কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় বেদ ও পুরাণ চর্চা

আধুনিক বাংলা কবিতায় কাজী নজরুল ইসলামের পুরাণ প্রয়ােগের পরিচয় আমরা হতিপূর্বে পেয়েছি। তিনি পুরাণকে করে তুলেছেন তাঁর ভাব প্রকাশের মাধ্যম।জাতীয়কবি কাজী নজরুল ইসলাম। (১৮৯৮-১৯৭৬) তিনি একদিকে যেমন  দেশি পুরাণকে গ্রহণ করেছেন তেমনই বিদেশি পুরাণের আশ্রয় নিয়েছেন।কাজী নজরুল কি সত্যি বেদ চর্চা করেছেন? নজরুলের কবিতায় দেশি ও বিদেশি পুরাণের অসংখা সমাবেশ লক্ষ করা যায়। তাঁর কবিতায় বিদেশি  পুরাণ প্রয়ােগের কয়েকটি দুষ্টান্ত তুলে ধরা হল।  বিদেশি শব্দে আমরা নির্দিষ্টভাবে পাশ্চাত্য বােঝাতে চাইছি না।
 
 পশ্চিমের দেশ অর্থাৎ ইউরােপ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভৃত হয়েছিল এক খ্রিস্টীয় প্রাচীন ও সমৃদ্ধ পুরা-কথার ভাণ্ডার। ইহুদি এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশগুলি বিশেষভাবে ইরান অর্থাৎ পারসা, আরব দেশ এবং আফ্রিকার অন্তর্বতী মিশর ছিল সেই পুরা-কথাগুলির উৎসভূমি। আমরা বাংলা কবিতায় বিদেশি পুরাণের পরিসরে এই দুটি উৎসেরই পরিগ্রহণ দেখতে পাব। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ধর্মে মুসলমান। দরিদ্র হলেও তিনি শিক্ষিত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার লেখায় আমরা বিভিন্ন জাতি-গােষ্ঠীর পুরাণ ও প্রাচীন ইতিহাসের অনুষঙ্গ দেখতে পাই।
নজরুলের বেদজ্ঞান 


 তার মাতৃভাষা ছিল বাংলা কিন্তু পূর্বপুরুষদের ভাষা ছিল উর্দু। ইসলামি ধর্মগ্রন্থ তিনি পাঠ করেছিলেন অল্প বয়সেই। ফলত হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মীয় গােষ্ঠীর প্রাচীন সংস্কৃতি সম্পর্কেই তার আগ্রহ জেগেছিল এবং মেধা ও মননশীলতার চর্চায় উন্মুখ নজরুল এই দুই সংস্কৃতির পুরাণ ঐতিহ্যকেই গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। সেইসঙ্গে ইদি এবং খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ ও তার পঠিত ছিল কারণ ইসলাম ধর্মের পূর্ব পরম্পরা ছিল খ্রিস্টধর্ম এবং তারও আগে জুড়াইজম বা ইহুদিদের ধর্মের মধ্যে।  কাজী নজরুল ইসলাম তার 'অগ্নিবীণা (১৯২২) কবিতা-সংকলনের বিদ্রোহী  কবিতায় সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, শােষণ, নিপীড়ন, অসাম্যের প্রতি বিদ্রোহ ঘােষণা করেছেন। 
এই বিদ্রোহ ঘোষণার মাধ্যম রূপে গ্রহণ করেছেন পুরাণকে। তিনি তাঁর অপরিসীম শক্তিমত্তা ও বলশীলতার পরিচয় দিতে গিয়ে কখনও রুদ্র, নটরাজ, ধুজটি, জমদগ্নি, অগ্নি, ইন্দালী-সূত, কৃষ্ণ, ব্যোমকেশ, গঙ্গোত্রী, ঈশান, ধর্মরাজ, পিনাক, দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র, বাসুকি, শ্যাম, বিষ্ণু, পরশুরাম, বলরাম, ভৃগু প্রভৃতি হিন্দু পৌরাণিক চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে সমীকৃত  করেছেন, আবার কখনও খালেদা, ইসরাফিল, তাজি বোররাক, জিব্রাইল, অর্ফিয়াস প্রভৃতি বিদেশি পৌরাণিক অনুষঙ্গ ব্যবহার করে তুলে ধরেছেন নিজের বক্তব্য। ইস্রাফিল হলেন ইসলামি পুরাণের একজন দেবদূত। ইসলামি ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী ইনি যখন শিঙাতে ফুৎকার  দেবেন তখন প্রলয় শুরু