ষোড়শ সংস্কার বা দশবিধ সংস্কার

সংস্কার কি?
সংস্কার এমন কিছু কাজকর্ম যা ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর ও সাবলীন করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।সংস্কার হলো  নিজেকে  দোশত্রুটি মুক্ত,পবিত্র এবং নির্মল করতে যে কাজ করা হয় তাকেই সংস্কার বলে। প্রতিটা পরিবার চায় তাদের সন্তান একজন ভাল চরিত্রের মানুষ হিসাবে গড়ে উঠুক। যে সকল অনুষ্ঠান মানুষের জীবনকে ধর্মীয় পরিবেশে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা  করে তাই সংস্কার।হিন্দুধর্মে ষোলটি সংস্কার বিদ্যমান রয়েছে।সংস্কার এমন কিছু কাজকর্ম যা ভবিষ্যত জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে, ব্যাক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং চারপাশের পরিবেশ তথা শিশুর চরিত্র গঠনে ভুমিকা রাখে।
যে কোন ভাল প্রভাব সুন্দর চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। এই ষোলটি সংস্কার মানুষের জীবন কে উন্নত করে, খারাপ সঙ্গ থেকে রক্ষা করে এবং তাকে একজন সু-নাগরীক হিসাবে গড়ে তোলে। 
ষোড়শ সংস্কার কি এবং ষোড়শ সংস্কার কিভাবে করা হয়
সংস্কার/thehindu9.blogspot.com

যখন কেও একটি আরাম দায়ক চেয়ার তৈরি করতে চায় নিশ্চয় সে আজেবাজে কাঠ দিয়ে তা তৈরি করতে চাইবে না। খারাপ কাঠ কে মসৃন করে, সুন্দর ভাবে পরিষ্কার করে, তারপর ঘরের জন্য আসবাব তৈরি করে। জন্মের পর থেকে এইসব সংস্কার মানুষকে একজন পূর্ণ মানুষে পরিনত করে। আমরা ঘরে ধূলা ময়ল ঝাড়ু দেই। নিজেদের কাপড় পরিষ্কার করি।ঘরবাড়ী, কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে আমাদের খারাপ লাগে। আমরা প্রতিদিন স্নান করি শরীর পরিষ্কার করার জন্য। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার চেষ্টা করি কারন এর অভাবে আমাদের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এই বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা জীবনের একটি অংশ কিন্তু মন, চিন্তা এবং আত্মার পরিচ্ছন্নতা বেশি প্রয়োজন । 

মন কে অবশ্যই সত্যের অনুসন্ধানে ব্যকুল থাকতে হবে; দয়ালু এবং উদার হতে হবে; বোধবুদ্ধি সততায় পূর্ণ থাকতে হবে; আত্মাকে অবশ্যই পাপ শূণ্য হতে হবে।মহৎ জীবন গঠনে এগুলো প্রয়োজন।

 মন, বোধবুদ্ধি এবং আত্মার সর্বচ্চ পবিত্রতা অর্জনের জন্য ঋষিরা ষোলটি সংস্কারের কথা বলেছেন।প্রাথমিকসংস্কার জীবনের শুরু নির্দেশ করে সর্বশেষ সংস্কার মৃত্যুর সময় পালন করা হয়ে থাকে।আমরা এই সংস্কার গুলো পালন করি যাতে ভগবানের আশীর্বাদ পেয়ে সত্য ও ভালোর প্রতীক রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। সংস্কার একজন প্রকৃত মহান মানুষের মর্যাদা কে আরও বৃদ্ধি করে।

নিজেকে দোশত্রুটি মুক্ত,পবিত্র এবং নির্মল করতে সংস্কার 
 ১৬ টি সংস্কার হচ্ছে:
সংস্কার
renovation/thehindu9.blogspot.com
গর্ভদানঃ  
রীতিঅনুসারে বিবাহের পর স্বামী স্ত্রী সন্তান জন্মদানের জন্য সকলের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন। গর্ভদান সংস্কার দ্বারা উভয়ই স্ব্যাস্থবান, মহৎ এবং উদার হৃদয়ের সন্তান প্রার্থনা করেন।

পুংসবনঃ  
এই সংস্কার পালন করতে হয় গর্ভদানের ৩ মাস পর।ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয় গর্ভাবস্থায় যেন সন্তান সুস্থ ভাবে বেড়েউঠে।

সীমান্তনয়নঃ 
গর্ভধারনের ষষ্ঠ বা অস্টম মাসের শেষে বাচ্চার অঙ্গ প্রত্তঙ্গ পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সীমান্তনয়ন করা হয়।

জাতকর্ম:
 জন্মগ্রহনের দিন বাচ্চা কে জাতকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে স্বাগতম জানান হয়।

নামকরনঃ 
জন্মের এগার মাসে এই সংস্কার পালন করা হয় এবং বাচ্চাকে একটি নাম দেয়া হয়।

নিশক্রমনঃ
 জন্মের চতুর্থ মাসে এই সংস্কার পালন করা হয়।শিশু সন্তান কে বাইরের পরিবেশে উন্মুক্ত করা হয়। যাতে সূর্যের আলো তাকে স্বাস্থ্যবান করে তোলে। দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করা হয়। এই সময় থেকে সন্তান প্রকৃতির কোলে প্রাকৃতিক ভাবে বড় হতে থাকে।

আন্নপ্রাসনঃ 
সন্তানের যখন দাঁত উঠতে থাকে সাধারনত ছয় থেকে আট মাস বয়সে এই সংস্কার পালন করা হয়। এখন থেকেই তাকে শক্ত খাবার দেয়া হয়।

