ধর্ম সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যা
ধর্ম কি?
ধর্ম হল লিপিবদ্ধ সুবিন্যস্ত প্রত্যাদেশসমূহ, যেগুলো সাধারণত ঈশ্বর-প্রত্যাদিষ্টদের মাধ্যমে বাহিত ও প্রচারিত, ঈশ্বরাজ্ঞা ও ধর্মানুষ্ঠান-নির্ভর আচার, আচরণ ও প্রথাসমূহের প্রতি বিশ্বাস-নির্ভর আনুগত্য; যা সাধারনত "আধ্যাত্মিক" ব্যাপারে "দৃঢ় বিশ্বাস" এঁর সাথে সম্পর্ক যুক্ত; এবং বিশেষ পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত ঐতিহ্য, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা, রীতি-নীতি ও প্রথা কে মানা এবং সে অনুসারে মানবজীবন পরিচালনাকে বোঝায়।ধর্মীয় চর্চার মধ্যে আচার অনুষ্ঠান, নৈতিক বক্তৃতা, স্রষ্টা অথবা দেবদবীর প্রতি বন্দনা, আত্মত্যাগ, ধর্মীয় উৎসব, সমাধি, দীক্ষা, শেষকৃত্য করা, ধ্যান, প্রার্থনা, গান, শিল্পকলা, নাচ, জনগণের সেবা,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাওয়া অথবা অন্যান্য সংস্কৃতি পালন করাকে ধরা যেতে পারে। ধর্মের ইতিহাস এবং বর্ণনামূলক ধারা থাকে যেগুলো পবিত্র হিসেবে ধারনা করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ, ধর্মীয় প্রতীক এবং পবিত্র স্থান থাকতে পারে যেগুলোর বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনের অর্থ দান করা.
![]() |
শিব পার্বতী/সনাতনী |
১.অধিকাংশ মানুষ মনে করে ধর্ম হচ্ছে কিছু বিশ্বাস এবং আচার ব্যবহারের সমষ্টিমাত্র।
২.নাস্তিকদের মতে ধর্ম হচ্ছে সেকেলে একটি জিনিস, যা শেখায় কেবল অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার। যত কিছু খারাপ তার উৎপত্তি নাকি ধর্ম থেকে!
এখন আমরা দেখবো ধর্ম দ্বারা প্রকৃত পক্ষে কি বোঝায়!
ধর্ম একটি সংস্কৃত শব্দ, যার উৎপত্তি সংস্কৃত ধাতু
‘ধৃ’ হতে, এই ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা। অর্থাৎ যে বস্তু
যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাই ঐ বস্তুর ধর্ম।
যেমন: আগুনের ধর্ম তাপ, বরফের ধর্ম শৈত্য ইত্যাদি।
তেমনি মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব। এই মনুষ্যত্বের
মাঝে কী কোনো অন্ধবিশ্বাস আছে? বাস্তবে নেই।
#বৈশেষিক_দর্শনে কণাদ মুনি ধর্মের সঙ্গা দিয়েছেন
এভাবে, ‘য়তো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্ম’ -বৈশেষিক দর্শন ১ম অধ্যায়, ১ম আহ্নিক, ২য় সূত্র
অর্থাৎ যা দ্বারা যথার্থ উন্নতি এবং পরম কল্যাণ লাভ হয় তাই ধর্ম।
তাহলে আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন যা দ্বারা কেবল আমাদের উন্নতি নয়, জগতের কল্যাণও নিহিত আছে তাই ধর্ম। ধর্ম কোনো বিশ্বাস, অপবিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের সমষ্টি নয়। এখন আমরা যদি ধর্মের লক্ষণগুলো দেখি তবে তা আরো স্পষ্ট হবে।
#মনুসংহিতার ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৯২তম শ্লোকে
ধর্মের লক্ষণ বর্ণিত হয়েছে এরূপ-
"ধৃতিঃ ক্ষমা দমোস্তেয়ং শৌচম্ ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
ধী র্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্ম লক্ষণম্।।"
অর্থাৎ, ১.ধৃতি(যা পেয়েছ তাতেই সন্তুষ্ট
থাকা তথা সর্বদা ধৈর্য অবলম্বন করা), ২.ক্ষমা, ৩.দম(আত্ম নিয়ন্ত্রণ তথা অহংকার হতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা), ৪.অস্তেয় (অনৈতিক বিষয় তথা ছল, কপটতা, বিশ্বাস ঘাতকতা ইত্যাদি হতে বিরত থাকা), ৫.শুচিতা (শারীরিক ও মানসিক ভাবে সব সময় পবিত্র তথা পরিষ্কার থাকা), ৬.ইন্দ্রিয় নিগ্রহ (শরীরের ইন্দ্রিয়সমূহকে লোভ্য বস্তু থেকে বিরত রাখা), ৭.ধী(মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য বুদ্ধি নাশক পদার্থ, কুসংসর্গ, আলস্য ও প্রমাদ ইত্যাদি ত্যাগ করে বুদ্ধির উন্নতি সাধন), ৮.বিদ্যা(সকল বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা), ৯.সততা(যে পদার্থ যেরূপ তাকে সেইরূপ মনে করা, সেইরূপ বলা এবং সেইরূপ করা), ১০.অক্রোধ (রাগ বা ক্রোধ পরিত্যাগ করে শান্তি প্রভৃতি গুণ গ্রহণ)। এই দশটি হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ।
এখানে কোনো অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার পেয়েছেন
কেউ। বরং এই দশটি লক্ষণ অর্জন করলে আপনি প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবেন। তবেই আপনার ও জগতের পরম কল্যাণ ও উন্নতি সাধিত হবে।
তাই যারা ঘুম থেকে উঠে ঘুমুতে যাবার আগ পর্যন্ত
কেবল ধর্মকে গালাগাল করে প্রকৃত পক্ষে তারা
জানেই না ধর্ম কী ও এর লক্ষণ কী!
তাই বলি আগে জানুন ধর্মকে। ধর্ম ছাড়া এ জগতের কল্যাণ বা উন্নতি সম্ভব নয়। কারণ এই জগতে মানুষের দ্বারা কল্যাণকর যা কিছুই হচ্ছে তাই মূলত ঐ মানুষের ধর্ম।
পরিশেষে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট সকল জীবকুলের সুস্থতা প্রার্থনা করি। হে প্রভু! আপনি সকলের মঙ্গল করুন।
![]() |
shiv parboti/sonatony |
ওঁ শান্তি! শান্তি!! শান্তি!!!
(ত্রিবিধ দুঃখের অবসান হোক)