হবে। নজরুল সমস্ত প্রকার অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে যে প্রলয়  কামনা করেছেন সেখানে তিনি নিজেকে ইস্রাফিল মনে করেছেন_  "আমি ইস্রাফিলের শিক্ষার মহা-হুৎকার, "  কোরান'-এ বলা হয়েছে বােররাক, এক দৈবশক্তি সম্পন্ন দুতগতির অশ্ব। তাঁর মুখমণ্ডল এক নারীর এবং তার মাথায় আছে মুকুট বা তাজ। প্রলয়ের সময় এতে চড়েই  হযরত মুহাম্মদ ঈশ্বরের কাছে যাবেন। কবি তাজি বোররাক-কে নিজের বাহন করার ভাবনার মধ্য দিয়ে তার অপরিসীম ক্ষিপ্র গতিবেগকেই তুলে ধরতে য়েছেন  তাজি বোররাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার  হিন্মৎ-তরেষা হেঁকে চলে।  আবার কখনও নজরুল নিজেকে দেবদূত জিব্রাইল-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইসলামী পুরাণ অনুসারে জিব্রাইল একজন দেবদূত। 
জিব্রাইল-এর আগুনের পাখা আছে। যে পাখা পটি জাপট ধরবার মধ্য দিয়ে নজরুল তার শক্তি মন্তার পরিচয় দিতে চেয়েছেন ধরি স্বর্গীয় দুত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি। বিদ্রোহী কবিতায় নজরুল যেমন তার দৈহিক বলশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তেমনই সুরের মাধু্যেও যে জগৎকে মুগ্ধ করা যায় সে কথাও বলেছেন। এই জন্য তিনি  নিজেকে ভেবেছেন_  "আমি অফিয়াসের বাঁশরী মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম-ঘুম ঘুম চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নবম।"  অফিয়াস হলেন গ্রিক পুরাণের চরিত্র। ইনি অসাধারণ দক্ষতায় বাশি ও বীণা বাজাতে পারতেন। যে বাঁশির সুরে সমগ্র নিসা জগৎ মুহ হয়ে যেত। মানুষ, পশু, পাখি, গাছ-পালা এমনকি মৃত্যুর দেবতা পুটো পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে তাঁর মৃত স্ত্রী ইউরিডাইস-কে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। যদিও অফিয়াস আবার তাঁকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কেবলমাত্র দৈহিক শক্তি দিয়ে নয় প্রেমের শক্তি দিয়েও যে বিদ্রোহ হতে পারে সে কথা বােঝনাের জন্যই নজরুল  নিজেকে অর্ফিয়াস-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।  'সাম্যবাদী (১৯২৫) কবিতা-সংকলনের নারী কবিতায় কবি নারীর ওপর পুরুষের  অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে একটি তাৎপর্যময় গ্রিক বা রােমান পুরাণ-কাহিনির আশ্রয়  নিয়ে বলেছেন –  “ধরার দুলালী মেয়ে,  ফির না ত আর গিরিদরীবনে শাী-সনে গান গেয়ে।  
কখন আসিল 'পুটো যমরাজ নিশীথ পাখায় উড়ে ধরিয়া তােমায় পুরিল তাহার অধর বিবর-পুরে।  প্রসার্পিনা-র কাহিনিটি আগে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার। রােমান পুরাণের  প্রসা্পিনাই হলেন গ্রিক পুরাণের পার্সিফোনি। রোমান দেবি সিরিস হলেন প্রসাপিনা-র মাতা। ইনিই গ্রিক পুরাণের ডিমিটার। ডিমিটার-এর কাজ ছিল পৃথিবীতে গাছপালা, ফুল-ফল-শস্য উৎপাদন করা। তাঁর কন্যা নিজের আনন্দ খেলে বেড়াত বনে প্রান্তরে, গান গাইত পাখিদের  সঙ্গে। পুপচয়নরত পার্সিফোনি-কে একদিন মৃত্যুপুরীর দেবতা পুটো চুরি করে নিয়ে যান পাতালে। এরপর কন্যার বিরহে মাতা ডিমিটার তাঁর সমস্ত কর্তবায ভুলে যান। পৃথিবী হয়ে