৯৪ বছরে নৈহাটির ঐতিহ্যশালী বড়মা
৯২ বছরে পড়ল নৈহাটির অরবিন্দ রোডে ধর্মশালার মোড়ের ‘বড়মা’–র পুজো। যে পুজোর মূলমন্ত্র, ‘ধর্ম হোক যার যার, বড়মা সবার’। প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় সারা রাজ্য থেকে কয়েক লক্ষ ভক্ত সমাগম সেখানে।ইতিহাস বলে, ৯৫ বছর আগে, ভবেশ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু নবদ্বীপে রাস দেখতে যান। সেখানে রাধাকৃষ্ণের বিশাল যুগল প্রতিমা দেখে ভবেশ চক্রবর্তী মনস্থির করেন, তাঁরাও এমনই উঁচু মাতৃপ্রতিমা বানিয়ে কালী পুজো শুরু করবেন। এরপরই নৈহাটি ফিরে ২১ ফুট লম্বা কালী প্রতিমা তৈরি করে প্রথমবার পুজো শুরু করেন তাঁরা। বৈষ্ণবমতে, দক্ষিণাকালীরূপে পূজিতা হন ‘বড়মা’। তাই কোনওরকম বলিদানের প্রচলন নেই এই পুজোয়। প্রতিষ্ঠাতার নামেই সেসময়, এই পুজোর নাম ছিল ‘ভবেশ কালী’৷ উচ্চতার কারণেই পরবর্তীকালে তা পরিচিতি পায় ‘বড়মা’ নামে। পুরনো ঐতিহ্যকে বজায় রেখে আজও পুজোর ভোগ আসে চক্রবর্তী বাড়ি থেকেই। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন হয় কাঠামো পুজো। তারপরই ১৫ দিনের মধ্যে ২১ ফুট কালী প্রতিমা তৈরি হয়। ভক্তদের দান করা অলঙ্কারে সাজানো হয় দেবী মূ্র্তি।
বড় মা |
দেবীর মুকুট, চাঁদমালা, মল রুপোর। ত্রিনেত্র, জিহ্বা, ভুরু, নাক, গালের চন্দনচর্চা সোনার। এছাড়া টিকলি থেকে শুরু করে সারা গায়ে থাকে রকমারি সোনার গয়না। পুজো কমিটির সম্পাদকদের কথায়, ‘এইমুহূর্তে মায়ের ১০০ ভরি সোনার আর ২০০ ভরি রুপোর গয়না আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মায়ের কাছে মানসিক করেন, দন্ডী কাটেন। তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হলে পর, তাঁরাই মাকে অলঙ্কার দান করেন। আসলে বড়মা কাউকে ফেরান না। সবার মনস্কামনা পূর্ণ করেন।’ কালীপুজোর দিন প্রায় ২০০০ কেজির খিচুড়ি এবং পোলাও ভোগ রান্না হয় বড়মার রন্ধনশালায়। এছাড়া সারা বছরই ভক্তদের জন্য ভোগের আয়োজন থাকে। উদ্যোক্তারা জানালেন, কোনও চাঁদা ছাড়া শুধু ভক্তদের দান করা অর্থেই পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মেও জড়িয়ে আছে বড়মা পুজো কমিটি। প্রতিবছর কয়েকশো কিলো ফল কালীপুজোর দিন বড়মাকে দেন ভক্তরা। পরদিনই তা স্থানীয় হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম এবং অনাথ আশ্রমে বিলি করা হয়। ভক্তদের দান করা কয়েক হাজার শাড়ি রাসপূর্ণিমার দিন দুঃস্থদের দান করা হয়। সম্প্রতি ভক্তদের দান করা টাকায় অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবাও শুরু করেছে পুজো কমিটি। এছাড়াও অনেক মানবকল্যাণকর সেবা চালু করেছে এই পূজা কমিটি। বড়মা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন এই সমাপ্তি ঘোষনা করছি।