চুড়াকরনঃ
 প্রথম থেকে তৃতীয় বছর বয়সের মধ্যে এই সংস্কার পালন করা হয়। প্রথম বারের মত মাথার সব চুল ফেলে দেয়া হয়। সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ্য্ মানসিক বিকাশের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

কর্ণভেদঃ 
তিন বছর বয়সে কান ফোরানো হয় এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করা হয়।

উপনয়নঃ
শিশুর বয়স যখন পাঁচ  থেকে আট বছর তখন যে কোন সময় উপনয়ন করা হয়।এই সংস্কারের মাধ্যমে একটি শিশু গুরু,শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসে।শিশুকে ১ টি পবিত্র সূতা দেয়া হয়, যাতে ৩ টি আঁশ রয়েছে।আঁশগুলো ছাত্রজ়ীবনের তিনটি নিয়মানুবর্তিতা নির্দেশ করে যথাঃজ্ঞান, কর্ম, ভক্তি।শাস্ত্রে জীবন যাপনের যে পদ্ধতি উল্লেখ আছে তার প্রতি ওই শিশুটির অঙ্গিকার নির্দেশ করে। ব্রহ্মচর্য/ কৌমার্য (অবিবাহিত অবস্থা) ছাত্র জীবনের সবচেয়ে অপরিহার্য বিষয়।নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা এবং সব রকম খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অভ্যাস ছাত্র জীবনেই করতে হয়। নিয়মিত পড়ালেখা এই সংস্কারের পরেই শুরু হয়।

বেদারম্ভঃ 
উপনয়ন এর পরেই এই সংস্কার পালন করা হয়। এই সময় বেদ এবং বিভিন্ন শাস্ত্র অনুসারে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন শুরু হয়।জ্ঞানের সকল শাখায় তাকে বিচরণ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে সে জাগতিক বিষয়ের সাথে আধাত্মিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।

সমাবর্তনঃ 
২১ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে যখন শিক্ষা গ্রহন শেষ হয় তখন এটি পালন করা হয়। গুরু ছাত্র কে যোগ্যতা অনুযায়ী ডিগ্রি প্রদান করেন। এরপর একজন ছাত্র আত্ম নির্ভর এবং স্বাধীন জীবন যাপন করে।

বিবাহঃ 
ছাত্রজীবনের ব্রহ্মচর্য শেষে একজন বিয়ে করে পরবর্তী জ়ীবনে পদার্পন করে, গৃহস্থ জ়ীবনে। একজন পুরুষ আর একজন মহিলা যারা এতদিন স্বাধীন জীবন যাপন করেছে এখন একসাথে জীবনভর চলার সপথ গ্রহন করে। বিয়ের পর সন্তান হয় এবং পরিবারের ধারা চলতে থাকে।

বানপ্রস্থঃ 
৫০ বছর বয়সে গৃহস্থ আশ্রম শেষে বানপ্রস্থ আশ্রম শুরু হয়। নিজের সুবিধার জন্য তিনি যে সব কাজ করতেন তার সব কিছু পরিত্যাগ করেন। পরিবারের সব দায়িত্ব সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে পূজর্চনা, ধ্যান এবং মানব সেবায় নিয়োজিত হন।

সন্ন্যাস
যদিও পচাঁত্তুর বছর বয়সে এই সংস্কার গ্রহন করার কথা উল্লেখ আছে তারপরেও আত্মনিয়ন্ত্রন এবং আধ্যাত্মিকতা দ্বারা যিনি জাগতিক সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন তিনিই সন্ন্যাস গ্রহন করবেন।সন্নাস গ্রহণের সময় তিনি সামাজিক ও পারিবারিকবন্ধন, ধনসম্পদ এবং সকল ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করবেন । এই কঠোর জীবনের প্রতীক হলো গাঢ় হলুদ রঙের ঢিলেঢালা পোশাক ।সন্নাসের কোন নির্দিষ্ট পরিবার সমাজ অথবা গৃহ নেই।

অন্তেষ্টীঃ 
মৃত্যুর পর শবদাহ করা হয় ।কিন্তু আত্মা অমর। যখন দেহ অগ্নিতে দাহ করা হয় তখন শরীর যে পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি, যেমন- মাটি, জল, আগুন, বাতাস এবং আকাশ প্রকৃতিতে মিলিয়ে যায়।প্রার্থনা করা হয় মৃতের আত্মার শান্তিতে। শবদাহ হচ্ছে মৃত দেহ সৎকারের সব চেয়ে উত্তম উপায়।

এই ওয়েবসাইটটিতে আরো জানতে পারবেন 
সংস্কার কি,
দশবিধ সংস্কার,সংস্কার কি ?
অন্তিম সংস্কার,
সংস্কার কি কি,
সংস্কার,ষোড়শ সংস্কার কি,
দশবিধ সংস্কার কি,
গর্ভ সংস্কার কি ও কেন?
সংস্কার বিদ্যা কি ?
বৈদিক ষোড়শ সংস্কার কি কি,
শুদ্রদের সংস্কার,
হিন্দুদের সংস্কার,
সনাতনীদের সংস্কার,
বৈষ্ণবদের সংস্কার,
ব্রাহ্মণদের সংস্কার,
সংস্কার বিদ্যা বাংলা,
ক্ষত্রিয়দের সংস্কার,
নতুন আইন সংস্কার হলে কি হুরুব,
হিন্দুদের সংস্কার গুলো কি কি ?,
সনাতনীদের সংস্কার গুলো কি কি ?,
বৈষ্ণবদের সংস্কার গুলো কি কি ?
Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন March 29, 2022 at 3:15 PM

    সুন্দর উপস্থাপন ��

  • নামহীন
    নামহীন March 30, 2022 at 9:58 AM

    ভালো লাগছে

Add Comment
comment url