পড়ে শুদ্ক রুক্ষ। এখন আর গাছে ফুল ধরে না, ফল ধরে না, শসা ফলে না। দেবতারা বিপদ বুঝে সহায়তা করার কথা ভাবেন। তাঁরা প্রটো-র কাছে প্রার্থনা জানান। দেবতাদের মধ্যস্থতায় ডিমিটার ফিরে পান কন্যা পার্সিফোনি-কে। কিন্তু প্রটো-র দেওয়া ফল অর্ধেকটা খেয়ে ফেলার কারণে পুটো-র শর্তানুযায়ী পার্সিফোনি-কে বছরের হয় মাস কাটাতে হয়  পাতালে। বাকি ছয় মাস সে পৃথিবীতে থাকায় সেই সময় ফুলে, ফলে, শসাে পূর্ণ হয়ে ওঠে পৃথিবী।  নজরুল পুরাণের এই কাহিনিটিকে নারীর ওপর পুরুষের নির্যাতনের চিত্ররপে তুলে ধরতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন। নজরুল গবেষক এই কাহিনিটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এইভাবে এই আখ্যানটিতে পুরুষের হাতে নারীর নির্যাতনের অনেকগুলি কি উদযাপিত। প্রথমত, এক কিশোরী-র হরফের লালসায় তকে অপহরণ করেছে ক্ষমতা-দপী পুরুষ। দ্বিতীয়ত দেবতারা প্রসাবের মুক্তি প্রার্থনা করেছেন নারীর মর্যাদা রক্ষায় নয়, পৃথিবীর পরিমণ্ডলে সামঞ্জস্য ব্যাহত হচ্ছে বলে চতুর্থত, নারী অপহারক পুরুষের কোনাে শাস্ত্ি বিধান না করে পুরুষটিকে কেউ কোনাে দোষারোপ করেনি কারণ সে ক্ষমতাবান। তৃতীয়ত  তার প্রভুত্ব মেনে নিয়ে তারই করুণা প্রাথনা করা হয়েছে। প্রসাপিনার অপহরণ ও আংশিক  মু্তি  পাশ্চাত্য পুরাণ কাহিনির মধ্য দিয়ে কবি নারী নির্যাতনের যে ভাবনাটি প্রকাশ করতে  চেয়েছেন তাতে তাঁর পুরাণকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মানসিকতা টিহ প্রস্ফুটিত হয়েছে।  কোনটির ক্ষেত্রেই তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার দিকটি কেউ ভবেনি। 
এইভাবে একটি  সাম্যবাদী কবিতা-সংকলনের 'বারাঙ্গনা কবিতায় কবি খ্রিস্টীয় পুরাণের যিশু খ্রিস্ট-এর জন্মের কাহিনিকে বাবহার করেছেন লােকসমাজের একটি দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরার  জনা -  বিস্ময়কর জন্ম যাহার মহাপ্রেমিক যে যিশু!  যিশু ছিলেন কুমারী মাতার সন্তান। এজন্য যিশু-র জননী মেরি-কে কুমারী মাতা বলা হয়। আবার মেরি-র স্বামী বর্তমান ছিলেন। মেরি-র গর্ভে যিনি জনগ্রহণ করেছিলেন তিনি ঈশ্বরের পুত্র। তাই লৌকিক নিয়মে তিনি জন্মগ্রহণ করেননি। এই যিশু ছিলেন মানব প্রেমিক। তাকে ক্রশ বিদ্ধ করে হত্যা করার সময়ও তিনি হত্যাকারীদের প্রেমের বাণী শুনিয়েছিলেন। ঈশ্বরের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন এই মহান প্রেমের জন্যই তিনি আজ ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। কিন্তু লােক সমাজে কুমারী মাতা কথাটি কলসূচক। এই কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন এরকমভাবে অপবাদ দেওয়া উচিত নয়। কারণ মহাপ্রেমিক যিশুর মাতাই হলেন মেরি। জন্মের দ্বারা নয়, ক্মের দ্বারা মানুষের পরিচয় হয়।  