে নিত্যানন্দ কাত্যায়ণী রূপে দুর্গা পুজো শুরু করেন ৷ যা ৪৯১ বছর ধরে এখনও হয় ৷১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেহ রাখেন ৷ তাঁর ও বসুধা দেবীর সন্তান বীরভদ্র বা বীরচন্দ্রের নামে একচক্র হয়ে যায় " বীরচন্দ্র পুর" ৷ বলাগড়ের গোস্বামীরা তাঁদের কন্যা গঙ্গা দেবীর উত্তরসুরী ৷' নিত্যানন্দ বলিতে হয় কৃষ্ণ প্রেমোদয় ৷আউলার সর্ব অঙ্গ , অশ্রু গঙ্গা বয় '৷ নিতাই গ্রামে - নগরে হরিনাম প্রচার করেন ৷ তিনি প্রকৃতপক্ষে শুদ্ধ কৃষ্ণ ভক্তি দান করেন ৷ তাঁর কৃপাতেই জগাই - মাধাই য়ের মত দুই দুরাচার ও মদ্যপ দুই ভাই পরিবর্তিত হয়ে পরিণত করেন সাধক বৈষ্ণবে ৷ জয়পতাকা স্বামী বলেছেন ,' নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপা হইলে মহাপ্রভুর কৃপা হয় , মহাপ্রভুর কৃপা হইলে রাধা কৃষ্ণ লাভ হয় '৷ 'জয় শ্রীকষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ ৷/ শ্রী অদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর -ভক্তবৃন্দ '৷প্রভু নিত্যানন্দের গায়ত্রী মন্ত্র হলো-ওঁ ক্লীং নিত্যানন্দায় বিদ্মহে ধীমহি তন্নো নিত্যানন্দৌ প্রচোদয়াৎ ★★ তাঁকে প্রণতি জানাই - ★নিত্যানন্দম অহম নৌমি , সর্বানন্দ করম পরম ৷ হরিনাম প্রদম দেবম , অবধূত শিরোমণিম "৷ "নিত্যানন্দ মহং বন্দে কর্ণে লম্বিত কুন্ডলম , চৈতন্য গজ রূপং প্রভৃতিচৃত ভূতলং "৷ "নিত্যানন্দ ! নমস্তুভ্যং প্রেমানন্দ প্রদায়িনে ৷ কলৌ কল্মষঃ নাশায় জাহ্নবা পতয়ে নমঃ।★ জয় নিতাই ৷
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url