নজরুল জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক দারিদ্র-পীড়িত পরিবারে। অল্পবয়সে পিতার মৃত্যু  হওয়ায় আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে তার দিন কেটেছে। সামান্য বেতনে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে তিনি গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেছেন। তাই 'দারিদ্রা (সিন্ধু-হিস্দোল ১৯২৭) কবিতার পেছনে রয়েছে কবির নিজস্ব জীবন-অভিজ্ঞতা। দারিদ্রাকে তিনি ছােটো করে দেখেননি, দেখেছেন মহতের বেশে; তাকে তুলনা করেছেন 'খ্রীষ্টের সম্মান-এর সঙ্গে_  "হে দারিদ্র, তুমি মােরে করেছ মহান। তুমি মােরে দানিয়াছ গীত সম্মান  কণ্টক-মুকুট শোভা"  যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাসঘাতকেরা নিঃস্ব-রিক্ত করে যখন হত্যা করার জন্য ক্রুশ বিদ্ধ করেছিল, তার মাথায় পরিহাস করে পরিয়ে দিয়েছিল কাটালতা তখনও যিশু হাসিমুখে  ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাদের জন্য ক্ষমা। যারা যিশুর সম্মান কেড়ে তার ওপর চালিয়েছিল অকথ্য অত্যাচার তাদের জন্য যিশু খ্রিস্ট শুনিয়েছেন প্রেমের বাণী। কিন্তু তাতে  যিশুর সম্মান নষ্ট হয়নি। বরং তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।  এই কবিতায় কবি খ্রিস্টীয় পুরাণ কাহিনিকে নবরূপ দিতে চেয়েছেন দারিদ্রোর  মধ্যেও যে মহত্ব লুকিয়ে থাকে তা বােঝাবার জন্য। 
কবিতা-বিশ্লেষকের ভাষায় বলা যায়  "যীশ কষ্ট যেমন বিশ্বসভ্যতা দারিদ্র্য পীড়িত হয়েও সহনশীল ঔদার্য মানুষের যাবতীয় অন্যায়-অবিচারকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখেছিলেন, তেমনি কবি এ জীবনে দারিদ্রকে বরণ করে নিয়েছেন কারণ, দারিদ্র্য নিষ্ঠুর অভিঘাতে জীবনকে নতুন-নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দেখার ও চেনার সুযোগ ঘটেছে তার। দারিদ্র্য তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি।  বরং তার জীবনে এনে দিয়েছে সুষ্টির সম্ভাবনা, তাকে দিয়েছে মহান হবার শক্তি। ক্িঞ্জীর (১৯২৮) কবিতা-সংকলনের ঈদ মােবারক কবিতায় প্রাচীন ইসলামি ইতিহাসের এজিদ ও হাসান-হােসেন-এর কাহিনিকে কবি ব্যবহার করেছেন। তবে একটু  ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গিতে। হজরত মহম্মদের দৌহিত্র হাসান ও হােসেন এবং তাদের শত্র এজিদ এর কঠিন সংগ্রামের কাহিনি লিপিবদ্ধ আছে কারবালা যুদ্ধের আখ্যানে। কারবালার যুদ্ধকে ঠিক পুরাণ বলা যায় না। এই কাহিনি ইতিহাসেরই ঘটনা থেকে গড়ে উঠেছে। কিন্তু  ইতিহাসের ঘটনা-বাস্তবতা ছাপিয়ে কারবালার যুদ্ধ কাহিনিতে মিশে গেছে পুরাণ-প্রতিম কল্পনার অনেকগুলি সুর। কাজেই আদিতে ইতিহাস হলেও কারবালার যুদ্ধ-কথা অনেকটা পুরাণের মতােই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর জীবন ও সাহিত্যে।  এজিদ এবং হাসান-হােসেন হলেন চিরশ। হযরত মুহাম্মদের কন্যা ফতেমা বিবির পুত্র হাসান এবং হােসেন। হাসান এজিদ-এর ষড়যন্ত্রে মারা যান নিজের স্ত্রীর প্রদত্ত  বিষ পান করে। এর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য হােসেন এজিদ-এর পেছনে ধাবিত হন এবং কারবালার প্রান্তরে তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সিমার-এর হতে হােসেন-এর মৃত্যু হয়।  এই চিরশর সম্পর্কের দিকটিকে কবি ঈদ মােবারক কবিতায় ব্যবহার করেছেন  শতার দিকটিকে ফুটিয়ে তােলার জন্য নয়; বরং সমস্ত শতা ভুলে গিয়ে মহা মিলনের  আহারের জন্য  "আজিকে এজিদে হাসানে হেসেনে গলাগলি,"  পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ উপলক্ষে কবি এই চিরশত্নর সম্পর্ককে মুছে ফেলে মহামিলনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সমালােচকের কথায় চিত্রকল্প প্রাচীন আঞ্যানের যাথার্থা থেকে একটু সরে এসেছে চিরকালের মানবতার প্রতিজ্ঞ। তাতে প্রাচীন-কথাটির কোনাে বায় অটেনি অথ্চ কাহিনী বাঁধাধরা সত্যাটি ছাপিয়ে উঠেছে ধর্মীয় মিলনােৎসবের অবস্থিত মানবধর্মের প্রতি-সুগন্ধ।” প্রাচীন কথা ভাবনাকে কবি নতুন করে ভেবেছেন, তাকে নতুন রূপে দেখেছেন এবং নতুন রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন।  'চিরঞ্জীব জগলুল (জিঞ্জীর) কবিতাটি মিশরের জনপ্রিয় নেতা জগলুল পাশা-র মৃত্যুতে নজরুলের শ্রদ্ধা সমর্পণ। আলােচ্য কবিতায় কবি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিশরের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন পুরাণের পটভূমিকায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে জগলুল পাশা-র যে সংগ্রাম তার কথা বলতে গিয়ে নজরুল বলেছেন -  "মুসারে আমরা দেখিনি তােমায় দেখেছি মিসর-মুনি, ফেরাউন মারা দেখিনি, দেখেছি নিপীড়ন ফেরাউন।"  মুসা হলেন ইহুদিদের ধর্ম প্রচারক। মিশরের সমাট ছিলেন ফেরাউন। তিনি তাঁর রাজ্য বসবাসকারী ইজরায়েল-এর শিশুদের হত্যা করতেন। কারণ তিনি দৈবাদেশ শুনেছিলেন যে,  এক ইসরায়েলি শিশুর হাতে তার মৃত্যু হবে। 
 মোজেস-এর মাতা সন্তানের প্রাণ রক্ষা করার জন্য শিশুটিকে নীলনদের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ফেরাউন-এর রানি স্নান করতে গিয়ে শিশুটিকে পান এবং তাকে পুতস্নেহে লালন পালন করেন। পরে এই মােজেস ইজরায়েল-এর নেতা হয়ে ওঠেন এবং পরাধীন স্ব-জাতিকে উদ্ধার করেন। এই মােজেস যখন অনুগামীদের সঙ্গে সমুদ্র পার হচ্ছিলেন তখন সমুদ্র দু'ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এবং মিশরীয়রা যখন তাদের পশ্চাৎধাবন করে  তখন সমুদ্র তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।  এই কবিতায় কবি জগলুল-কে মুসারপে আঁকতে চেয়েছেন। মৃত্যুতে কবির মনে হয়েছে  জগলুল-এর  * 'ফেরাউন ডুবে না মরিতে হায় বিদায় লইল মু.  প্রাচীর রাত্রি কাটিবে না গান উদিবে না রাঙা উষা  আধুনিক ফেরাউনরূপী ইংরেজ বিতাড়নের পুর্বে মুসারাপী জগলুল-এর মৃত্যু কবিকে শােকগান্ত করলেও কবির মনে হয়েছে  "তোমার বিয়ে করিব না শােক হয়ত দেখিব কাল তােমার পিছনে মরিছে ডুবিয়া ফেরাউন দ্জাল। একথা আমাদের সকলেরই জানা আছে যে নজরুলের এই প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের মিশর ছাড়তে হয়েছিল।  এইভাবে কবি পুরাণের মধ্য দিয়ে আধুনিক ইতিহাসকে তুলে ধরে পুরাণের নবরূপায়ণ ঘটিয়েছেন।     🚩বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাংলা কবিতায় পুরাণ-অনুষঙ্গের নব রূপায়ণ  গবেষক  অর্পিতা দাস অধ্যাপিকা, বাংলা বিভাগ পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয়                  ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয 
Next Post Previous Post
1 Comments
  • সনাতনী আলাপন
    সনাতনী আলাপন February 18, 2020 at 3:03 PM

    jo sonatoner joy

Add Comment
comment url